স্মার্টসিটিই গলার কাঁটা বিজেপির

স্মার্টসিটি। এই শব্দবন্ধই এখন শিলচরে বিজেপির গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কখনও তা বিধায়ক দিলীপকুমার পালকে বিদ্ধ করে। কোনও সময় অস্বস্তিতে পড়েন পুরপ্রধান নীহারেন্দ্র নারায়ণ ঠাকুর। তাঁরা সকলে ভেবেছিলেন, অম্রুত-এ ঢুকে গেলে রেহাই মিলবে। কিন্তু হয়নি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০২ মার্চ ২০১৬ ০২:৫৫
Share:

স্মার্টসিটি।

Advertisement

এই শব্দবন্ধই এখন শিলচরে বিজেপির গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

কখনও তা বিধায়ক দিলীপকুমার পালকে বিদ্ধ করে। কোনও সময় অস্বস্তিতে পড়েন পুরপ্রধান নীহারেন্দ্র নারায়ণ ঠাকুর। তাঁরা সকলে ভেবেছিলেন, অম্রুত-এ ঢুকে গেলে রেহাই মিলবে। কিন্তু হয়নি। কংগ্রেস খুঁচিয়ে স্মার্টসিটি প্রসঙ্গকেই সামনে নিয়ে আসে। এ বার এই নিয়ে তারা নীহারবাবুর পদত্যাগ দাবি করেছেন।

Advertisement

আজ শিলচর শহর কংগ্রেস কমিটি ও কংগ্রেস পুর পরিষদীয় দল যৌথ ভাবে অভিযোগ করেছে, বিজেপিই চায়নি শিলচর স্মার্টসিটি হোক। বিধানসভা উপনির্বাচনের আগে শুধু ধাপ্পাবাজির জন্য এমন প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। তাঁদের বক্তব্যের সমর্থনে নীহারবাবুর সই করা চিঠি দেখান প্রাক্তন পুরপ্রধান তমালকান্তি বণিক, পুরসভার বিরোধী দলের উপনেতা সজল বণিক, শহর কংগ্রেস সভাপতি শৈবাল দত্তরা।

কংগ্রেসের শিলচর জেলা কমিটির সম্পাদক সঞ্জীব রায় শহরের নাগরিক হিসেবে পুরসভার কাছে তথ্য জানার অধিকার আইনের উল্লেখ করে কিছু প্রশ্ন উত্থাপন করেন। সঞ্জীববাবু বলেন, ‘‘কেন্দ্রীয় নগরোন্নয়ন মন্ত্রক থেকে স্মার্টসিটির প্রাক্‌-শর্ত হিসেবে ৪৩টি প্রশ্ন পাঠানো হয়েছিল। সেগুলির উত্তর পাঠানোর কথা পুরসভার। এর ভিত্তিতে অসমের পুরসভাগুলির মধ্যে প্রতিযোগিতা হতো।’’

ওই প্রশ্নমালার উত্তর শিলচর পুরসভা আদৌ দিয়েছে কি না সঞ্জীববাবু জানতে চেয়েছেন। কবে প্রশ্নমালা পাঠানো হয়েছে, কবে উত্তর দেওয়া হয়েছে, তারও জবাব চান তিনি। সঙ্গে নগরোন্নয়ন মন্ত্রক পাঠানো প্রশ্নমালা ও পুরসভার উত্তরসমূহের প্রতিলিপি দাবি করেন। উত্তর পাঠানোর পরিপ্রেক্ষিতে স্মার্ট সিটি-র প্রস্তাব বর্তমানে কোন অবস্থায় রয়েছে, তাও জিজ্ঞাস্য সঞ্জীববাবুর।

১৫ ফেব্রুয়ারি পাঠানো আরটিআই আবেদনের জবাব দিতে অবশ্য দেরি করেন প্রবীণ আইনজীবী নীহারেন্দ্র নারায়ণ ঠাকুর। তিনি জানিয়েছেন, স্মার্টসিটি সংক্রান্ত যে নথিপত্র চাওয়া হয়েছে, তা এই মুহূর্তে খুঁজে বের করা মুশকিল। কারণ হিসেবে উল্লেখ করেন, তাঁরা সবেমাত্র গত বছর ২ এপ্রিল দায়িত্ব নিয়েছেন। তার উপর পুরনো অফিস বদলে পুরসভার কাজকর্ম চলছে নতুন দালানবাড়িতে। ওখান থেকে এখানে কাগজপত্র আনা-নেওয়ার দরুন অনেক গুরুত্বপূর্ণ ফাইল, কাগজপত্র হাতের কাছে পাওয়া যাচ্ছে না। তিনি সে জন্য সঞ্জীববাবুর কাছে কিছু দিন সময় নেন।

সে জবাবেই নীহারবাবুদের ইচ্ছা-উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তোলেন কংগ্রেস নেতৃবৃন্দ। তমালবাবু বলেন, ‘‘স্মার্টসিটি নিয়ে চিঠি চালাচালি তাঁর আমলেই শুরু হয়েছে। ফলে সবেমাত্র দায়িত্বগ্রহণের যুক্তি টেকে না। দ্বিতীয়ত, পুরসভার অফিস বদল ও কাগজপত্র আনা-নেওয়া হয় ২০১৩-১৪ সালে। ফলে স্মার্টিসিটির প্রশ্নমালা নতুন দালানবাড়িতেই এসেছে। উত্তর সেখান থেকেই যাওয়ার কথা।’’

নীহারবাবুর এই জবাবে কংগ্রেসের আশঙ্কা, বিজেপি পরিচালিত পুরসভা স্মার্টসিটি সংক্রান্ত প্রশ্নগুলির জবাবই পাঠায়নি। উপনির্বাচনে জিতলেও শিলচরকে যে স্মার্টসিটি দেওয়া হবে না, দল আগেভাগেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। তাই নীহারবাবুরা উত্তর পাঠানোর প্রয়োজন মনে করেননি।

শৈবালবাবু, সজলবাবুদের দাবি, ঠিকঠাক জবাব পাঠানো গেলে শিলচর স্মার্টসিটির মর্যাদা পেয়ে যেত। কারণ একমাত্র এই পুরসভারই নিজস্ব মল রয়েছে। আছে জল সরবরাহ প্রকল্প। সুস্মিতা দেবের আমলে শিলচর পুরসভা ই-গভর্ন্যান্সে পুরস্কার পেয়েছিল। এ সব উল্লেখ করে তাঁরা আক্ষেপ ব্যক্ত করেন, স্মার্টসিটির প্রকল্পে ঢুকে পড়লে শহরের ভোল পাল্টে যেত।

শিলচরের অম্রুত (অটল মিশন ফর রিজ্যুভেনেশন অ্যান্ড আরবান ট্রান্সফরমেশন)-এ ঢোকার উল্লেখ করে তাঁরা জানতে চান, এই প্রকল্পেই শহরের রাস্তার আলোর ব্যবস্থা হওয়ার কথা। কিন্তু নীহারবাবু মাত্র কয়েক দিন আগে বাইরের একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে এ নিয়ে ৭ বছরের চুক্তি করেছেন। এই খাতে পুরসভার নিজস্ব তহবিল ভাঙাকে তাঁরা অযৌক্তিক বলে উল্লেখ করেন।

অম্রুত নিয়ে পুরবোর্ডে কোনও আলোচনা না করায় সমালোচনায় মুখর হয় কংগ্রেস পুর পরিষদীয় দল। তাঁরা নীহারবাবুকে পুরসভা পরিচালনায় ব্যর্থ বলে দাবি করে তাঁর পদত্যাগ দাবি করেন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement