সুষমা স্বরাজ।
স্বাস্থ্যজনিত কারণে আগামী লোকসভা নির্বাচনে তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন না বলে জানিয়ে দিলেন সুষমা স্বরাজ। প্রথমে ডায়াবিটিস ও পরে কিডনিজনিত সমস্যায় দীর্ঘ দিন ধরেই ভুগছেন বিদেশমন্ত্রী। ২০১৬ সালে কিডনি প্রতিস্থাপনের কারণে বেশ কয়েক মাসের জন্য মন্ত্রকের কাজ থেকে অব্যাহতি নিয়েছিলেন তিনি। এ বার লোকসভা নির্বাচন থেকে সরে আসার সিদ্ধান্ত নিলেন মধ্যপ্রদেশের বিদিশার ওই সাংসদ।
মধ্যপ্রদেশে বিধানসভা নির্বাচনের প্রচারে রয়েছেন ৬৬ বছরের সুষমা। সেখানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বলেন, ‘‘শারীরিক কারণেই আগামী লোকসভা ভোটে লড়তে চাই না।’’ তবে পরে অবশ্য তিনি যোগ করেন, ‘‘এ বিষয়ে আমি মনস্থির করলেও, চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে দল।’’ স্বামী স্বরাজ কৌশল তার পরেই টুইট করেন, ‘‘ম্যাডাম থ্যাঙ্ক ইউ ভেরি মাচ। মিলখাও থেমেছিলেন।’’ যার উত্তরে সুষমা লেখেন, ‘‘আমি ভোটে লড়ছি না, তবে রাজনীতি থেকে সরছি না।’’
কিন্তু প্রশ্ন হল, অরুণ জেটলির মতো নেতাও তো কিডনিজনিত সমস্যায় ভুগছেন। কিন্তু তিনি সক্রিয় রাজনীতি থেকে অবসর নেওয়ার কথা ঘোষণা করেননি। প্রশ্ন হল, তা হলে কি বিদেশমন্ত্রী হিসাবে স্বাধীন ভাবে কাজ করতে না পারার ক্ষোভ থেকেই এই সিদ্ধান্ত? যদিও বিজেপির একটি সূত্রের দাবি, লোকসভায় না দাঁড়ালে রাজ্যসভা থেকে জিতিয়ে আনা হবে সুবক্তা সুষমাকে।
এটা ঠিকই বেশ কয়েক জন মন্ত্রীকে মোদী সরালেও, সুষমা স্বরাজ গত সাড়ে চার বছর রয়ে গিয়েছেন বিদেশ মন্ত্রকেই। অথচ ওই সময়ে বিদেশনীতি কার্যত একা হাতে নির্ধারণ করেছেন খোদ প্রধানমন্ত্রী। মোদীর বিদেশসফর তো বিরোধীদের সমালোচনার অঙ্গ হয়ে উঠেছিল। বছরে একটি করে সাংবাদিক সম্মেলন করতেন সুষমা। সেখানেও প্রতিটি ক্ষেত্রেই প্রধানমন্ত্রীর নাম নিতে হত তাঁকে। কূটনৈতিক সূত্রের বক্তব্য, অতি সম্প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে ফেলেছিলেন সুষমা। যখন রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ অধিবেশনের ফাঁকে পাকিস্তানের বিদেশমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের কথা ঘোষণা করে ভারতীয় বিদেশ মন্ত্রক এবং ২৪ ঘণ্টা পরে সেই সিদ্ধান্ত বাতিল করা হয়। সূত্রের মতে, প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়ের অনুমোদন ছাড়াই নাকি প্রাথমিক ভাবে ওই বৈঠকের কথা ঘোষণা করা হয়েছিল।
তবে রাজনীতির অনেকেই মনে করছেন, জল মাপতেই হয়তো ভোটে না দাঁড়ানোর কথা বলেছেন সুষমা। লোকসভা নির্বাচন এসে গিয়েছে। পাঁচ বছর আগের মোদী-হাওয়া আর নেই। বিরোধীরা এক জোট হয়ে বিজেপিকে হারানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন। পরিস্থিতির দিকে নজর রাখছেন রাজনাথ সিংহ-সুষমারা। এই পরিস্থিতিতে সরে দাঁড়ানোর কথা বলে দলের কাছে নিজের গ্রহণযোগ্যতা কি বাড়িয়ে রাখার চেষ্টা করলেন সুষমা— প্রশ্ন উঠছে দলেও।