২৫ জন সাংসদকে সাসপেন্ডের প্রতিবাদে দলীয় সদস্যদের সঙ্গে বিক্ষোভে কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধী। রয়েছেল রাহুলও। মঙ্গলবার নয়াদিল্লির সংসদ চত্বরে পিটিআইয়ের তোলা ছবি।
দিল্লি সফরের আগে বিজেপি ও কংগ্রেসের সঙ্গে ভারসাম্যের রাজনীতি শুরু করে দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
গত কাল লোকসভা থেকে কংগ্রেস সাংসদদের সাসপেন্ড করার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন। কিন্তু আজ এ নিয়ে সংসদ ভবনে সনিয়া গাঁধীর ধর্না এড়িয়ে গেলেন তৃণমূল সাংসদরা। সংসদ ভবনে উপস্থিত থেকেও লোকসভার অধিবেশন বয়কট করেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল। কিন্তু এ নিয়ে কোনও ভাবেই যাতে বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্বের কাছে ভুল বার্তা না পৌঁছয়, তা নিয়েও বিশেষ ভাবে সতর্কতা দেখাচ্ছেন তাঁরা।
আগামী সপ্তাহে দিল্লি আসছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বন্যা পরিস্থিতির মোকাবিলায় কেন্দ্রের কাছে আর্থিক সাহায্য চাইবেন তিনি। অনেকেই মনে করেন, এ সময়ে মোদী সরকারের সঙ্গে কোনও রকম সংঘাতে যেতে চান না মুখ্যমন্ত্রী।
এ ছাড়াও এ বার ছিটমহলের পুনর্বাসনের টাকা নিয়েও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে বৈঠক করবেন তিনি। এই টাকার অঙ্ক নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর ক্ষোভ থাকলেও কেন্দ্রীয় সরকার স্পষ্ট করে দিয়েছে, রাজ্যকে কোনও ভাবেই রাজ্যকে বঞ্চনা করা হচ্ছে না। কেন না, বাংলাদেশের ছিটমহলগুলি থেকে যত সংখ্যায় মানুষ আসছেন, টাকা সেই হিসেবেই বরাদ্দ হচ্ছে। এ বিষয়ে রাজ্য সরকারের দেওয়া কোনও আনুমানিক হিসেবকে গুরুত্ব দেওয়া সম্ভব নয়। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের বক্তব্য, ছিটমহলের বাসিন্দাদের পুনর্বাসনের জন্য নবান্ন ৩০০৮.৮৯ কোটি টাকার একটি প্রস্তাব পাঠিয়েছিল। সব দিক বিবেচনা করে প্রাথমিক ভাবে ২৬২৫.০৬ কোটি টাকা পশ্চিমবঙ্গকে দিতে রাজি হয় কেন্দ্র। তবে শর্তে বলা হয়েছিল, ওই টাকার মধ্যে ৭৪৪ কোটি ছিটমহলের পরিকাঠামো উন্নয়নে দেওয়া হবে। কিন্তু ঠিক ক’জন বাংলাদেশের ছিটমহল থেকে পশ্চিমবঙ্গে আসছেন, তার উপরেই রাজ্য বাকি টাকা পাবে। সেই সংখ্যার ভিত্তিতেই এখন অর্থ পেতে চলেছে রাজ্য। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক জানিয়েছে, টাকার অঙ্ক যে পরিবর্তন হতে পারে, সেই বিষয়টি রাজ্য সরকারকে আগেই জাননো হয়েছিল।
এই পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর বৈঠকের আগে সংসদে কৌশলী অবস্থান নিচ্ছে তৃণমূল। আজকের ধর্নায় যোগ দিতে কংগ্রেস শিবির থেকে আবেদন করা হয়েছিল। তবে নেত্রীর নির্দেশে সেই প্রস্তাব এড়িয়ে যান তৃণমূল সাংসদরা। আর তৃণমূলের অবস্থান দেখে সিপিএম নেতৃত্বও সুযোগ খুঁজছেন। আগামিকাল সংসদ ভবনে একই ভাবে ধর্নায় বসতে চলেছে কংগ্রেস। কালও তৃণমূল অনুপস্থিত থাকলে, কংগ্রেসের পাশে দাঁড়িয়ে বিক্ষোভ দেখাতে পারেন সিপিএমের সাংসদরা। তবে সনিয়ার নেতৃত্বে আজকের ধর্নায় না থাকার পিছনে তৃণমূলের যুক্তি, দল নিজস্ব পথে প্রতিবাদ জানাচ্ছে। তাই সংসদীয় গণতন্ত্রের স্বার্থেই লোকসভায় অনুপস্থিত থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। প্রতিবাদ কী পথে হবে, তা দলের নিজস্ব সিদ্ধান্ত।
আসলে সারদা সহ বিভিন্ন বিষয়কে নিয়ে চাপের মুখে থাকা তৃণমূল মধ্যপন্থা নিয়ে চলতে চাইছে। তাই মোদী সরকারের আনা কোনও কোনও বিল সমর্থন করতে কখনও কখনও উৎসাহ দেখাচ্ছে তারা। সংসদে অচলাবস্থার প্রশ্নেও দোটানায় রয়েছে দল। ললিত মোদী বিতর্ক ও ব্যপম কেলেঙ্কারি নিয়ে উত্তাল সংসদে বার বার কৌশলী অবস্থান নিয়েছে মমতার দল। ভবিষ্যতের কথা ভেবে কংগ্রেস নেতৃত্বকে একেবারে চটাতেও চাইছেন না মমতা। কিন্তু তাদের পাঁচ দিন লোকসভা বয়কটের সিদ্ধান্ত, বিজেপি শিবিরে যাতে ভুল বার্তা পৌঁছে না দেয়, সে জন্যই সনিয়ার ধর্না এড়িয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
তৃণমূলের এই ‘ধরি মাছ না ছুঁই পানি’ গোছের অবস্থান নিয়ে আক্রমণ শানাতে ছাড়েনি সিপিএম। দলের নেতাদের অভিযোগ, সারদা তদন্ত নিয়ে সিবিআইয়ের সঙ্গে বোঝাপড়ার ফলেই বিজেপি ও তৃণমূলের দূরত্ব অনেক কমে এসেছে। বহু ক্ষেত্রে শাসক দলের সঙ্গে সমন্বয় রেখে সংসদ চালাতে সাহায্য করছে তৃণমূল। আর তাই গত কাল সবর্দলীয় বৈঠকেও সংসদ চালানোর পক্ষে সওয়াল করেছেন তৃণমূলের লোকসভার নেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়।