মরিগাঁওয়ে জনসভা সুষমা স্বরাজের। বৃহস্পতিবার। ছবি: পিটিআই।
অসম দখলে মরিয়া বিজেপি। এক এক দিনে কয়েকজন করে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মিলে চষে ফেলছেন ব্রহ্মপুত্র থেকে বরাক। ডাক দিচ্ছেন পরিবর্তনের। ১৫ বছরের কংগ্রেস শাসনের পরিবর্তন। প্রতিশ্রুতিও দিচ্ছেন অনেক, পাশাপাশি বলেও দিচ্ছেন, এর বাইরে আরও অনেক কিছু আছে। সব তো এক সঙ্গে বলা যায় না। বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ তো সিনেমা নয়, তার ‘ট্রেলর’ দেখালেন ভোটদাতাদের। তাঁর কথায়, ‘‘সব প্রতিশ্রুতি একটি সভায় দেওয়া সম্ভব নয়। কিন্তু সিনেমার ট্রেলর ভাল হলে ছবিও ভালই হবে। আপনারা শুধু বুথে গিয়ে ভোট দিন। তারপর আপনাদের কাজ শেষ, আমাদের কাজ শুরু।’’
সুষমার দাবি, বরাক ও ব্রহ্মপুত্রে একই হাওয়া বইছে। হাওয়া এক কিনা তা অবশ্য সুষমাই জানেন। কারণ ব্রহ্মপুত্র উপত্যকার মরিগাঁওয়ে তিনি বললেন, অসম আন্দোলনের সঙ্গে বিজেপি ছিল। বিজেপি থাক বা না থাক, তাঁদের রাজ্য দলের এখনকার নেতারা—সর্বানন্দ থেকে হিমন্ত, সকলেই অসম আন্দোলনে ছিলেন। সুষমা অসমের অনুপ্রবেশ সমস্যার জন্য কংগ্রেসকে দায়ী করে বলেন, ‘‘কংগ্রেস এখনও পর্যন্ত বিদেশি হঠানোর ব্যবস্থা নেয়নি। কারণ কংগ্রেস ও এআইইউডিএফ অনুপ্রবেশকারীদের ভোটব্যাঙ্কের উপরে নির্ভরশীল। এই ঘটনা রাজ্য নয় গোটা দেশের কাছে সঙ্কট।’’ আজই তাঁর বরাক উপত্যকাতেও একটি প্রচার-সভা ছিল। প্রশ্ন সেখানেও তিনি কি এই কথা বলতেন? ডি-ভোটার, নাগরিকত্ব ইত্যাদি সমস্যায় জেরবার বরাক কি তা মেনে নিত? খারাপ আবহাওয়ার কারণে বরাকে সুষমার সভা বাতিল হয়ে যায়।
অন্য দিকে, আরেক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী স্মৃতি ইরানি গত কালের মতো আজও কংগ্রেসের ১৫ বছরের শাসনকে রামের ১৪ বছরের বনবাসের সঙ্গে তুলনা করলেন। আজ কার্বি আংলংয়ের বোকাজান, হাওড়াঘাট, লামডিংয়ে সভা করেন স্মৃতি। সেখানে তিনি বলেন, ‘‘অসমবাসী রামের চেয়েও এক বছর বেশি বনবাস কাটিয়েছেন। এ বার মুক্তি পাওয়ার চাবিকাঠি আপনাদের হাতেই।’’
স্মৃতির দাবি, কার্বি আংলংয়ে ১৫ বছর আগে মেডিক্যাল কলেজ গড়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও এখনও তা গড়া হয়নি। জেলার কেউ অসুস্থ হলে অ্যাম্বুল্যান্স পান না, সরকারি হাসপাতালে গেলে ডাক্তার বা চিকিৎসা পরিষেবা পান না। রাজধনী গুয়াহাটির রাজপথে মেয়েরা সুরক্ষিত নন। বিজেপি ক্ষমতায় এলে প্রতিটি মহকুমায় সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল গড়ে দেবে। ডিফুতে গড়া হবে মেডিক্যাল কলেজ। প্রতি জেলায় তৈরি করা হবে মহিলা থানা। মেয়েদের সুরক্ষায় সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হবে। মহিলাদের বিনামূল্যে গ্যাস সংযোগ দেওয়া হবে। কৃষকরা সকলে পাবেন জমির পাট্টা।
বরাকের পাথারকান্দিতেও আজ আবহাওয়া খারাপ ছিল। তড়িঘড়ি, নির্ধারিত সময়ের ৪০ মিনিট আগেই সভা সেরে ফেলেন কেন্দ্রীয় পরিবহণ মন্ত্রী নিতিন গডকড়ী। সেখানে তিনি অভিযোগ করেন, ‘‘বরাকের রাস্তাঘাট সারানোর ভার ছিল কংগ্রেসের। এ নিয়ে কেন্দ্র টাকা পাঠালেও কংগ্রেস কাজ করেনি।’’ তিনি আশ্বাস দেন, রাস্তা সারাইয়ের কাজ শীঘ্রই শুরু হবে। পাথারকান্দিতে বিজেপি জিতলে মিজোরামের সঙ্গে সংযোগকারী লোয়াইরপুয়া থেকে কানমুনের রাস্তাকে জাতীয় সড়ক করে দেওয়া হবে বলেও তিনি জানান। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বলেন, ‘‘অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার জন্যেই বরাকে শিল্প আসেনি, উন্নয়ন হয়নি। বাংলাদেশের সঙ্গে শীঘ্রই সড়ক ও জলপথে বাণিজ্য যোগাযোগ শুরু হবে। তখন উন্নতি হবে বরাকেরও।’’