এনআরসির সঙ্গে অসম চুক্তির সম্পর্ক নেই বলে জানাল নাগরিক পঞ্জি সংক্রান্ত অসম মন্ত্রিসভার সাব কমিটি। ঠিক তখনই, রাজ্যের সব তফসিলভুক্ত জাতি, উপজাতির নাম বিনা প্রমাণে নাগরিক পঞ্জির অন্তর্ভুক্ত করার পাশাপাশি ১৯৭১ সালের পর অসমে আসা ভিন রাজ্যের বাসিন্দা, বঙ্গভাষী ও হিন্দিভাষীদের নাম তাতে সামিল করার অনুমতি চেয়ে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন জানালেন বিধায়ক তথা প্রাক্তন মন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা।
মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ আজ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহকে জানান, যে নিয়মে এনআরসির কাজ চলছে তাতে বহু প্রকৃত ভারতীয়ের বাদ পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। বর্তমান এনআরসি ফর্ম ও পদ্ধতি সাধারণ মানুষের পক্ষে অত্যন্ত জটিল। তা সহজ করা দরকার। রাজনাথ জানান, এনআরসি নিয়ে সুপ্রিম কোর্ট যা সিদ্ধান্ত নেওয়ার নেবে। তবে, বিজেপি কোনও প্রকৃত ভারতীয়ের নাম নাগরিকপঞ্জী থেকে বাদ যেতে দেবে না।
এই ঘটনা পরম্পরায় আসুর অভিযোগ, কংগ্রেস সরকার যে কোনও ভাবে এনআরসি প্রক্রিয়া বানচাল করতে চাইছে।
অসম মন্ত্রিসভায় জাতীয় নাগরিক পঞ্জি উন্নয়ন সংক্রান্ত সাব কমিটির অধ্যক্ষ ভূমিধর বর্মণ। অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি থাকায় তিনি বৈঠকে থাকতে পারেননি। মন্ত্রী রকিবুল হুসেনের সভাপতিত্বে হওয়া বৈঠকে হাজির ছিলেন মন্ত্রী অজন্তা নেওগ, চন্দন সরকার, অজিত সিংহ, এটোয়া মুণ্ডা। সেখানে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, এনআরসির সঙ্গে অসম চুক্তির ভিত্তিবর্ষকে এক করে দেখা ঠিক নয়। নাগরিক পঞ্জি সংশোধনের ক্ষেত্রে সর্বশেষ ভোটার তালিকাই বেশি প্রাসঙ্গিক ও গুরুত্বপূর্ণ। চা শ্রমিক ও প্রত্যন্ত এলাকার গ্রামবাসীদের ‘লিগ্যাসি ডেটা’ জোগাড় করতে সমস্যা হচ্ছে। তাই চা শ্রমিকদের ক্ষেত্রে বাগান কর্তৃপক্ষের শংসাপত্র ও গ্রামাঞ্চলে পঞ্চায়েত সভাপতি-সম্পাদকের স্বাক্ষরিত প্রমাণপত্র যাতে স্বীকৃতি পায়, সে জন্য আরজিআইকে সুপারিশ করবে রাজ্য। মন্ত্রিসভার সাব কমিটিতে আলোচনা করা হয়— এনআরসি ফর্ম বিতরণের প্রক্রিয়া শুরু হতে ২ মাসের বেশি দেরি হয়েছে। এখনও রাজ্যের অর্ধেকের বেশি নাগরিক লিগ্যাসি ডেটা জোগাড় করতে বা এনআরসি ফর্ম জমা দিতে পারেননি। তাই ফর্ম জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ৩১ জুলাইয়ের বদলে আরও পিছিয়ে দেওয়ার আবেদন জানানো হবে।
অন্য দিকে, সুপ্রিম কোর্টে আবেদন জমা দিয়ে তিন দফা অনুরোধ জানিয়েছেন হিমন্ত। সেগুলি হল— রাজ্যের তফসিলভুক্ত জাতি, উপজাতি ও অন্যান্য ওবিসি তালিকাভুক্ত ভূমিপুত্রদের নাম যেন কোনও শংসাপত্র ছাড়া নাগরিক পঞ্জির অন্তর্ভুক্ত করা হয়। বঙ্গভাষী ও হিন্দিভাষী-সহ ১৯৭১ সালের পর অসমে আসা সব ভারতীয় নাগরিকদের নামও এনআরসিতে সামিল করা হোক। বাবা-মায়ের নাগরিকত্ব প্রমাণিত হলে অপ্রাপ্তবয়স্ক সন্তানদের ‘লিঙ্কেজ’ শংসাপত্র নিয়ে যেন পরিবারগুলিকে বিব্রত করা না হয়। আবেদনপত্রে হিমন্ত জানিয়েছেন, ২০০৫ সাল থেকে এনআরসি প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত ও অসম চুক্তি রূপায়ণ বিভাগের মন্ত্রী থাকার সুবাদে এই প্রক্রিয়ার কিছু ফাঁক তাঁর নজরে এসেছে। তার ফলে রাজ্যে বিভিন্ন ভাষাগোষ্ঠী বা উপজাতিরা জটিলতার সম্মুখীন হচ্ছেন। প্রয়োজনীয় নথি সংগ্রহ করতে না পেরে আত্মহত্যার ঘটনাও ঘটছে।
এর আগে, মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈও ২০১৪ সালের ভোটার তালিকাকে এনআরসির অন্যতম প্রামাণ্য নথি করার প্রস্তাব দিয়ে কেন্দ্র ও আরজিআইয়ের কাছে চিঠি পাঠিয়েছেন। কংগ্রেস বিধায়ক অর্ধেন্দু দে-ও একটি গোষ্ঠীর বঙ্গভাষী ও ভিন রাজ্যের ব্যক্তিদের নাম এনআরসি অন্তর্ভুক্ত করা ক্ষেত্রে ভিত্তিবর্ষ না থাকার দাবি জানিয়েছিলেন।
মুখ্যমন্ত্রী, মন্ত্রিসভার সাব কমিটি ও কংগ্রেস বিধায়কদের দাবির প্রতিবাদ জানিয়েছে আসু। তারা জানায়, মুখ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে কংগ্রেস ভোট ব্যাঙ্ক বাঁচানোর স্বার্থে এনআরসি প্রক্রিয়া বানচাল করতে চাইছে। পঞ্চায়েতের শংসাপত্র সহজেই জোগাড় করা যায়। সেই পথ খুলে দিয়ে কংগ্রেস বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের নাম এনআরসিতে ঢোকাতে চাইছে। কংগ্রেস চেষ্টা করছে, বিধানসভা নির্বাচনের আগে যেন নাগরিক পঞ্জির কাজ শেষ না হয়।
আসুর বক্তব্য, মন্ত্রিসভার সাব-কমিটি গড়ে, আসু-সহ ২৬টি সংগঠনের মত নিয়ে সেই প্রস্তাব আরজিআইতে পাঠানো হয়েছিল। তার ভিত্তিতেই এনআরসি প্রক্রিয়া চলছে। তা হলে ফের কেন সাব-কমিটি গড়ে নতুন নতুন প্রস্তাব তোলা হচ্ছে।