Sayoni Ghosh

বাংলা ছড়া থেকে উর্দু শায়েরি! সংসদে তিন ভাষায় বক্তৃতা সায়নীর, বললেন, ‘মোদীকে তাঁর জোকার বানিয়ে দিয়েছেন ট্রাম্প’

‘অপারেশন সিঁদুর’ নিয়ে লোকসভায় আলোচনার জন্য তৃণমূল দু’জনকে দায়িত্ব দেয়। শ্রীরামপুরের সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং সায়নী ঘোষ। সোমবার কল্যাণ বক্তৃতা করেন। মঙ্গলবার তৃণমূলের হয়ে আলোচনায় যোগ দেন সায়নী।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৯ জুলাই ২০২৫ ১৮:৩০
Share:

সংসদে বক্তৃতার সময় সায়নী ঘোষ। ছবি: ভিডিয়ো থেকে নেওয়া।

কখনও গলা তুললেন, কখনও নামালেন। পোড় খাওয়া বক্তারা যেমন সুরে বাঁধেন বক্তৃতা! তেমন। কখনও বাংলায় ছড়া কাটলেন, কখনও উর্দু শায়েরি বললেন। বাংলা, হিন্দি, ইংরেজি— তিনটি ভাষার মিশেলে ২০ মিনিটের বক্তৃতা। পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলা এবং তার পরবর্তী ‘অপারেশন সিঁদুর’ নিয়ে লোকসভার আলোচনায় নজর কাড়লেন যাদবপুরের তৃণমূল সাংসদ সায়নী ঘোষ।

Advertisement

‘অপারেশন সিঁদুর’ নিয়ে লোকসভার আলোচনায় তৃণমূল দু’জনকে দায়িত্ব দেয়। শ্রীরামপুরের সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং সায়নী। কল্যাণ সোমবার বলেছিলেন। পাক অধিকৃত কাশ্মীরকে ‘পাকিস্তান শাসিত আজাদ কাশ্মীর’ বলে বিতর্কেও জড়িয়েছিলেন। মঙ্গলবার বললেন সায়নী। প্রথম বারের সাংসদ সায়নীকে বলতে দেওয়া ঠিক হচ্ছে কি না, এ নিয়ে তৃণমূলের মধ্যেই আলোচনা ছিল। কিন্তু হাতের মুদ্রা ব্যবহার, কণ্ঠের চড়াই-উতরাই, মুখের অভিব্যক্তি, শব্দচয়ন— সব কিছুতেই সুবক্তার ছাপ রাখলেন অভিনেত্রী থেকে নেত্রী হওয়া সায়নী।

মঙ্গলবার নিজের বক্তৃতার শুরুতেই সায়নী অধ্যক্ষের চেয়ারে থাকা দিলীপ শইকীয়ার উদ্দেশে জানান, তিনি তিনটি ভাষায় বলবেন। বাংলা, হিন্দি এবং ইংরেজি। তিনটি ভাষাতেই সাবলীল যাতায়াত ছিল সায়নীর বক্তৃতায়। কখনও থমকে যাননি। হাতে ছিল একগুচ্ছ কাগজ। কখনও কাগজ দেখে তথ্য বললেন, কখনও বিজেপি-র বিরুদ্ধে রাজনৈতিক আক্রমণ শানালেন কাগজ থেকে চোখ তুলে, অধ্যক্ষের চেয়ার কিংবা সংসদকক্ষের দিকে তাকিয়ে। এক বারের জন্যও আড়ষ্ট দেখায়নি প্রথম বারের সাংসদকে।

Advertisement

ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে সংঘর্ষবিরতি নিয়ে বার বার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দাবির কথা তুলে ধরেন সায়নী। পরিসংখ্যান তুলে সায়নী বলেন, ‘‘১০ মে থেকে আজ (২৯ জুলাই) পর্যন্ত ২৮ বার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ভারত-পাক সংঘর্ষবিরতি নিয়ে তাঁর ভূমিকার কথা বলেছেন। তার পরেও ভারত সরকার প্রায় ‘নীরব’ ছিল। চুপ ছিলেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহ।’’ সায়নীর উপহাস, ‘‘মোদীকে তাঁর জোকারে পরিণত করেছেন ট্রাম্প।’’ বক্তৃতার শেষে ভারতীয় সেনাবাহিনীকে ধন্যবাদ জানান সায়নী।

সায়নী তাঁর বক্তৃতায় মনে করিয়ে দিয়েছেন, পহেলগাঁও জঙ্গি হামলার পরে সব দলের মতো তাঁর দল তৃণমূল, সেই তৃণমূলের সর্বময় নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও সরকারের পাশে থাকার কথা জানিয়েছিলেন। সেই প্রসঙ্গ উল্লেখ করেই বিজেপি-কে বিঁধে বলেন, ‘‘মমতাদি যখন স্পর্শকাতর বিষয়ে দেশের সরকারের পাশে দাঁড়াচ্ছেন, তখন বিজেপির মন্ত্রী বলছেন অপারেশন সিঁদুরের পরে অপারেশন পশ্চিমবঙ্গ হবে।’’ এর পরেই সায়নীর চ্যালেঞ্জ, ‘‘ক্ষমতা থাকলে কালকে ভোট করুন। দেখা যাবে!’’ বাংলায় ছ়ড়া কেটে যাদবপুরের সাংসদ বলেন, ‘‘এক দিকে আপনাদের সরকার, এজেন্সি আর কোটি কোটি ক্ষমতা, অন্য দিকে হাওয়াইচটি আর বাংলার মেয়ে মমতা। দেখি কে জেতে!’’

যাদবপুরের সাংসদের পরনে ছিল সাদা সুতির শাড়ি। আঁচলের উপরের দিকের পাড়ে ছিল কালো সুতোর কাজ। আর নীচের অংশে ছিল লাল সুতোর কাজ। কপালে গাঢ় লাল রঙের মাঝারি মাপের টিপ। রাজ্যে বিজেপি নেতারা অহরহ অভিযোগ তুলছেন, বাংলায় অনুপ্রবেশ ঘটিয়েছেন মমতা। পাল্টা স‌ংসদের বক্তৃতায় সায়নী প্রশ্ন তুললেন, ‘‘পহেলগাঁওয়ে জঙ্গিরা ঢুকল কী ভাবে? সেখানেও কি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন না কি?’’

পহেলগাঁওয়ে ২৬ জন নিহতের মধ্যে ছিলেন বাংলার তিন বাসিন্দাও। তাঁদের মধ্যে বিতান অধিকারী সায়নীর কেন্দ্র যাদবপুরে থাকতেন। বিতানের পরিবারের সঙ্গে দেখা করেছিলেন সায়নী। সেই প্রসঙ্গ বলতে গিয়ে গলা কিছুটা ধরে আসে সায়নীর। তার পরেই আবার পাকিস্তানের সন্ত্রাস, মোদী সরকারের ভূমিকা এবং বিজেপি-কে ক্রমাগত আক্রমণ করেন তৃণমূল সাংসদ। সায়নী মনে করেন, প্রধানমন্ত্রী শুরুটা ভাল করলেও শেষটা ভাল করতে পারেননি। তৃণমূল সাংসদের প্রশ্ন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী কি পারলেন শেষ পর্যন্ত দেশবাসীর ভরসা অক্ষুণ্ণ রাখতে?’’

শুধু আক্রমণ নয়, সায়নীর বক্তৃতায় টিপ্পনিও ছিল বিজেপির বিরুদ্ধে। তাঁর কথায়, ‘‘কাহিনি ভাল বোনা হয়েছিল। কিন্তু সর্ষের তেলের বদলে কেরোসিন তেলে পকোড়া ভাজা হয়েছে!’’ অন্য বিরোধী সাংসদদের মতো সায়নীও প্রশ্ন তোলেন, কী ভাবে পহেলগাঁওয়ে জঙ্গিরা ঢুকে পড়ল? কেন সেখানে পুলিশ পৌঁছোতে পারল না?

পহেলগাঁও কাণ্ডের পর পরই জম্মু ও কাশ্মীরের লেফটেন্যান্ট গভর্নর মনোজ সিন্‌হা ‘নিরাপত্তার ব্যর্থতা’র কথা বলেছিলেন। সেই প্রসঙ্গ টেনে সায়নীর প্রশ্ন, ‘‘কেন গোয়েন্দাপ্রধানের কাছে এই ব্যর্থতার জবাবদিহি চাওয়া হল না? কেন তাঁকে সরানো হল না? তার বদলে কেন তাঁর মেয়াদ বৃদ্ধি করা হল?’’ পহেলগাঁও-কাণ্ডে জড়িত তিন জঙ্গিকে নিকেশ করা হয়েছে বলে মঙ্গলবার সংসদে দাবি করেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। সেই বিষয়ে সায়নী কিছুটা ঠাট্টার সুরে বলেন, ‘‘আমরা ভাগ্যিস এখন আলোচনা শুরু করলাম, তাই জঙ্গিরা ধরা পড়ল। দু’মাস আগে করলে, আরও আগে ধরা পড়ত।’’

পাকিস্তান এবং পাকিস্তান সমর্থিত জঙ্গিগোষ্ঠীকে ‘জবাব’ দেওয়ার ‘সুবর্ণ সুযোগ’ নষ্ট হয়েছে বলে দাবি করেন সায়নী। ধীরে ধীরে সুর চড়িয়ে তিনি একের পর এক দাবি পেশ করতে থাকেন সংসদে। কেন পাক অধিকৃত কাশ্মীর দখল করা হল না, সেই প্রশ্ন তোলেন, যা ধারাবাহিক ভাবে তুলে আনছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। ইতিমধ্যে ২১ জুলাইয়ের সভা থেকে মমতাও সেই প্রশ্ন তুলেছেন। সায়নীর মতে, ‘‘ইটের জবাব ইটে দেওয়া হয়েছে। ভারতবাসী চেয়েছিল ইটের জবাব পাথর দিয়ে দেওয়া হোক। পাকিস্তানকে জবাব দেওয়ার যখন সুযোগ ছিল, তখন সেটা আমরা নষ্ট করেছি। পাকিস্তানকে বোঝানো যেত তাদের পতাকায় চাঁদ রয়েছে। আর আমাদের পতাকা চাঁদে রয়েছে।’’ তাঁর কথায়, ‘‘ভারতের উচিত ছিল স্পষ্ট ভাষায় বার্তা দেওয়া যে, ‘আমি ভয় করব না ভয় করব না, দু’বেলা মরার আগে মরব না ভাই মরব না’।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement