অ্যালবার্ট আইনস্টাইনের সূত্র ধরেই মঙ্গল নিয়ে নতুন এক আবিষ্কার দুই বিজ্ঞানীর। ছবি: আইস্টক।
অ্যালবার্ট আইনস্টাইন আগেই বলেছিলেন। এ বার দুই বিজ্ঞানীর নতুন গবেষণাও সে রকমই বলছে। তাতে দেখা গিয়েছে, পৃথিবীতে ঘড়ির কাঁটা যে গতিতে চলে, মঙ্গলে তার তুলনায় সামান্য দ্রুত চলে। কতটা, সেই পরিমাণও জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। পৃথিবী থেকে পরিমাপ করে দেখা গিয়েছে, ২৪ ঘণ্টায় মঙ্গলের ঘড়ির কাঁটা এই গ্রহের ঘড়ির তুলনায় গড়ে ৪৭৭ মাইক্রোসেকেন্ড (০.৪৭৭ মিলিসেকন্ড) আগে চলে।
বিজ্ঞানীদের কাছে একপ্রকার স্পষ্ট যে, মঙ্গলে ঘড়ি নিয়ে গেলে তার কাঁটা পৃথিবীর তুলনায় সামান্য এগিয়ে চলবে। তাঁদের একাংশ মনে করছেন, এই হিসাব মিলে যাওয়ায় বেশ কিছু বাড়তি সুবিধা মিলবে। সৌরমণ্ডলের সর্বত্র ইন্টারনেট পরিষেবা চালু করার ক্ষেত্রে সমস্যা কিছুটা হলেও দূর হবে। আগামী কয়েক দশকে মঙ্গল-সহ সৌরমণ্ডলে মানুষের আনাগোনা আরও বৃদ্ধি পাবে। বিজ্ঞানীদের একাংশ মনে করছেন, প্রত্যেক গ্রহের যদি একটি প্রমাণ সময় বার করা যায়, সে ক্ষেত্রে সেখান থেকে পৃথিবীর সঙ্গে যোগাযোগ করার ক্ষেত্রে মহাকাশচারীদের সুবিধা হবে।
আইনস্টাইনের সেই সূত্রের কথাও মনে করিয়ে দিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। আইনস্টাইন বলেছিলেন, সময়ের কাঁটা সর্বত্র এক গতিতে চলে না। তাঁর আপেক্ষিকতাবাদ সূত্র (রিলেটিভিটি থিওরি) অনুসারে, কোনও নির্দিষ্ট এলাকার সময় সেখানকার মাধ্যাকর্ষণ শক্তির উপর নির্ভরশীল। যে সব এলাকায় মাধ্যকর্ষণ শক্তি তীব্র, সেখানে ঘড়ির কাঁটা তুলনায় ধীরে চলে। যেখানে মাধ্যকর্ষণ শক্তি তুলনায় দুর্বল, সেখানে ঘড়ির কাঁটাও তুলনায় দ্রুত ঘোরে। ঠিক সে কারণেই পাহাড়ের মাথায় যাঁরা বসবাস করেন, তাঁদের হাতে ঘড়ির কাঁটা তুলনায় দ্রুত ঘোরে। সমুদ্র তীরবর্তী অঞ্চলে ঘড়ির কাঁটা সেই তুলনায় সামান্য ধীর গতিতে ছোটে।
একই ভাবে, কোনও গ্রহ তাঁর ‘অভিভাবক’ নক্ষত্রের চার পাশে যে গতিতে ঘোরে, তার উপর নির্ভর করে সেখানকার সময়। কোনও গ্রহ নিজের কক্ষপথে যত দ্রুত গতিতে নক্ষত্রের চারপাশে ঘোরে, সেই গ্রহের ঘড়ির কাঁটাও তত দ্রুত ঘোরে।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, কোনও গ্রহে সময়ের গতি নির্ভর করে সেই গ্রহের মাধ্যাকর্ষণ শক্তি এবং নিজের কক্ষপথে তার বার্ষিক গতির উপর। সে কারণে পৃথিবী থেকে মাপলে এক এক গ্রহের এক এক রকম সময় দেখায়। ২০২৪ সালের একটি গবেষণায় দেখা গিয়েছিল, পৃথিবীতে যে গতিতে ঘড়ির কাঁটা ঘোরে, তার তুলনায় চাঁদে তা ২৪ ঘণ্টায় গড়ে ৫৬ মাইক্রোসেকেন্ড বেশি দ্রুত ঘোরে।
কলোরাডোর ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেকনোলজি ইন বোল ডারের দুই বিজ্ঞানী নেইল অ্যাশবি এবং বিজুনাথ পাটলা মঙ্গলের সময় নিয়ে গবেষণা শুরু করেন। তাঁরা পদার্থবিদ্যার কিছু সূত্র প্রয়োগ করে বোঝার চেষ্টা করেন পৃথিবী এবং মঙ্গলের মাধ্যাকর্ষণ শক্তি এবং বার্ষিক গতি তাদের প্রমাণ সময়কে কতটা প্রভাবিত করতে পারে। মঙ্গল পৃথিবীর তুলনায় কম গতিতে নিজের কক্ষপথে সূর্যের চারদিকে প্রদক্ষিণ করে। সে কারণে সেখানে ঘড়ির কাঁটা পৃথিবীর তুলনায় সামান্য কম গতিতে ঘোরার কথা। কিন্তু একই সঙ্গে মঙ্গলের মাধ্যাকর্ষণ শক্তি পৃথিবীর সমুদ্রপৃষ্ঠে যে মাধ্যাকর্ষণ শক্তি, তার পাঁচ ভাগের এক ভাগ। সে কারণে মঙ্গলের প্রমাণ সময় পৃথিবীর প্রমাণ সময়ের তুলনায় অনেকটা এগিয়ে।
বিজ্ঞানীদের একাংশ বলছেন, অ্যাশবি এবং পাটলা নিজেদের গবেষণায় পৃথিবী বা মঙ্গলের কক্ষপথকে গুরুত্ব দেননি। এই দুই গ্রহের কক্ষপথও ভিন্ন। মঙ্গলের কক্ষপথ পৃথিবীর তুলনায় অনেক বেশি ডিম্বাকার। ওই বিজ্ঞানীদের দাবি, এই বিষয়টিকেও গুরুত্ব দিয়ে দেখা দরকার। এই কক্ষপথের কারণে মঙ্গলের মাধ্যাকর্ষণ শক্তির হেরফের হয়। সেই অনুসারে বছরের বিভিন্ন সময় মঙ্গলে ঘড়ি কাঁটার গতিরও হেরফের হওয়ার কথা বলেই মনে করেন ওই বিজ্ঞানীরা। বিজ্ঞানী পাটলা জানিয়েছেন, তাঁদের এই গবেষণা ভবিষ্যতের অনেক গবেষণার ভিত্তি মাত্র। ভবিষ্যতে এই গবেষণার উপর ভিত্তি করে মঙ্গলে ইন্টারনেট পরিষেবা চালু করা যেতে পারে।