দরবারের পথে। জোনবিল মেলায় টিয়া মহারাজ। বুলানচন্দ্র নাথের তোলা ছবি।
১৮ জন রাজা। তাঁদের মধ্যমণি অসমের মুখ্যমন্ত্রী!
এক সময়ের দোর্দণ্ডপ্রতাপ টিয়া রাজারা এখন তাঁর উপরই সামান্য ভাতার জন্য নির্ভরশীল। বছরভর নুন আনতে পান্তা ফুরনোর মতো অবস্থা থাকে তাঁদের। কিন্তু তিনটে দিন হারানো গৌরব আঁকড়ে দরবার বসান গোভার মহারাজা। সেই দরবার ঘিরেই মেতে উঠেছিল জোনবিলের মেলা। যে মেলায় টাকা-পয়সার প্রয়োজন নেই। চলে প্রাচীন কালের বিনিময় প্রথা।
জোনবিল মেলায় পাহাড়ের মানুষের সঙ্গে সমতলের মেলবন্ধন ঘটে। মেঘালয় থেকে পাহাড় পেরিয়ে খাসি-গারোরা নেমে এসেছিলেন মরিগাঁও জেলার জোনবিলে। আসেন কার্বিরা। সঙ্গে থাকে বাড়ির বাগানের কলা-মুলো। আদা বা হলুদ। কচু আর আলু। সমতল থেকে তার বদলে মেলে চাল, চিনি, মশলা, খেলনা, মোড়া, খাট, বেলুন।
রাজা দীপ সিংহ এখন টিয়া উপজাতির মহারাজ। তিনি পতাকা তুলে মেলার উদ্বোধন করেন। তাঁর দরবার আলো করে ছিলেন বরবরুয়া, সেনাপতি, ডেকা-দলৈ, আরান্ধরা, বরদলৈ, খাটানিয়াররা। অন্যান্য নেতা-মাথারা রাজদর্শন করেন। চলে মহাভোজ। মেলার অন্যতম বড় আকর্ষণ মোরগের লড়াই।
মেলার পাশাপাশি লাগোয়া জোনবিলে চলে সকলে মিলে মাছ ধরার মোচ্ছব। ল্যাটা, বোয়াল, ছোট মাছ, কালবোশ যা ওঠে, তা বিকিয়ে যায় মেলায়। পথচলতি মানুষ গাড়ি থামিয়ে কিনে নেন ছটফটানো মাছ।
আহোম রাজার সমসাময়িক ছোট রাজাদের আমলে পাহাড়ের মানুষ মাঝেমধ্যেই সমতলে হানাদারি চালাত। চলত লুঠপাট। তা থামাতে ১৫ শতকে আহোম রাজা, টিয়া রাজারা সিদ্ধান্ত নেন— পাহাড়ের মানুষ ও সমতলের মানুষ সৌহার্দ্যের পরিবেশে সামগ্রী আদান-প্রদান করবেন। সেই থেকেই বিনিময় মেলার সূচনা। পরে গোভা, নেলি, সহরি ও ডিমরুয়ার রাজারা এই মেলাকে বার্ষিক চেহারা দেন। কিন্তু ২১ শতকে শুধু টিয়ারাজের মেলাই টিঁকে রয়েছে। ১৮ রাজার রাজসভার শেষ দিনে বার্ষিক পাট্টা প্রদান করেন মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়াল।
এ বারের মেলায় ‘জোনবিল’ স্মারক পত্রিকা প্রকাশ করেন স্থানীয় বিধায়ক রমাকান্ত দেউড়ি ও জাগী রোডের বিধায়ক পীযূষ হাজরিকা। জোনবিল মেলার মতোই মরিগাঁও জেলার ধরমতুলেও টিয়া রাজাদের উদপুর মেলা বসে। সেখানেও চলে বিনিময় প্রথা।