The Lancet

‘দেশবাসীকে ভুয়ো আশা নয়’, করোনা নিয়ে ভারতকে সতর্কবার্তা ল্যানসেটের

করোনার বিপদ এ দেশে কতটা ভয়ঙ্কর হতে পারে, তার একটা ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে পত্রিকাটির সম্পাদকীয়তে।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২০ ১৬:৩৬
Share:

সংক্রমণের নিরিখে বিশ্বে দ্বিতীয় স্থানে ভারত।— ফাইল চিত্র

উদ্বেগের দিকে কম গুরুত্ব দিয়ে করোনা-যুদ্ধে সাফল্যের প্রচারেই বেশি জোর দেওয়া হচ্ছে ভারতে। এমনই মনে করছে ‘দ্য ল্যানসেট’। বিশ্বের প্রথম সারির এই মেডিক্যাল জার্নালটির সতর্কবার্তা— ‘অতিরিক্ত আশাবাদী পরিস্থিতি তুলে ধরতে গিয়ে বড় বিপদে পড়ে যেতে পারে ভারত’।

Advertisement

করোনার বিপদ এ দেশে কতটা ভয়ঙ্কর হতে পারে, তার একটা ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে পত্রিকাটির সম্পাদকীয়তে। বলা হয়েছে, ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)-র মতে, ২২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ভারতে করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি সারা বিশ্বের মধ্যে দ্রুততম।’ প্রসঙ্গত, ভারতে মোট করোনা সংক্রমিতের সংখ্যা এখন ৬০ লক্ষ ছাপিয়ে গিয়েছে। সংক্রমণের নিরিখে সারা বিশ্বে ভারত এখন দ্বিতীয় স্থানে। আমেরিকার পরেই। এ দেশে করোনা দাপটের কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলা হয়েছে, ‘জুন মাস থেকে নিষেধাজ্ঞা তোলা শুরু হয় এবং তার পর থেকেই সংক্রমণের সংখ্যাবৃদ্ধিতে নাটকীয় পরিবর্তন আসতে শুরু করে।’ পত্রিকাটির হুঁশিয়ারি, ভারত করোনা সংক্রমণের ‘বিপজ্জনক পর্যায়’-এর মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে।

‘দ্য ল্যানসেট’-এর মূল সতর্কবার্তা—

Advertisement

• মাস্ক পরা এবং শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখার বিধি কড়া ভাবে মানতে হবে

• সংক্রমণ রুখতে বিধি নিয়ে জনসাধারণের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে হবে

• সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে

ভারতে করোনা পরীক্ষা বেড়েছে।

আরও পড়ুন: দৈনিক করোনা সংক্রমণ কমে ৭০ হাজার, কমল দৈনিক মৃত্যুও

লকডাউন ঘোষণার সময় বৃহৎ সংবাদ সংস্থাগুলিকে ‘নেতিবাচক খবর’ এবং ‘গুজব’ এড়ানোর পরামর্শ দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। কিন্তু তার পরেও আইসিএমআর-এর মতো সংস্থা ‘অতি আশাবাদী’ হয়ে ১৫ অগস্ট স্বাধীনতা দিবসের দিন করোনার টিকা আনার ঘোষণা করেছিল। ওই কাণ্ডকে ‘বিজ্ঞানবহির্ভূত’ এবং ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপূর্ণ’ বলে ব্যাখ্যা করেছে প্রায় ২০০ বছরের পুরনো ওই পত্রিকাটি। সেই সঙ্গে হাউড্রক্সিক্লোরোকুইনের মতো ওষুধ ব্যবহারে অনুমোদন দেওয়া নিয়েও আইসিএমআর-কে কাঠগড়ায় তুলেছে তারা।

আরও পড়ুন: বিরাট ঝুঁকি নিয়ে ভাইরাসের সঙ্গে লড়ছেন স্বাস্থ্য-সেনানীরা

ভারতে করোনায় মৃত্যুর হার ১.৮ শতাংশ। যা অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক কম। এই পরিসংখ্যান নিজের বক্তৃতায় বারবার তুলে ধরেছেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। সেই তথ্য নিয়েও প্রশ্ন তুলে সমালোচনার সুরে বলা হয়েছে, ‘আশাবাদ ভাল। সাফল্য নিয়ে পিঠ চাপড়ানোও গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু ভারতের বর্তমান অবস্থাকে খুব বেশি ইতিবাচক তথ্য দিয়ে তুলে ধরার অর্থ বাস্তবতাকে আড়াল করা। তা জনস্বাস্থ্যের উপর জোরালো প্রভাব ফেলবে। করোনা যোদ্ধাদের মধ্যে অনিশ্চয়তা তৈরি হবে। সাধারণ মানুষও স্বাস্থ্য সংক্রান্ত বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে ভাববেন না।’ বিপদ এড়াতে দেশের নেতাদের বৈজ্ঞানিক তথ্যপ্রমাণ গ্রহণ করার পরামর্শ দিচ্ছে পত্রিকাটি। বিশেষজ্ঞদের মতামতকেও গুরুত্ব দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। জনগণের মধ্যে ‘মিথ্যা আশাবাদ’ তৈরি না করার সতর্কতাও দেওয়া হয়েছে।

তবে দেশজোড়া লকডাউনের প্রশংসা করেছে পত্রিকাটি। সেই সঙ্গে ভেন্টিলেটরের সংখ্যা বৃদ্ধি, কোভিড পরীক্ষা বাড়ানো এবং দেশীয় ভ্যাকসিন গবেষণার কথাও উল্লেখ করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক ভ্যাকসিন গবেষণার সঙ্গে যুক্ত থাকা সিরাম ইনস্টিটিউটের কথাও বলা হয়েছে বিশেষ ভাবে। কিন্তু একইসঙ্গে বলা হয়েছে লকডাউনের সময় থেকে অর্থনৈতিক মন্দা, পরিযায়ী শ্রমিকদের সমস্যার কথাও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন