National News

পুত্রশোক ভুলতে ৩ বছর ধরে রাস্তার খানাখন্দ ভরাচ্ছেন 'পটহোল দাদা'

ফাটল ভরাতে আর যা যা লাগে, সেই বালি আর পাথর নিজেই জোগাড় করে আনেন কাছেপিঠে কোনও নির্মীয়মান বাড়ি বা বহুতল বাড়ি থেকে।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

মুম্বই শেষ আপডেট: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৪:০০
Share:

দাদারাও বিলহোর।

ছেলে মারা গিয়েছে তিন বছর আগে। সেই ছেলের শোকে এখনও নিজেই শাবল হাতে নিয়ে মুম্বইয়ের রাস্তার খানা-খন্দ ভরিয়ে যান দাদারাও বিলহোর। প্রায় প্রতি দিনই তাঁকে দেখা যায় মুম্বইয়ের কোনও না কোনও রাস্তায় শাবল হাতে নিয়ে কাজ করতে। রাস্তার গর্ত, খানা-খন্দ ভরাতে। ফাটল ভরাতে আর যা যা লাগে, সেই বালি আর পাথর নিজেই জোগাড় করে আনেন কাছেপিঠে কোনও নির্মীয়মান বাড়ি বা বহুতল বাড়ি থেকে।

Advertisement

খানা-খন্দে ভরা মুম্বইয়ের যে কোনও রাস্তায় গেলেই খুঁজে পাওয়া যাবে 'পটহোল দাদা' বিলহোরকে। গত তিন বছরে যিনি এই ভাবে মুম্বইয়ের রাস্তাঘাটের ৬০০টি খানা-খন্দ ভরিয়েছেন, নিজে হাতে। পুত্রশোক ভুলতে।

দাদারাওয়ের ১৬ বছরের ছেলে প্রকাশ লেখাপড়ায় বরাবরই ছিল খুব ভাল। তাঁকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন ছিল মধ্যবয়সী আনাজ বিক্রেতা দাদারাওয়ের। কিন্তু ২০১৫ সালে এক দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় প্রকাশের। সেই শোক ভুলতেই তিন বছর ধরে এই কাজ করে চলেছেন দাদারাও।

Advertisement

আরও পড়ুন: প্রোমোটার স্বামীকে বাইকে বন্দুক উঁচিয়ে ধাওয়া তরুণীর, বেকবাগানের রাস্তায়

স্ত্রী, মেয়ে আর পরিবার-পরিজন নিয়ে ছোট্ট একটা বাড়ি রয়েছে দাদারাওয়ের। বললেন, ''কিছুতেই ভুলতে পারি না যে ছেলের স্মৃতি। আমাদের জীবনটা শূন্য হয়ে গিয়েছে প্রকাশকে হারিয়ে। তাই চাই না, আর কারও জীবনে সেই অন্ধকার নেমে আসুক। তাই রাস্তার খানা-খন্দ ভরিয়ে চলেছি বছরতিনেক ধরে।''

সে দিনের স্মৃতিচারণ করছিলেন দাদারাও। বললেন, ''এক জনকে নিয়ে ওই দিন বাইক চালাচ্ছিল প্রকাশ। মাথায় হেলমেট ছিল না। রাস্তায় বিরাট একটা খানা-খন্দে ধাক্কা খেয়ে খুব জোরে ছুটে আসা বাইকটা আকাশে উঠে গিয়েছিল। মাটিতে পড়ার পরেই প্রকাশের মাথাটা কার্যত থেঁতলেই গিয়েছিল।''

বলতে বলতে চোখের জল মুছতে দেখা গেল দাদারাওকে।

মুম্বইয়ের রাস্তার খানা-খন্দের জন্য গিনেস বুকে শহরের নাম তোলানোর দাবি বহু দিন ধরেই রয়েছে বাণিজ্যনগরীর বাসিন্দাদের।

নবীন লাদে নামে মুম্বইয়ের এক বাসিন্দা একটা ওয়েবসাইটই খুলে ফেলেছেন এ ব্যাপারে। তার অ্যাড্রেস 'www.mumbaipotholes.com'। সরকারি পরিসংখ্যানই জানাচ্ছে, রাস্তার খানা-খন্দের জন্য দুর্ঘটনায় দেশে প্রতি ১০ দিনে মৃত্যু হয় এক জনের। গত বছর এই ভাবে সারা দেশে মৃত্যু হয়েছে ৩ হাজার ৫৯৭ জনের।

স্থানীয় প্রশাসনের দাবি, নিয়মিত রাস্তা সারানো হয়। আর বাসিন্দারা বলছেন, তা হয় বটে। কিন্তু যে ঠিকাদারদের সেই কাজের দায়িত্ব দেওয়া হয়, তাঁরা আবার সেই কাজ পাওয়ার লোভে খানা-খন্দ ঠিক ভাবে ভরান না। ফলে ফের দুর্ঘটনা ঘটে একই এলাকায়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন