শনিবার যুব কংগ্রেস সদস্যদের গরুর মাংস খাওয়ার এই ছবি ঘিরেই শুরু বিতর্কের। ছবি: সংগৃহীত।
কেরলে কংগ্রেস কর্মীদের প্রকাশ্যে বাছুর কাটা নিয়ে তুঙ্গে উঠল বিতর্ক। তিন কর্মীকে দল থেকে সাময়িক ভাবে বহিষ্কার করে ওই ঘটনার দায় ঝেড়ে ফেলতে চেয়েছে কংগ্রেস। তবু বাকি ধর্মনিরপেক্ষ দলগুলির চুপ থাকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে বিজেপি। এরই মধ্যে চেন্নাই আইআইটি-তেও ৮০ জন পড়ুয়ার ‘গোমাংস উৎসব’-এর খবর সামনে আসায় কেরলের সঙ্গে উত্তাল এ বার তামিলনাড়ুর রাজনীতিও।
সম্প্রতি পশুক্লেশ নিবারণী আইনে এক নির্দেশিকা জারি করে হত্যার জন্য গবাদি পশু বিক্রির উপরে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে কেন্দ্র। গবাদি পশুর শিং রং করা ও সাজানোও নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তার প্রতিবাদ জানিয়েছে কেরলের বাম সরকার।
সিপিএম পলিটব্যুরোও একটি বিবৃতিতে মূলত ৪টি বিষয়ে আপত্তি জানিয়েছে। তাদের বক্তব্য, • এই নির্দেশিকার মাধ্যমে মোদী সরকার গোটা দেশের উপরে খাবারে নিষেধাজ্ঞা চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে। • পশুপালনে যুক্ত কৃষকদের জীবিকা ধাক্কা খাবে। কারণ এতে কৃষকদের কাছে প্রয়োজনের চেয়ে বেশি গবাদি পশু থেকে যাবে। তাদের ভরণপোষণ করতে গিয়ে আর্থিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন তাঁরা। দেশে কৃষকদের আত্মহত্যার সংখ্যাটা এমনিতেই বেশি। তাঁদের উপরে এটা হয়ে উঠবে
বাড়তি বোঝা। • ক্ষতিগ্রস্ত হবে চর্মশিল্প ও মাংস রফতানিও। • এই নির্দেশিকার মাধ্যমে কেন্দ্র রাজ্যগুলির অধিকারে হাত দিয়েছে বলেও দাবি সিপিএমের।
আরও পড়ুন: মাওবাদীদের রোষে এ বার অক্ষয়-সাইনা
গোটা কেরলে গত কাল ‘গোমাংস উৎসব’ পালন করেন কংগ্রেস ও বাম কর্মীরা। সেই সূত্রেই কান্নুরে একটি বাছুরকে প্রকাশ্যে হত্যা করেন যুব কংগ্রেস নেতা রিজিল মাকুট্টি ও তার সঙ্গীরা। পরে মোষের মাথা নিয়ে মিছিলও করেন তাঁরা।
গত কালই এই ঘটনার তীব্র সমালোচনা করেছিলেন কংগ্রেস সহ-সভাপতি রাহুল গাঁধী। আজ কংগ্রেস মুখপাত্র রণদীপ সুরজেওয়ালা জানান, ওই ৩ জনকে দল থেকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। যাঁরা এই ধরনের কাজ করেন কংগ্রেসে তাঁদের স্থান নেই। এই ঘটনায় যে কংগ্রেসের মোদী-বিরোধী প্রতিবাদ ধাক্কা খেয়েছে তা-ও মেনে নিয়েছেন প্রদেশ কংগ্রেস নেতারা। বিজেপিকে খোঁচা দিয়ে সুরজেওয়ালার তবু প্রশ্ন, অরুণাচল, গোয়ার মতো রাজ্যে কি বিজেপি সরকার গোহত্যা বন্ধ করতে পারবে?
পাল্টা খোঁচা দিতে ছাড়েনি বিজেপি। উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথে গোহত্যা-বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম মুখ। তাঁর প্রশ্ন, ‘‘কেরলের ঘটনা নিয়ে ধর্মনিরপেক্ষ দলগুলি চুপ কেন? দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়, জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনা নিয়ে যাঁরা প্রতিবাদে নেমেছিলেন তাঁরাই বা কোথায়?’’
তামিলনাড়ুতে বিতর্ক বাড়িয়েছে চেন্নাই আইআইটি-তে গোমাংস উৎসব। গত কাল রাতে সেখানে ৮০ জন পড়ুয়া গোমাংস খেয়ে উৎসব করেন। সেই আসরে হত্যার জন্য গবাদি পশু বিক্রির উপরে নিষেধাজ্ঞা নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়।
তামিলনাড়ুর পলানীস্বামী সরকার এখনও গোমাংস বিতর্ক নিয়ে মুখ খোলেনি। রাজ্যে হত্যার জন্য গবাদি পশু বিক্রির উপরে কোনও নিষেধাজ্ঞাও নেই। এই সুযোগে আসরে নেমেছে বিরোধী দল ডিএমকে। তাদের নেতা এম কে স্ট্যালিনের দাবি, ‘‘এই নিষেধাজ্ঞার ফলে আন্থিয়ুর এলাকার গবাদি পশু কেন্দ্রে বিক্রি কমে গিয়েছে। রাজ্য সরকার কেন চুপ করে আছে তা আমরা বুঝতে পারছি না। ৩১ মে আমরা ওই নিষেধাজ্ঞার প্রতিবাদে পথে নামব।’’