সৌদি আরবের যুবরাজ মহম্মদ বিন সলমনের সঙ্গে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ় শরিফ। —ফাইল চিত্র।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ় শরিফের সঙ্গে ফোনে দীর্ঘ ক্ষণ কথা হল সৌদি আরবের যুবরাজ মহম্মদ বিন সলমনের। সংবাদ সংস্থা পিটিআই পাক সংবাদমাধ্যম রেডিয়ো পাকিস্তানের প্রতিবেদন উল্লেখ করে জানিয়েছে, দু’জনের কথোপকথনে আলোচনার অন্যতম বিষয় ছিল ভারত। জম্মু ও কাশ্মীর, সিন্ধু জলবণ্টন চুক্তির মতো যাবতীয় অমীমাংসিত বিষয়ে ভারতের সঙ্গে কথা বলতে পাকিস্তান প্রস্তুত, সৌদির যুবরাজকে জানিয়েছেন পাক প্রধানমন্ত্রী। পহেলগাঁও হামলা, অপারেশন সিঁদুর এবং তৎপরবর্তী পরিস্থিতিতে ভারত এবং পাকিস্তানের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের অবনতি হয়েছে। তার মাঝে পাক প্রধানমন্ত্রীর এই বার্তা তাৎপর্যপূর্ণ বলে অনেকে মনে করছেন।
মঙ্গলবার সৌদির যুবরাজকে ফোন করেছিলেন শাহবাজ়। তিনি বলেছেন, ‘‘জম্মু ও কাশ্মীর, জল, বাণিজ্য, সন্ত্রাসবাদ-সহ সমস্ত অমীমাংসিত বিষয়ে ভারতের সঙ্গে গঠনমূলক আলোচনায় বসতে পাকিস্তান প্রস্তুত।’’ পহেলগাঁও হামলার পর ভারতের সঙ্গে পাকিস্তান যে সেনা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েছিল, সেই সময়ে দুই দেশকেই উত্তেজনা প্রশমনের বার্তা দিয়েছিল সৌদি আরব। পাকিস্তানের দাবি, এই সংঘাতে সৌদি তাদের সমর্থন করেছে। তার জন্য সৌদির যুবরাজকে ফোনে ধন্যবাদও জানিয়েছেন শাহবাজ়। কিছু দিন আগে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইরান, আজ়ারবাইজান সফরে গিয়েছিলেন। সেখান থেকেও ভারতের সঙ্গে শান্তি-আলোচনায় বসার ইচ্ছাপ্রকাশ করেছিলেন।
সৌদির যুবরাজের সঙ্গে ফোনে পশ্চিম এশিয়ার পরিস্থিতি নিয়েও কথা বলেন শাহবাজ়। ইরান এবং ইজ়রায়েলের সাম্প্রতিক সংঘাত নিয়ে তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তাদের সংঘর্ষবিরতিকে সমর্থন করেছেন। কূটনৈতিক আলোচনার মাধ্যমে যে কোনও সংঘাতের শান্তিপূর্ণ সমাধান খোঁজার কথা বলেছেন। এ বিষয়ে পাকিস্তানের ‘গঠনমূলক ভূমিকা’র কথা মেনে নিয়েছে সৌদি আরব, দাবি পাক সংবাদমাধ্যমে।
উল্লেখ্য, গত ২২ এপ্রিল জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলায় ২৬ জনের মৃত্যু হয়। সেই ঘটনায় পাকিস্তানকে দায়ী করে একাধিক পদক্ষেপ করেছিল ভারত। স্থগিত করে দেওয়া হয়েছিল সিন্ধু জলবণ্টন চুক্তি। পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের বাণিজ্যও বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। এর পর সিঁদুর অভিযানের মাধ্যমে পাকিস্তানে হামলা চালায় ভারত। ধ্বংস করে দেওয়া হয় একাধিক জঙ্গিঘাঁটি। টানা চার দিন পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের সংঘর্ষ চলেছে। পরে গত ১০ মে সংঘর্ষবিরতিতে সম্মত হয় দুই দেশ। অপারেশন সিঁদুরের কথা প্রচার করতে ভারত থেকে সর্বদলীয় প্রতিনিধিদল বিভিন্ন দেশে ঘুরেছে। পাক প্রধানমন্ত্রীও গিয়েছেন চার ‘বন্ধু’ দেশে। কিন্তু ভারত প্রথম থেকেই জানিয়ে দিয়েছে, সংঘর্ষবিরতিতে সম্মত হলেও সিন্ধু চুক্তি স্থগিতের সিদ্ধান্ত থেকে তারা সরে আসবে না। যত দিন পাকিস্তান সীমান্ত সন্ত্রাসে মদত দিয়ে যাবে, তত দিন এই চুক্তি স্থগিত থাকবে। ভারতের এই অবস্থানের বিরোধিতা করে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে ইসলামাবাদ। অমীমাংসিত বিষয়গুলি নিয়ে আরও এক বার আলোচনার টেবিলে বসার ইচ্ছাপ্রকাশ করলেন পাক প্রধানমন্ত্রী।