— ফাইল চিত্র।
মানবজাতিও কি এক দিন ধ্বংস হয়ে যাবে! কিন্তু কখন, কী ভাবে— এই প্রশ্ন নিয়ে বহু দিন ধরে গবেষণা করে চলেছেন বিজ্ঞানীরা। তাঁদের একাংশ মনে করেন, পৃথিবীতে ক্রমে উত্তাপ বৃদ্ধি পেতে থাকবে। আর সে কারণে মানুষ-সহ স্তন্যপায়ীরা নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। নতুন গবেষণা সেই প্রক্রিয়াকেই আরও বিশদে বর্ণনা করেছে। গবেষণাকারীদের দাবি, মহাদেশীয় পাতগুলি একে অপরকে ধাক্কা দেবে। তার পরে পরস্পরের সঙ্গে জুড়ে একটি স্থলভূমিতে পরিণত হতে পারে। আর তার জেরেই পৃথিবী থেকে নির্মূল হয়ে যেতে পারে মানবসভ্যতা। কোটি কোটি বছর আগে যেমন পৃথিবী থেকে মুছে গিয়েছিল ডায়নোসরেরা, তেমন এক দিন মানবজাতিরও চিহ্ন থাকবে না এখানে। তা হতে পারে ২৫ কোটি বছর পরে।
আগামী সময়ে পৃথিবীর জলবায়ুর কী ভাবে পরিবর্তন হতে পারে, তার একটি সম্ভাব্য মডেল তৈরি করে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছেন বিজ্ঞানীরা। আর তাতেই তারা জানতে পেরেছেন মানবজাতির অবলুপ্তির সম্ভাব্য কারণ। বিজ্ঞানীদের একাংশের অনুমান, কোটি কোটি বছর পরে জুড়ে যাবে আমেরিকা এবং আফ্রিকা। তৈরি হবে নতুন মহাদেশ, যার নাম ‘প্যানজিয়া আলটিমা’। বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই ‘প্যানজিয়া আলটিমা’ প্রভাব ফেলবে পৃথিবীর জলবায়ুতে। তাপমাত্রা ক্রমেই বাড়তে থাকবে। সেই তাপমাত্রায় বেঁচে থাকা মানুষের পক্ষে একপ্রকার অসম্ভব হয়ে উঠবে বলেই মনে করছেন বিজ্ঞানীরা।
ব্রিস্টল বিশ্ববিদ্যালয়ের আলেকজান্ডার ফার্নসওয়ার্থের নেতৃত্বে এক দল বিজ্ঞানী এই গবেষণা করেছেন। ‘নেচার জিয়োসায়েন্স’ পত্রিকায় সেই গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে। আলেকজান্ডারেরা টেকটনিক পাতের চলন, গ্রিনহাউস গ্যাস নিয়ে গবেষণা শুরু করেছিলেন। আর তা করতে গিয়েই মানুষের অবলুপ্তির সম্ভাব্য কারণ খুঁজে পেয়েছেন।
প্যানজিয়া আলটিমা
বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, পৃথিবীর মহাদেশীয় পাতগুলি আসলে গতিশীল। একে অপরের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এ ভাবে চলতে চলতেই এক দিন আমেরিকার সঙ্গে মিশে যেতে পারে আফ্রিকা। তৈরি হতে পারে বিশাল এক মহাদেশ যার নাম দেওয়া হয়েছে ‘প্যানজিয়া আলটিমা’। বিশালত্বের কারণে এই মহাদেশের বিস্তৃত এলাকা থাকবে সমুদ্র থেকে অনেক দূরে। ফলে তা সহজে তাপ ক্ষরণ করে শীতল হতে পারবে না। আলেকজান্ডার বলছেন, বিরাট ওই মহাদেশে বাড়বে কার্বন-ডাই-অক্সাইড নিঃসরণ। এ সব কারণে ওই মহাদেশে বাস করা এক প্রকার অসম্ভব হয়ে উঠবে মানুষের কাছে।
অনুঘটক
সময় যত এগোবে, তত উত্তপ্ত হয়ে উঠবে সূর্য। আরও বেশি করে বিকিরিত হবে তাপ। সেই সঙ্গে আগ্নেয়গিরি থেকে অগ্ন্যুৎপাতের পরিমাণও বৃদ্ধি পাবে। সে কারণে পৃথিবীতে কার্বন-ডাই-অক্সাইডের পরিমাণও বাড়বে। উত্তাপ বাড়বে বায়ুমণ্ডলের। আলেকজান্ডার মনে করেন, সে সময় পৃথিবীতে দৈনিক গড় তাপমাত্রা থাকবে ৪০ থেকে ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বাড়বে আর্দ্রতা। মানুষ-সহ বিভিন্ন প্রাণী ঘামের মাধ্যমে শরীরের তাপ বার করতে এক সময় অক্ষম হয়ে পড়বে। ফলে শরীরও ঠান্ডা হবে না। আর সেটাই কাল হবে, বলছেন আলেকজান্ডার।
সতর্কতা এখনই
ব্রিস্টল বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ইউনিস লো বলছেন, ভবিষ্যতের কথা ভেবে আজ থেকেই মানুষকে সচেতন হতে হবে। গ্রিন হাউস গ্যাস নিঃসরণ কমাতে হবে। শীঘ্রই তা শূন্যে আনতে হবে। নয়তো এই গরমই কাল হবে। ২৫ কোটি বছর পরে পৃথিবীতে আর কোনও মানুষ থাকবে না। গত এক দশকেই পৃথিবীতে তাপমাত্রা বেড়েছে। তার প্রভাব পড়েছে মানুষের স্বাস্থ্য থেকে চাষবাসে। এখনই কার্বন নিঃসরণ না কমালে ফল ভুগতে হবে মানুষকেই।