কৃষকদের আয়ে কর না বসালে দেশে করদাতার সংখ্যা বাড়ানো যে সম্ভব নয়, তা সরকারের সকলেরই জানা ছিল। নীতি আয়োগের সদস্য বিবেক দেবরায় আজ তার পক্ষে জোরালো সওয়াল করলেন। বিবেকবাবুর যুক্তি, ‘‘আয়করদাতার ভিত চওড়া করতে হলে যে সব ছাড় রয়েছে, সেগুলি তুলে দিতে হবে। একমাত্র উপায় হল গ্রামীণ ক্ষেত্রে কর বসানো। এমনকী, নির্দিষ্ট ঊর্ধ্বসীমার উপরে কৃষি থেকে আয়ের উপরেও কর বসানো উচিত।’’
যদিও কৃষিতে আয়কর বসানো রাজনৈতিক ভাবে স্পর্শকাতর বিষয় বুঝেই আজ নীতি আয়োগের উপাধ্যক্ষ অরবিন্দ পনগিঢ়য়া এ বিষয়ে মন্তব্য করতে চাননি। কত বছরের মধ্যে কৃষি থেকে আয়ে কর বসানো হতে পারে, তা নিয়েও মুখ খুলতে চাননি তিনি।
অর্থনীতিবিদরা অবশ্য বলছেন, বিবেকবাবু ভুল কিছু বলেননি। বড় কৃষকদের আয়ে কর বসানো না হলে আয়কর দাতার সংখ্যা বাড়বে না। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি নিজেই বাজেটে বলেছিলেন, দেড়শো কোটি লোকের মধ্যে আয়কর রিটার্ন ফাইল করেন মাত্র ৩.৭ লক্ষ ব্যক্তি। তার মধ্যে ২.৯৪ লক্ষ লোককেই কোনও কর দিতে হয় না বা মাত্র ৫ শতাংশ হারে কর দেন।
নীতি আয়োগ সদস্য বিবেকবাবুর ওই মন্তব্যের পরে প্রশ্ন উঠেছে, বেড়ালের গলায় ঘণ্টাটি কে বাঁধবে? নরেন্দ্র মোদী নিজেকে কৃষক দরদি হিসেবে তুলে ধরতে মরিয়া। বিজেপিতে কৃষক নেতার সংখ্যাও অনেক। ফলে মোদী সরকার যে কৃষকদের আয়ে কর বসাবে, এমন সম্ভাবনা খুবই কম।
সে ক্ষেত্রে উপায়?
বিবেকবাবুর মতে, শহর ও গ্রামের মধ্যে আয়কর ছাড়ের ঊর্ধ্বসীমা আলাদা হওয়া উচিত নয়। এখন যেমন আয়কর ছাড়ের ঊর্ধ্বসীমা আড়াই লক্ষ। গ্রামেও তা-ই হওয়া উচিত। তাঁর যুক্তি, ‘‘খুব বেশি হলে এক বছরের কৃষি থেকে আয় না ধরে তিন বা পাঁচ বছরের আয়ের গড় করে বাৎসরিক আয় ঠিক করা যেতে পারে। কারণ প্রতি বছর কৃষি থেকে একই আয় হয় না। তারতম্য ঘটে।’’ সরকারি সূত্রের অবশ্য খবর, কৃষি থেকে আয়ের উপরে কর না বসিয়ে কৃষিতে আয়কর ছাড়ের যে অপব্যবহার হচ্ছে, তা রোখার চেষ্টা হবে। যেমন, শহরে থেকে অন্য কাজকর্ম করেও অনেকে নিজেকে কৃষক বলে পরিচয় দেন। গ্রামের জমির মালিক হিসেবে প্রমাণ করার চেষ্টা করেন।