মেমনের শেষ যাত্রায় ‘সম্ভাব্য সন্ত্রাসবাদী’, বিতর্কে তথাগত

বিতর্ক চলছিল মৃত্যুদণ্ডের পক্ষে-বিপক্ষে। মৃত্যুদণ্ডের মতো চরম সাজা দিয়ে আদৌ অপরাধ বন্ধ করা যায় কি না, ইয়াকুব মেমনের ফাঁসির পরিপ্রেক্ষিতে তা নিয়েই মতামত দিচ্ছিলেন রাজনৈতিক জগৎ থেকে শুরু করে বিভিন্ন ক্ষেত্রের বিশিষ্টেরা। এর মধ্যেই হঠাৎ মন্তব্য করে নতুন বিতর্ক ডেকে আনলেন ত্রিপুরার রাজ্যপাল তথাগত রায়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ অগস্ট ২০১৫ ০০:০৯
Share:

বিতর্ক চলছিল মৃত্যুদণ্ডের পক্ষে-বিপক্ষে। মৃত্যুদণ্ডের মতো চরম সাজা দিয়ে আদৌ অপরাধ বন্ধ করা যায় কি না, ইয়াকুব মেমনের ফাঁসির পরিপ্রেক্ষিতে তা নিয়েই মতামত দিচ্ছিলেন রাজনৈতিক জগৎ থেকে শুরু করে বিভিন্ন ক্ষেত্রের বিশিষ্টেরা। এর মধ্যেই হঠাৎ মন্তব্য করে নতুন বিতর্ক ডেকে আনলেন ত্রিপুরার রাজ্যপাল তথাগত রায়। ইয়াকুবের শেষকৃত্যে যাঁরা জড়ো হয়েছিলেন, তাঁদের মধ্যে সম্ভাব্য সন্ত্রাসবাদী থাকতে পারেন বলে গোয়েন্দাদের নজরদারি চালানোর পরামর্শ দিয়েছেন তথাগতবাবু!

Advertisement

ত্রিপুরার রাজ্যপাল হিসাবে মাসদুয়েক আগেই দায়িত্ব পেয়েছেন প্রাক্তন এই ইঞ্জিনিয়ার। তার আগে রাজনৈতিক জীবনে কট্টরপন্থী বিজেপি নেতা হিসাবেই তাঁর পরিচয় ছিল। ইয়াকুবের ফাঁসির পরের সকালে তথাগতবাবুর টুইট তাঁর পূর্বাশ্রমকেই আবার চর্চায় ফিরিয়ে এনেছে! রাজ্যপালের মতো সাংবিধানিক পদে বসে তিনি আসলে রাজনৈতিক দলের নেতার মতো কথা বলছেন বলেই বিভিন্ন দলের অভিযোগ। এমন মন্তব্য করে তথাগতবাবু রাজ্যপালের পদের অমর্যাদা করেছেন বলে মনে করছেন লোকসভার প্রাক্তন স্পিকার সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়ও।

তথাগতবাবু শুক্রবার টুইট করেন, ‘ইয়াকুব মেমনের আত্মীয় ও ঘনিষ্ঠ বন্ধুরা ছাড়া আর যাঁরা তার মৃতদেহের সামনে জড়ো হয়েছিল, গোয়েন্দাদের উচিত তাদের উপরে নজর রাখা। এদের মধ্যে অনেকেই সম্ভাব্য সন্ত্রাসবাদী (পোটেন্সিয়াল টেররিস্ট্‌স)’! নাগপুর সেন্ট্রাল জেলে বৃহস্পতিবার সকালে ফাঁসির পরে মুম্বইয়ের মাহিমে ইয়াকুবের বাড়িতে আনা হয়েছিল তার মৃতদেহ। বিকালেই মাহিমের একটি পরিচিত সমাধিক্ষেত্রে তার শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়। মাহিমে ইয়াকুবের দেহ আসার পরে শেষ যাত্রায় ভিড় হয়েছিল ভালই। সেই ঘটনার দিকেই ইঙ্গিত ছিল তথাগতবাবুর। তাঁর ওই মন্তব্যের পরেই টুইটারে সমালোচনার ঝড় ওঠে। রাজ্যপাল পদে বসেও তথাগতবাবু ‘বিভাজনের রাজনীতি’তে মদত দিচ্ছেন বলে মন্তব্য করেন অনেকে।

Advertisement

ত্রিপুরার রাজ্যপাল হলেও তথাগতবাবুর প্রাথমিক পরিচয় যে হেতু বাংলার রাজনীতিক হিসাবেই, তাই এ রাজ্য থেকেই প্রতিক্রিয়া হয়েছে প্রবল। লোকসভার প্রাক্তন স্পিকার সোমনাথবাবু বলেন, সাংবিধানিক পদের মর্যাদার সঙ্গে এমন মন্তব্য সঙ্গতিপূর্ণ নয়। তাঁর মতে, ‘‘এই ভাবে সোশ্যাল সাইটে কোনও রাজ্যপাল এমন মন্তব্য করতে পারেন? কিছু পরামর্শ দেওয়ার থাকলে তিনি সংশ্লিষ্ট রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে বলতে পারেন। কেন্দ্রীয় সরকারকেও অবশ্যই জানাতে পারেন।’’ ত্রিপুরার বিরোধী দলনেতা, কংগ্রেসের সুদীপ রায় বর্মনের মন্তব্য, ‘‘মনে হচ্ছে, উনি এখনও ওঁর পুরনো দলীয় মানসিকতা ভুলতে পারেননি!’’ এ রাজ্যের কংগ্রেস নেতা মানস ভুঁইয়ারও বক্তব্য, ‘‘রাজ্যপাল পদে থেকে কেউ এমন কথা কী ভাবে বলেন, তা ভেবেই আমরা বিস্মিত!’’

ইয়াকুব-প্রশ্নে জোরদার বিতর্ক চললেও এখনও পর্যন্ত তা নিয়ে মুখ খোলেনি এ রাজ্যের শাসক দল। কিন্তু তথাগতবাবুর মন্তব্যের প্রেক্ষিতে তারাও সরব হয়েছে। রাজ্যের বর্ষীয়ান মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় এ দিন বলেন, ‘‘ওঁকে অবিলম্বে রাজ্যপাল পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া উচিত। এক জন ভারতীয় নাগরিক হিসাবে আমি এ কথা বলছি।’’ তৃণমূলের জাতীয় মুখপাত্র ডেরেক ও’ব্রায়েনও বিবৃতি দিয়ে বলেন, ‘এক জন রাজ্যপালের উচিত রাজ্যপালের মতোই আচরণ করা, কথা বলা’।

তথাগতবাবুর প্রাক্তন সহকর্মীরা অবশ্য প্রত্যাশিত ভাবেই তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছেন। বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ যেমন বলেছেন, ‘‘তথাগত রায় তো ঠিকই বলেছেন! ওঁর বক্তব্য আমি সমর্থন করি।’’ বিজেপি বিধায়ক শমীক ভট্টাচার্যের বক্তব্য, ‘‘তথাগতবাবু বরাবরই আবেগপ্রবণ মানুষ। নিরাপত্তার প্রশ্নে আবেগপ্রবণ হয়ে মন্তব্য করেছেন।’’ কিন্তু একই সঙ্গে তাঁর সংযোজন, ‘‘বিভাজনের রাজনীতি করার চেষ্টা কেন? এ দেশের সংখ্যালঘুরা কাকে অনুসরণ করবেন? এ পি জে আব্দুল কালামকে না টাইগার বা ইয়াকুব মেমনকে?’’

আর স্বয়ং তথাগতবাবু? তিনি বক্তব্যে অন়ড়! বিতর্কের মুখেও তিনি টুইট করে গিয়েছেন, ব্যাখ্যা দিয়েছেন সংবাদমাধ্যমকেও। টুইটে তাঁর মন্তব্য, ‘ফাঁসির সাজাপ্রাপ্ত এক সন্ত্রাসবাদীর জন্য এমন টুইট-বিস্ফোরণের চোটে আমি গুরুপূর্ণিমার শুভেচ্ছা জানাতেই ভুলে গিয়েছিলাম’! সংবাদমাধ্যমের কাছে তাঁর বক্তব্য, ‘‘এক ফাঁসির আসামির জন্য তার আত্মীয় ও বন্ধু ছাড়া অন্যদের দরদ কীসের? জনস্বার্থ এবং নিরাপত্তার বিষয় জনসমক্ষে আনাই আমার সাংবিধানিক কর্তব্য। এখানে রাজ্যপালের পদের সঙ্গে আপস হল কোথায়?’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন