মুসলিম মঞ্চেও অস্ত্র পুলওয়ামা 

পুলওয়ামা কাণ্ড নিয়ে ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে কূটনৈতিক দ্বৈরথ যখন তুঙ্গে ঠিক সেই সময়ে একই আন্তর্জাতিক মঞ্চে হাজির থাকতে চলেছেন দুই দেশের বিদেশমন্ত্রী।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা 

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০৩:৪২
Share:

পুলওয়ামা কাণ্ড নিয়ে ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে কূটনৈতিক দ্বৈরথ যখন তুঙ্গে ঠিক সেই সময়ে একই আন্তর্জাতিক মঞ্চে হাজির থাকতে চলেছেন দুই দেশের বিদেশমন্ত্রী। ২ মার্চ আবু ধাবিতে শুরু হচ্ছে মুসলিম বিশ্বের সবচেয়ে বড় আন্তর্জাতিক সংগঠন ওআইসি (অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কনফারেন্স)-র অধিবেশন। ৫৭টি মুসলিমপ্রধান দেশের এই সংগঠনে প্রথমবারের জন্য ‘সম্মানিত অতিথি’ (গেস্ট অব অনার)-এর মর্যাদা পেল ভারত।

Advertisement

ওই বৈঠকে যোগ দিতে আবু ধাবি যাচ্ছেন বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ। গোটা বিষয়টিকে এক দিকে কূটনৈতিক জয় হিসেবে দেখছে সাউথ ব্লক। পাশাপাশি ঘরোয়া রাজনীতির পক্ষেও একে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে। এক দিকে দেশে লোকসভা নির্বাচন কড়া নাড়ছে। অন্য দিকে পুলওয়ামা কাণ্ডের পরে মোদীর পাকিস্তান নীতি গোটা বিশ্বের আতসকাচের তলায় চলে এসেছে। সাড়ে আটান্ন কোটি মুসলিমের প্রতিনিধিত্বকারী এই সংগঠনের মঞ্চে দাঁড়িয়ে এক ঢিলে অনেক পাখিকে নিশানা করতে চাইছে সাউথ ব্লক। বিদেশ মন্ত্রক সূত্রের দাবি, সাম্প্রতিক পুলওয়ামা হামলার উল্লেখ করে পাকিস্তানের মাটিতে গড়ে ওঠা ভারত-বিরোধী জঙ্গি সংগঠনগুলির প্রসঙ্গ জোরালো ভাবে তুলতে চলেছেন সুষমা। সেইসঙ্গে

মুসলিম বিশ্বের কাছে এই বার্তাও দেওয়া হবে যে ভারতের লড়াই আন্তঃসীমান্ত সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে। কোনওভাবেই কাশ্মীরের মানুষের বিরুদ্ধে নয়।

Advertisement

বিদেশ মন্ত্রক বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছে, ‘সাড়ে আঠেরো কোটি মুসলমানের দেশ ভারতকে এই আমন্ত্রণ দেওয়ার অর্থ হল ইসলামিক বিশ্বে ভারতের অবদানকে স্বীকৃতি দেওয়া। আমাদের দেশের বহুত্ববাদী ভাবধারাকেও স্বীকৃতি দেওয়া।’ রাজনৈতিক সূত্রের মতে, এই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের মাধ্যমে সরকার দেশের সাম্প্রদায়িকতা-বিরোধী হিন্দু মনের কাছেও একটি বার্তা দিতে চাইবে। পাশাপাশি উত্তরপ্রদেশ–সহ বেশ কিছু রাজ্যে সামান্য হলেও সংখ্যালঘু ভোটবাক্সে যদি লাভ পাওয়া যায় তবে সেটাই বাড়তি লাভ বিজেপি-র। যদিও কংগ্রেস নেতৃত্বের দাবি, মরণকালে হরির নাম করে কোনও লাভ নেই। এই সরকার গত পাঁচ বছরে যে ভাবে খোলাখুলি সাম্প্রদায়িকতার বীজ বুনেছে তা একটি প্রতীকী বক্তৃতায় মোছার নয়।

সূত্রের খবর, বাংলাদেশ, ইন্দোনেশিয়া এবং অবশ্যই সংযুক্ত আরব আমিরশাহি-র সহায়তায় এই বিশেষ আমন্ত্রণটি পাওয়া গিয়েছে। এর জন্য দীর্ঘদিন ধরেই চেষ্টা চালানো হচ্ছিল। বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম মুসলিম জনসংখ্যার দেশ ভারত (ইন্দোনেশিয়া এবং পাকিস্তানের পরেই)। অনেকদিন ধরেই এই সংগঠনে ‘পর্যবেক্ষক রাষ্ট্র’-এর মর্যাদা চাইছে নয়াদিল্লি। কিন্তু মূলত পাকিস্তানের আপত্তিতে সেটা পাওয়া এখনও সম্ভব হয়নি। গতবার ভারতের অনুপস্থিতিতে পাকিস্তান কাশ্মীরে মোদী সরকারের মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ সংক্রান্ত রাষ্ট্রপুঞ্জের রিপোর্টটি নিয়ে সরব হয়েছিল। অনুমান করা হচ্ছে এ বার আরও আগ্রাসী ভাবে নয়াদিল্লির দিকে তর্জনী নির্দেশ করবে ইসলামাবাদ। ভারত-পাক বিতর্ক নিয়ে সেখানে তাপমাত্রা চড়বে কারণ ওআইসি সাধারণ ভাবে কাশ্মীরে পাকিস্তানের বক্তব্যকেই সমর্থন করে এসেছে। দু’মাস আগেই ওআইসি-র সচিবালয়ের পক্ষ থেকে কড়া বিবৃতি দিয়ে বলা হয়েছিল, ‘ভারত-অধিকৃত কাশ্মীরে মুসলিমদের হত্যার

ঘটনাকে তীব্র ধিক্কার জানাচ্ছে আমাদের সংস্থা।’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন