গত ১২ এপ্রিল বেলজিয়ামে গ্রেফতার হন ঋণখেলাপি মামলায় অভিযুক্ত হিরে ব্যবসায়ী মেহুল চোকসী। —ফাইল চিত্র।
১৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা ঋণখেলাপিতে অভিযুক্ত এবং পলাতক হিরে ব্যবসায়ী মেহুল চোকসীর ভারতে প্রত্যর্পণে আর কোনও বাধা নেই। জানিয়ে দিল বেলজিয়ামের আদালত। সম্প্রতি বিদেশের আদালত স্পষ্ট করে দিয়েছে, চোকসীকে ভারতে ফেরানোর কোনও আইনি বাধা থাকছে না। পাশাপাশি ওই হিরে ব্যবসায়ীর যাবতীয় যুক্তি এবং আশঙ্কা নস্যাৎ করে দিয়েছে তারা।
পঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্ক (পিএনবি) চোকসীর বিরুদ্ধে ১৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকার ঋণখেলাপির অভিযোগ করার পরপরই সস্ত্রীক দেশ ছাড়েন হিরে ব্যবসায়ী। তার পর গত সাত বছর ধরে তিনি বিদেশে। তাঁকে দেশে ফিরিয়ে এনে আইনের মুখোমুখি করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলি। কিন্তু কখনও বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে কূটনৈতিক নীতি, কখনও আদালতে চোকসীর যুক্তি। এই প্রেক্ষিতে ভারত সরকার সম্প্রতি জানতে পারে পলাতক ব্যবসায়ী রয়েছেন বেলজিয়ামে। যোগাযোগ করা হয়, সে দেশের সরকারের সঙ্গে।
ঘটনাক্রমে গত ১২ এপ্রিল বেলজিয়াম পুলিশ একটি হাসপাতাল থেকে ৬৫ বছর বয়সি ওই ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করে আদালতে হাজির করানো হয়। শুরু হয় প্রত্যর্পণের আইনি প্রক্রিয়া।
গত ১৭ অক্টোবর চোকসীর প্রত্যর্পণ সংক্রান্ত মামলা ওঠে বেলজিয়ামের আদালতে। বিচারক জানিয়ে দেন, তাঁকে ভারতে ফেরানোয় আইনি বাধা নেই। আদালত বেলজিয়াম পুলিশ কর্তৃক চোকসীর গ্রেফতারির আইনি বৈধতা বহাল রেখেছে। এর ফলে পলাতক হিরে ব্যবসায়ীকে ভারতে ফেরানোর কাজে এককদম এগোল নয়াদিল্লি।
জানা গিয়েছে, বেলজিয়াম আদালত রায়ে বলেছে, অভিযুক্ত চোকসী তাদের দেশের নাগরিক নন। তিনি বিদেশি হিসাবে সেখানে গিয়েছিলেন। তাঁর বিরুদ্ধে যে সমস্ত অভিযোগ রয়েছে, তা অত্যন্ত গুরুতর। এমতাবস্থায় অভিযুক্তকে ভারতে ফেরানোই যুক্তিযুক্ত। আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী, ভারতে চোকসীর বিরুদ্ধে জালিয়াতির নানা অভিযোগ রয়েছে। আর্থিক দুর্নীতি থেকে নথি জালিয়াতি-সহ যে সকল অভিযোগ উঠেছে, বেলজিয়ামের আইন অনুসারেও তা বড় অপরাধ হিসাবে বিবেচিত হয়। সেখানকার আদালতের পর্যবেক্ষণ, চোকসীর বিরুদ্ধে ভারতে দায়ের হয়েছে ভারতীয় দণ্ডবিধির ১২০বি, ২০১, ৪০৯, ৪২০, ৪৭৭এ ছাড়াও দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের নানা ধারা। তার সবক’টিতেই এক বছরেরও বেশি কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে। চোকসী তাঁর আত্মপক্ষ সমর্থনে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ঘটনা এবং নথি উপস্থাপন করেন। কিন্তু আদালত বলেছে, সেগুলো এই মামলার সরাসরি প্রাসঙ্গিক নয়।
২০১৮ সালে সস্ত্রীক দেশ ছাড়েন চোকসী। এক বার ডমিনিকান রিপাবলিকে ধরা পড়ার পর ভারতীয় তদন্তকারী সংস্থার বিরুদ্ধেই অপহরণ করে ভারতে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টার অভিযোগ করেন তিনি। এর মধ্যে ওই গুজরাতি ব্যবসায়ী অ্যান্টিগার নাগরিকত্ব নেন।