সিপিএমে ছোটরা কলেবরে বাড়ছে, বড়রা হচ্ছে ছোট

প্রাথমিকে স্কুলে ভর্তি হচ্ছে পাঁচ কোটি পড়়ুয়া। গর্বে বুক ফুলে যাচ্ছে শিক্ষামন্ত্রীর। তার পরে মাধ্যমিকে গিয়ে দেখা যাচ্ছে, পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ১২ লক্ষ।

Advertisement

সন্দীপন চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ২১ এপ্রিল ২০১৮ ০৩:৪০
Share:

২২তম পার্টি কংগ্রেসে সীতারাম ইয়েচুরি ও প্রকাশ কারাট। ছবি: পিটিআই।

এক্কেবারে যেন স্কুলছুটের গল্প!

Advertisement

প্রাথমিকে স্কুলে ভর্তি হচ্ছে পাঁচ কোটি পড়়ুয়া। গর্বে বুক ফুলে যাচ্ছে শিক্ষামন্ত্রীর। তার পরে মাধ্যমিকে গিয়ে দেখা যাচ্ছে, পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ১২ লক্ষ। শিক্ষকের অভাব, পড়়াশোনার পরিবেশে সমস্যা, সংসারের টান— নানা কারণে মাঝপথে ‘ছুট’ হয়ে যাচ্ছে অসংখ্য মুখ। একই সমস্যা ভোগাচ্ছে সিপিএমকেও। তাদের মাথাব্যথার কারণ ‘দলছুট’!

দলীয় হিসেব থেকে দেখা যাচ্ছে, এই দুর্দিনেও বাম রাজনীতি করতে পা বাড়়াচ্ছেন ছাত্র-ছাত্রীরা। এমনকি, তৃণমূলের জমানায় যে বাংলায় সিপিএমের অস্তিত্বই বিপন্ন, সেখানেও ছাত্রফ্রন্টে বৃদ্ধির ইঙ্গিত আছে গত তিন বছরে। অথচ তার পরে ধাপ পেরিয়ে যুব, কৃষক বা মহিলা ফ্রন্টে কাজ করা এবং শেষমেশ দলের সদস্যপদ নেওয়ার নিরিখে সংখ্যা আবার কমতির দিকে! অর্থাৎ ছেলেমেয়েরা প্রশিক্ষণ শিবিরে নাম লেখালেও তাদের গ়ড়েপিটে নেওয়ার ব্যর্থতায় বড়় মাঠে আর খেলোয়াড়় উঠে আসছে না সে ভাবে।

Advertisement

স্কুলছুটের দায় শিক্ষামন্ত্রী নিন বা না নিন, দলছুটের ব্যর্থতা মেনে নিচ্ছেন দলীয় মাস্টারমশাইয়েরা। সত্য কবুল করেই পার্টি কংগ্রেসের রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক রিপোর্টে বলা হয়েছে: নতুনদের আকৃষ্ট করার মতো আন্দোলন, যোগ্য নেতা-কর্মী এবং তরুণদের গুরুত্ব দেওয়ার মানসিকতা— এ সবের অভাবে নতুন রক্তকে আর সংগঠনের সদস্যপদ পর্যন্ত টেনে নেওয়া যাচ্ছে না। রাজ্য ধরে ধরে দৃষ্টান্ত দেখিয়ে রিপোর্টে ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে, কোথাও আবার আন্দোলনের জেরে সংগঠনে গিয়েও কিছু দিন পরে হতাশ হয়ে দলছুট হয়ে যাচ্ছেন অনেকে।

এক বার চোখ বোলানো যাক রিপোর্টের পরিসংখ্যানে। দেখা যাচ্ছে, গত পার্টি কংগ্রেসের আগে ২০১৪ সালে সারা দেশে সিপিএমের সদস্য ছিল ১০ লক্ষ ৫৮ হাজার ৭৫০। সেই সংখ্যা ২০১৭ সালে কমে হয়েছে ১০ লক্ষ ১২ হাজার ৩১৫। ওই একই সময়ে ছাত্র ফ্রন্ট ৪০ লক্ষ ৪৬ হাজার ৬৬০ থেকে বেড়ে হয়েছে ৪২ লক্ষ ৮ হাজার ১৮৪। বাংলার ক্ষেত্রে দলের সদস্য ২০১৪-র ২ লক্ষ ৭৪ হাজার ৪৭০ থেকে ২০১৭-য় কমে দাঁড়িয়েছে ১ লক্ষ ৯৫ হাজার ৯৫৭। মাঝের কয়েক বছরে তৃণমূল ও বিজেপিতে চলে যাওয়া এবং বসে যাওয়া মিলিয়ে সংখ্যাটা প্রায় ৭৯ হাজার! তা ছাড়়া, সদস্যপদে কড়়া ছাঁকনি বসিয়ে বঙ্গ সিপিএম সচেতন ভাবেও কলেবর ছোট করেছে। কিন্তু ছাত্র ফ্রন্ট ৭ লক্ষ ৩১ হাজার ৬৯৯ থেকে বেড়ে হয়েছে ৭ লক্ষ ৪৩ হাজার ২০০।

ব্যর্থতা স্বীকার করেও সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির এক সদস্য বলছেন, ‘‘বাংলার পরিস্থিতি আলাদা। ছাত্র রাজনীতিতে এলেও কলেজে কলেজে হামলার মুখে পড়়া ছেলেমেয়েদের টেনে ধরছেন অভিভাবকেরা।’’ সাহস দেখানোর লোক যখন কমছে, তখন উপরের দিকে ব্যতিক্রম একমাত্র শ্রমিক ফ্রন্ট। বাংলার ভাঙা হাটেও সিপিএমের শ্রমিক সংগঠনের কলেবর কয়েক বছরে প্রায় ১ লক্ষ ২০ হাজার বেড়েছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement