জঙ্গি তাণ্ডবে নাজেহাল হাইলাকান্দি

জঙ্গিদের উপদ্রবে নাজেহাল হাইলাকান্দির অসম-মিজোরাম সীমানার বাসিন্দারা। তার উপর জুড়েছে মিজোদের আগ্রাসন। দুইয়ের মাঝখানে অসহায় সেখানকার মানুষ। দেড় দশক ধরে অসম সীমানা সংলগ্ন সবুজ পাহাড় ঘেরা গ্রামের বাসিন্দারা জঙ্গিদের উৎপাত, পুলিশি হয়রানির শিকার।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

হাইলাকান্দি শেষ আপডেট: ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০৩:৩৫
Share:

জঙ্গিদের উপদ্রবে নাজেহাল হাইলাকান্দির অসম-মিজোরাম সীমানার বাসিন্দারা। তার উপর জুড়েছে মিজোদের আগ্রাসন। দুইয়ের মাঝখানে অসহায় সেখানকার মানুষ। দেড় দশক ধরে অসম সীমানা সংলগ্ন সবুজ পাহাড় ঘেরা গ্রামের বাসিন্দারা জঙ্গিদের উৎপাত, পুলিশি হয়রানির শিকার। জঙ্গি সংগঠন ইউডিএলএ-র (উদলা) দু’টি গোষ্ঠী এখন সেখানে সক্রিয়। একটি গোষ্ঠীর নেতা রাজেশ চর্কি। অন্যটির ধন্যরাম রিয়াং। অপহরণ ‘ব্যবসা’ চালাচ্ছে দু’পক্ষই। টাকার দরকার পড়লেই কাউকে না কাউকে অপহরণ করছে তারা। মুক্তিপণ দিলে অপহৃতদের রেহাই মিলছে। যদিও উদ্ধার অভিযানের কৃতিত্ব নিচ্ছে পুলিশই।

Advertisement

উদলা জঙ্গিরা কার্যত মিজোরাম-অসম সীমানায় সমান্তরাল প্রশাসন চালাছে। ২০০৮ সালে জঙ্গিনেতা পঞ্চুরাম রিয়াংয়ের নেতৃত্বে শ’তিনেক সদস্য অস্ত্র ছেড়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এসেছিলেন। কিন্তু তাতে জঙ্গি সমস্যার সমাধান হয়নি। এর জন্য প্রশাসনকেই কাঠগড়ায় তুলছে পঞ্চুরাম। তার বক্তব্য— আত্মসমর্পণকারী জঙ্গিদের পুনর্বাসনে যে সব সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার কথা ছিল, তা দেওয়া হয়নি।

তার তারই ফলস্বরূপ দিন দিন সমস্যা বাড়ছে হাইলাকান্দির প্রত্যন্ত এলাকাগুলিতে। পুলিশের দাবি, জঙ্গি-বিরোধী অভিযানে তারা সাফল্য পাচ্ছেন। কিন্তু সাধারণ মানুষের একাংশ তা মানতে নারাজ। এলাকাবাসীর বক্তব্য, জঙ্গি বিরোধী অভিযানে পুলিশ সত্যিই সফল হলে এখনও এ ভাবে একের পর এক অপহরণ-কাণ্ড ঘটত না। তাঁরা আরও বলছেন, গত ২ সেপ্টেম্বর দক্ষিণ হাইলাকান্দির দাড়িয়ারঘাট গ্রাম থেকে অপহৃত আনোয়ার হুসেনকে এখনও খুঁজে পাওয়া যায়নি। জঙ্গি-দমন অভিযানে অনেক ক্ষেত্রেই সাধারণ মানুষ পুলিশি হেনস্থার মুখে পড়ছেন।

Advertisement

দক্ষিণ হাইলাকান্দির উপজাতি নেতারা জেলার পুলিশ-প্রশাসনের কাছে এমনই নালিশ ঠুকেছেন। তাঁরা জানিয়েছেন— জঙ্গি-দমন অভিযানে তাঁদের বিন্দুমাত্র আপত্তি নেই। কিন্তু এ ভাবে যেন সাধারণ মানুষকে দুর্ভোগের মুখে পড়তে না হয়। অসম-মিজোরাম সীমানায় উদলা জঙ্গিদের কার্যকলাপের জন্য শাসক দলের কয়েক জন নেতার দিকে আঙুল তুলেছেন হাইলাকান্দির প্রাক্তন বিধায়ক সেলিমউদ্দিন বড়ভুঁইঞা। করিমগঞ্জের সাংসদ রাধেশ্যাম বিশ্বাস এ বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈয়ের সঙ্গে কথা বলার আশ্বাস দিয়েছেন।

জঙ্গি আতঙ্কে সীমানা-সংলগ্ন গ্রামগুলির বাসিন্দারা কার্যত রাতে জেগে থাকছেন। পঠনপাঠন শিকেয় উঠেছে ওই এলাকার ২১টি স্কুলে।

কয়েক বছর আগে দক্ষিণ হাইলাকান্দি থেকে নিধুরাম দাস নামে এক শিক্ষককে স্কুল থেকেই অস্ত্র দেখিয়ে তুলে নিয়ে যায় জঙ্গিরা। তার জেরে কয়েকটি স্কুলের দরজায় তালা লেগেছে। সীমানা এলাকার অনেকেই ভয়ে গ্রাম ছেড়ে চলে যাচ্ছেন।

জঙ্গি মোকাবিলায় পুলিশকে আরও সক্রিয় হওয়ার দাবি তুলেছে কৃষক মুক্তি সংগ্রাম সমিতি। ঘাড়মুড়া এলাকায় তারা পুলিশ ফাঁড়ি তৈরির আর্জিও জানিয়েছে। হাইলাকান্দির পুলিশ সুপার রাজেন সিংহ, এএসপি রাজমোহন রায় সম্প্রতি উপদ্রুত এলাকা ঘুরে দেখে ঘাড়মুড়ায় পুলিশ ফাঁড়ি তৈরির উদ্যোগ নিয়েছেন।

দক্ষিণ হাইলাকান্দিতে জঙ্গি সমস্যার স্থায়ী সমাধানের জন্য জেলার প্রত্যন্ত এলাকাগুলিতে সেনা শিবির গড়তে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহের কাছে চিঠি পাঠিয়েছেন সাংসদ রাধেশ্যাম বিশ্বাস।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন