নালার কাছে কিছু খুঁড়ে বার করার চেষ্টা করছিল একটা বেড়াল। এই দৃশ্য দেখে সন্দেহ হয় এলাকার বাসিন্দাদের। কৌতূহলবশত এগিয়ে গিয়েছিলেন কেউ কেউ। কিন্তু কাছে গিয়ে চমকে উঠেছিলেন তাঁরা। কারণ গর্ত থেকে উঁকি মারছে একটা কচি হাত।
এর পরে খবর দেওয়া হয়েছিল পুলিশে। উদ্ধার হয় বছর চারেকের এক ফুটফুটে শিশুকন্যার দেহ। গত বৃহস্পতিবার সন্ধেয় ঠাণের ভায়ান্দরের একটি বস্তি এলাকার ঘটনা। শিশুটির দেহ উদ্ধারের ২৪ ঘণ্টা কাটতে না কাটতে শুক্রবারই শিশুটিকে গণধর্ষণ ও খুনের দায়ে ৩ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এক জন এখনও পলাতক।
পুলিশ জানিয়েছে, চার অভিযুক্তের নাম মহম্মদ ইউনূস হাজি মহম্মদ বশির শাহ ওরফে জিরো, মহম্মদ রোজান ইশাক রাইনি ওরফে ল্যাঙড়া, জিতেন্দ্র রাই ও রাজেশ। এদের মধ্যে মহম্মদ রোজান ইশাক রাইনি প্রতিবন্ধী। প্রত্যেকেরই বয়স ২২ থেকে ২৫-এর মধ্যে। রাজেশের খোঁজে নেমেছে পুলিশ। আজ স্থানীয় একটি আদালতে তিন অভিযুক্তকে পেশ করা হয়েছিল। ২৪ জানুয়ারি পর্যন্ত অভিযুক্তদের পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছে কোর্ট।
পুলিশ সূত্রে খবর, গত ৯ জানুয়ারি অপহরণ করা হয়েছিল শিশুটিতে। সে দিন আজাদনগরে নিজের বাড়ির সামনেই খেলা করছিল শিশুটি। তাকে চকলেটের লোভ দেখিয়ে একটি সুনসান জায়গায় নিয়ে যায় বশির। ওই যুবক শিশুটির পরিবারের ঘনিষ্ঠ ছিল, ফলে বশিরের সঙ্গে যেতেও রাজি হয়ে যায় সে। বাকিরা তখন অপেক্ষা করেছিল। এর পরে ওই তিন জন জোর করে চেপে ধরে রেখেছিল শিশুটিকে। সেই সুযোগে তাকে ধর্ষণ করে বশির। নৃশংস অত্যাচার চালিয়েও থামেনি তারা। এর পরে শিশুটির চিৎকার-কান্না থামাতে লোহার রড জাতীয় বস্তু দিয়ে মাথায় আঘাত করে মেরে ফেলা হয় তাকে। একটি বড় নালায় দেহটি চাপা দিয়ে স্থানীয় এক হোটেলে খানাপিনাও সারে অভিযুক্তরা।
এ দিকে, শিশুটির কোনও হদিস না পেয়ে ওই দিনই তার পরিবার নভঘর থানায় একটি নিখোঁজ ডায়েরি করেন। গত ১২ জানুয়ারি সন্ধেয় আজাদ নগর বস্তি এলাকার নালা থেকে উদ্ধার হয় ওই শিশুটির দেহ। এই খুনের রহস্যের কিনারা করতে নেমে ঘটনায় জড়িত সন্দেহে ১০ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। তদন্তে পুলিশ জানতে পারে, মূল অভিযুক্ত শিশুটির পরিবারের পূর্ব পরিচিত। এলাকার সিসিটিভি ফুটেজও খতিয়ে দেখে পুলিশ। সেখান থেকেই ঘটনায় জড়িত এক প্রতিবন্ধীর হদিস মেলে। সেই সূত্র ধরেই তিন জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তাদের বিরুদ্ধে অপহরণ, ধর্ষণ, খুন এবং তথ্যপ্রমাণ লোপাটের মামলা করা হয়েছে।
২০১২-র ডিসেম্বর মাসে দিল্লির রাস্তায় গণধর্ষণ ও নৃশংস অত্যাচারের শিকার হয়েছিল নির্ভয়া। সেই ঘটনার চার বছর পেরিয়ে গেলেও অবস্থার পরিবর্তন হয়নি। দেশের নানা প্রান্তে এখনও নির্যাতনের শিকার হয় নির্ভয়ারা। নৃশংস অত্যাচারের হাত থেকে রেহাই পায় না শিশুরাও। ঠাণের এই ঘটনা আবার সেটা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল।