স্থলসীমান্ত চুক্তিতে অসমকে অন্তর্ভুক্ত করার প্রতিবাদে আজ সকাল ৬টা থেকে বিকেল ৪টে অবধি অগপ-র ডাকা অসম বন্ধে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেল রাজ্যে। নামনি অসমে বন্ধের প্রভাব কম হলেও উজানি অসমে বন্ধ সর্বাত্মক হয়।
বন্ধের জেরে যোরহাট, তিনসুকিয়া, শিবসাগরে দোকানপাট, ব্যাঙ্ক, স্কুল-কলেজ বন্ধ ছিল। শিবসাগরের ডিমৌতে বন্ধ সমর্থকরা বাস ভাঙচুর করে। তিনসুকিয়ার মরানেও বন্ধ সমর্থকরা পথ অবরোধ করে। তিনসুকিয়া থেকে বহু অগপ সমর্থককে আটক করে পুলিশ। যোরহাটের নিমাতিঘাটে মাজুলির ফেরি বন্ধ থাকায় কয়েকশো যাত্রী আটকে পড়েন। বন্ধের ব্যাপক প্রভাব পড়ে নগাঁওয়ে। সেখানকার কলিয়াবর, চামাগুড়িতে রাস্তা আটকায় বন্ধ সমর্থকরা। গাড়ি ভাঙার খবরও এসেছে। পথ অবরোধ ও গাড়ি আটকানোর ঘটনা ঘটে বরপেটাতেও। রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে অগপ সমর্থকরা টায়ার জ্বালিয়ে পথ অবরোধ চালায়। তবে রাজধানী গুয়াহাটিতে বন্ধের তেমন কোনও প্রভাব পড়েনি। খোলা ছিল স্কুল-কলেজও। যানবাহন চলেছে স্বাভাবিক ভাবেই। বন্ধের প্রভাব পড়েনি কোকরাঝাড়-সহ বড়োভূমিতেও। নামনি অসমের ধুবুরি, বঙাইগাঁওতে দোকান, ব্যাঙ্ক, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল। যান চলাচল ছিল সামান্য। বন্ধের ফলে ছাগলিয়া সীমান্তে কয়েকশো ট্রাক আজ আটকে পড়ে।
এ দিকে, অসমের পাশাপাশি স্থলসীমান্ত চুক্তির বিরুদ্ধে মেঘালয়েও চলছে প্রতিবাদ। রাজ্য সরকারি তথ্য অনুযায়ী এখানে দুই দেশের মধ্যে মোট বিতর্কিত জমির পরিমাণ প্রায় ৫৫৯ একর। এর মধ্যে স্থলসীমান্ত চুক্তির ফলে মেঘালয় ও বাংলাদেশের মধ্যে থাকা পাইরডিয়ার ১৯৩.৫ একর, লিংখাট-১-এর ৪.৭৯ একর, লিংখাট-২-এর .৭৫ একর, লিংখাট-৩-এর ৬.৯৪ একর, দাউকি-তামাবিলের ১.৫৫ একর, নালিজুরি-১-এর ৬.১৫ একর ও নালিজুরি-২-এর ২৬.৮৫ একর জমি মিলিয়ে মোট প্রায় ২৪০.৫৭ একর জমি মেঘালয় পেতে চলেছে। বদলে মেঘালয়কে দিতে হবে লোবাচেরা-নুনচেরা এলাকার ৪১.৭০ একর জমি। জমি হস্তান্তর নিয়ে গড়া সাতটি সংগঠনের যৌথ মঞ্চ ‘কমিটি অফ ইন্টারন্যাশনাল বর্ডার’-এর মুখপাত্র তথা হিন্নেইত্রেপ ন্যাশনাল ইয়ুথ ফ্রন্টের সভাপতি জি এইচ খারসানলোর বলেন, ‘‘আমরা বরাবরই এই চুক্তি থেকে মেঘালয়কে সরিয়ে রাখার দাবি জানিয়েছি। কিন্তু কোনও সরকারই তা মানল না। সংবিধান সংশোধনী যখন পাশও হয়ে গিয়েছে, তখনও আমরা জানতে পারছি না দুই দেশের মধ্যে থাকা মোট ৫৫৯.৭ একর বিতর্কিত জমির বাকি ২৭৮ একর অংশ নিয়ে কী সিদ্ধান্ত নেওয়া হল।’’ তাঁর বক্তব্য, ‘‘চুক্তির আগে বা পরে, আম জনতার মতামত নেওয়ার কোনও প্রয়োজন মনে করছে না ভারত সরকার।’’ তাঁরা হুমকি দেন, বাকি বিতর্কিত জমির এক ইঞ্চিও তাঁরা বাংলাদেশকে দিতে দেবেন না। খাসি ছাত্র সংগঠন কেএসইউয়ের সভাপতি ড্যানিয়েল খিরিয়েমও মেঘালয়কে স্থলসীমান্ত চুক্তিতে অন্তর্ভুক্ত করার বিরোধিতা করেন। তিনি বলেন, ‘‘১৯৭১ সালের যুদ্ধের পর থেকে মেঘালয় ইতিমধ্যেই অনেক জমি হারিয়েছে। এর চেয়ে বেশি জমি বাংলাদেশকে দেওয়া চলবে না।’’ যৌথ মঞ্চ জানায় ২০০৭ সালে তদানীন্তন উপ-মুখ্যমন্ত্রী ডনকুপার রয়ের নেতৃত্বে ‘কোঅর্ডিনেশন কমিটি অন ইন্দো-বাংলা বর্ডার ফেন্সিং’ তৈরি হয়। সেই কমিটির রিপোর্ট উপেক্ষা করে ২০১১ সালে ইউপিএ সরকার স্থলসীমান্ত চুক্তি করে। তখন থেকেই এ নিয়ে প্রতিবাদ চলছে। আজ স্থলসীমান্ত চুক্তি থেকে মেঘালয়কে বাদ রাখার আর্জি জানিয়ে যৌথ মঞ্চ প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি পাঠায়। অবশ্য রাজ্য সরকার ও মুখ্যমন্ত্রী চুক্তির পক্ষে। মেঘালয়ের মুখ্যমন্ত্রী মুকুল সাংমা চুক্তি স্বাক্ষরের সময় তদানীন্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের সফর সঙ্গী ছিলেন। তাঁর বক্তব্য, ‘‘রাজ্য ৪১ একর জমির বদলে ২৪০ একর জমি পাচ্ছে। চুক্তির পরে বিবাদমান সীমান্ত সৌহার্দ্যপূর্ণ ও শান্ত সীমান্তের চেহারা নেবে। দুই পারের মধ্যে আর্থ-সামাজিক যোগাযোগও বৃদ্ধি পাবে। এতে অসুবিধা কোথায়?’’