Education

বদলে যাচ্ছে পরীক্ষার ধাঁচই

বুধবার নতুন শিক্ষানীতি ঘোষণা করতে গিয়ে স্কুলশিক্ষা সচিব অনীতা করওয়াল জানিয়েছিলেন, “বোর্ড পরীক্ষার চাপ কমানোই লক্ষ্য।” শিক্ষানীতিতেও স্পষ্ট লেখা রয়েছে, এখন পড়ুয়াদের যে ধরনের মুখস্থ আর কোচিং-নির্ভর পরীক্ষায় বসতে হয়, তার খোলনলচে বদলে ফেলা জরুরি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা 

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ৩১ জুলাই ২০২০ ০৫:০৯
Share:

প্রতীকী ছবি

লক্ষ্য, বোর্ড-পরীক্ষার চাপ কমানো। ভাবনা, পড়াশোনায় ইংরেজি-নির্ভরতা থেকে মুক্তির। অর্থাৎ, শুধু ইংরেজি বুঝতে না-পারার কারণে যেন ক্লাসরুমে অসুবিধা না-হয় বিষয়ের পাঠ। কিন্তু নতুন শিক্ষানীতির খসড়া কমিটির দুই সদস্যের মতে, এই নীতি ওই জোড়া নিশানা ছুঁতে শুধু কম্পাসের মতো দিগনির্দেশক। জাহাজ শেষমেশ বন্দরে ভিড়বে কি না, তা নির্ভর করবে সেটি কার্যকর করার উপরে।

Advertisement

বুধবার নতুন শিক্ষানীতি ঘোষণা করতে গিয়ে স্কুলশিক্ষা সচিব অনীতা করওয়াল জানিয়েছিলেন, “বোর্ড পরীক্ষার চাপ কমানোই লক্ষ্য।” শিক্ষানীতিতেও স্পষ্ট লেখা রয়েছে, এখন পড়ুয়াদের যে ধরনের মুখস্থ আর কোচিং-নির্ভর পরীক্ষায় বসতে হয়, তার খোলনলচে বদলে ফেলা জরুরি। বদলানো দরকার পরীক্ষার ধাঁচও। তাই আগামী দিনে পড়াশোনা এবং প্রশ্নপত্র হবে এমন, যা পড়ুয়াদের প্রায়োগিক ক্ষমতার পরীক্ষা নেয়। অর্থাৎ, কোচিং সেন্টারে কিংবা টিউশনে ছোটাছুটি করে সারা বছর ধরে মুখস্থ করা পড়া শুধু খাতায় উগরে দেওয়ার ভিত্তিতে নির্ধারিত হবে না সাফল্য-ব্যর্থতা। বরং প্রশ্ন হবে এমন, যাতে পাঠ্যক্রমে অর্জিত জ্ঞানকে দৈনন্দিন জীবনে কিংবা সমস্যা সমাধানে কাজে লাগাতে কতখানি দক্ষ, সেটিই মূল মাপকাঠি হয়ে ওঠে। এক বছরে দু’বার পরীক্ষায় বসার সুযোগ মিলবে। যাতে কোনও কারণে প্রথম বার পরীক্ষা মনমতো না-হলেও মাথায় আকাশ ভেঙে না-পড়ে। বদলাবে মূল্যায়ন পদ্ধতিও।

কমিটির সদস্য রাজেন্দ্রপ্রতাপ গুপ্তর কথায়, “এই যে এক দিনের পরীক্ষার ফলের উপরে কারও ভবিষ্যৎ নির্ভর করে, এই ব্যবস্থার বদল জরুরি। এক জন বছরভর স্কুলে যে সমস্ত প্রজেক্ট জমা দিচ্ছে, কেউ হয়তো বিতর্কে (ডিবেটে) তুখোড়, সে সবের প্রতিফলনও মূল্যায়নে থাকবে না কেন? তা ছাড়া, প্রশ্নপত্রের ধাঁচ তো পাল্টাতেই হবে। নীতিতে তার ভিত তৈরি। এ বার কার্যকর করার দায়িত্ব সরকার, বোর্ড-সহ সংশ্লিষ্টদের। তার উপরেই নির্ভর করবে নীতির সাফল্য।”

Advertisement

বোর্ড পরীক্ষা যে অনেক পড়ুয়ার পক্ষেই প্রাণান্তকর চাপের, তা ফি বছর প্রমাণিত। এক দিনের অসুস্থতায় কেরিয়ার ওলট-পালট হয়ে যায় অনেকের। তাই সে দিক থেকে এই বদল কাঙ্ক্ষিত। কিন্তু বোর্ডগুলি তা কার্যকর করবে কী ভাবে?

নয়া শিক্ষানীতি অনুযায়ী, সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের (বিভিন্ন বোর্ড, স্কুল শিক্ষার জাতীয় পরীক্ষা কেন্দ্র, শিক্ষক ইত্যাদি) সঙ্গে কথা বলে নির্দেশিকা তৈরি করবে এনসিইআরটি। লক্ষ্য, ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের মধ্যে পরীক্ষার ভোলবদল। গুপ্তর মতে, এ জন্য কেন্দ্র এবং রাজ্যগুলির মধ্যে লাগাতার কথা হওয়াটা জরুরি। কিন্তু যে ভাবে স্কুল শিক্ষার জাতীয় শিক্ষাকেন্দ্রকে মান নির্ধারক মূল প্রতিষ্ঠান হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে, তা রাজ্যের অধিকারে হস্তক্ষেপ কি না, সেই প্রশ্ন উঠছেই।

ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে ক্লাসে পড়ানোর ভাষা নিয়েও। গত কাল কেন্দ্রের ঘোষণা, পঞ্চম শ্রেণি (সম্ভব হলে অষ্টম) পর্যন্ত মাতৃভাষা বা স্থানীয় ভাষায় ক্লাসে পড়ানোর উপরে জোর দিতে হবে। কিন্তু বিষয় হিসেবে ইংরেজি থাকছেই। অনেকের প্রশ্ন, তবে কি কলকাতার ইংরেজি মিডিয়াম স্কুলেও পাঠের মাধ্যম হবে বাংলা?

কমিটির আর এক সদস্য এম কে শ্রীধরের দাবি, “কোনও জোরাজুরির প্রশ্ন নেই। লক্ষ্য একটিই, কেবলমাত্র ইংরেজি বুঝতে না-পারার কারণে যাতে কারও পড়াশোনা থমকে না-যায়।” তাঁর ইঙ্গিত, কোন রাজ্যে কোন স্কুল ক্লাসে কী ভাষায় পড়াবে, তা একেবারেই তাদের সিদ্ধান্ত। গ্রামে হয়তো ইংরেজি কম জন বোঝে। আবার কোথাও হয়তো সুবিধা হয় ইংরেজি আর মাতৃভাষার মিশেলে ক্লাস হলে। এদের কেউই যাতে পিছিয়ে না-পড়ে, সুপারিশ সেই কারণেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন