দিল্লির সেনা হাসপাতালের সামনে প্রেম স্বরূপ।
ল্যান্সনায়েক হনুমন্থাপ্পার কিডনি কাজ করছে না শুনলাম?
আমার কিডনিটা নিয়ে নিন। ওঁকে দিয়ে দিন।
এই রকম প্রস্তাব নিয়েই বুধবার দিল্লির সেনা হাসপাতালে হাজির হলেন ষাটোর্ধ্ব প্রেম স্বরূপ। সিআইএসএফ-এর অবসরপ্রাপ্ত হেড কনস্টেবল তিনি। সিয়াচেনে তুষারধসের তলা থেকে উদ্ধার হওয়া জওয়ানের কিডনি কাজ করছে না জানতে পেরে আর বাড়িতে বসে থাকতে পারেননি আধাসামরিক বাহিনীর ওই প্রাক্তন কর্মী। নিজের কিডনি দান করে হনুমন্থাপ্পা কোপ্পড়ের জীবন বাঁচাতে ছুটে গিয়েছেন হাসপাতালে।
প্রেম স্বরূপ সেনা হাসপাতালে গিয়ে বুধবার বলেছেন, ‘‘কিডনি হোক বা শরীরের যে কোনও অঙ্গ— যা প্রয়োজন হবে, আমার শরীর থেকে নিয়ে নিন। মন থেকে বলছি।’’ আধাসামরিক বাহিনীর প্রাক্তন কর্মীর এই প্রস্তাব বুঝিয়ে দিয়েছে, সিয়াচেনের তুষারধস গোটা দেশকে হঠাৎ অবিচ্ছিন্ন পরিবার বানিয়ে দিয়েছে।
তুষারধসের খবর প্রতিরক্ষা মন্ত্রক প্রকাশ করতেই উৎকণ্ঠার প্রহর গোনা শুরু করে গোটা দেশ। যখন উদ্ধারকাজ চলছিল, দেশবাসী অপেক্ষায় ছিল, সুখবর আসবে। কিন্তু, দুর্ঘটনার তিন-চার দিন পর সেনাবাহিনীও আশা ছেড়ে দেয়। জানিয়ে দেওয়া হয়, মৃত্যুই হয়েছে ১০ সৈনিকের। এর পরই মিরাক্ল। তুষারধসের ৬ দিন পর বরফের চাঙড়ের ২৫ ফুট গভীরে পৌঁছে দেখা যায় ল্যান্সনায়েক হনুমন্থাপ্পা কোপ্পড় বেঁচে আছেন। দ্রুত আকাশপথে দিল্লির সেনা হাসপাতালে পাঠিয়ে দেওয়া হয় তাঁকে। তুষারধসের নীচে পড়ে থাকা সঙ্গীকে জীবিত উদ্ধার করতে পেরে গোটা সেনাবাহিনী উজ্জীবিত হয়ে ওঠে। একইভাবে প্রবল আবেগে সেনার জয়ধ্বনি শুরু করে গোটা দেশ। প্রার্থনা শুরু হয় হনুমন্থাপ্পার দ্রুত আরোগ্য কামনায়। টন টন বরফের তলা থেকে সেনাকর্মীর আশ্চর্য উদ্ধার নিয়ে সাধারণ, অসামরিক ভারতবাসীর মধ্যে যে উৎসাহ তৈরি হয়েছে, তাতেই স্পষ্ট যে সশস্ত্র বাহিনীর কর্মী বা প্রাক্তন কর্মীদের পরিবার কতটা উৎকণ্ঠা নিয়ে অপেক্ষা করছে উদ্ধার হওয়া জওয়ানের সুস্থতার খবর পাওয়ার জন্য।
আরও পড়ুন:
শত্রুর গোলা নয়, ভয়ঙ্কর প্রকৃতিই মৃত্যু নিয়ে অপেক্ষায় থাকে সিয়াচেনে
সিআইএসএফ-এর অবসরপ্রাপ্ত হেড কনস্টেবল প্রেম স্বরূপ বুধবার যা করেছেন, তাতে ভারতবাসীর সেই উৎকণ্ঠার ছবি আরও স্পষ্ট হল। হনুমন্থাপ্পা কোপ্পড় এখন যেন ভারতের প্রতিটি পরিবারের সদস্য। দেশের প্রত্যেক নাগরিক উদ্বেগ নিয়ে অপেক্ষা করছে দিল্লির সেনা হাসপাতালের মেডিক্যাল বুলেটিন জানার জন্য। এমন একটি মেডিক্যাল বুলেটিনেই জানা গিয়েছিল, উদ্ধার হওয়া সেনাকর্মীর কিডনি এবং লিভার কাজ করছে না। প্রেম স্বরূপ সেই খবর শুনেই ঠিক করে নেন, নিজের একটি কিডনি দিয়ে দেবেন। কোপ্পড়কে নিজের অনাত্মীয় ভাবতেই পারছেন না প্রেম। বৃদ্ধ প্রেম স্বরূপ মনে করছেন, তাঁর বয়স অনেক হয়েছে। দু’টো কিডনি এখন না হলেও চলবে। একটা নিয়ে নেওয়া হোক। প্রতিস্থাপন করা হোক হনুমন্থাপ্পার শরীরে।
তবে শুধু কিডনি নয়, জীবন দিতেও প্রস্তুত প্রেম স্বরূপ। বুধবার সেনা হাসপাতালে গিয়ে তিনি বলেছেন, ‘‘কিডনি ছাড়া আমার শরীরের অন্য কোনও অঙ্গ যদি প্রয়োজন হয়, তাও নিয়ে নিন।’’ মৃত্যুর সঙ্গে যুঝতে থাকা ল্যান্সনায়েককে জীবনে ফেরাতে অবসরপ্রাপ্ত হেড কনস্টেবল নিজেকে নিঃশেষে দান করে দিতে তৈরি এখন।