আজ শাহি স্নান, জনসমুদ্রে বন্ধ অক্ষয়বট দর্শন

সকাল থেকেই কুম্ভনগরীর রাস্তায় গাড়ি বন্ধ, শুধুই চলমান জনসমুদ্র। পোঁটলা মাথায় দেহাতি নারী, ট্রলিব্যাগ টানা গেরুয়াধারী, ছাইমাখা নাগা সন্ন্যাসী কত যে মানুষ!

Advertisement

গৌতম চক্রবর্তী

ইলাহাবাদ শেষ আপডেট: ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০২:০৬
Share:

মৌনী অমাবস্যায় প্রয়াগসঙ্গমে স্নান সেরে, রাম-লক্ষ্মণ-সীতার অক্ষয়বট দেখতে পারবেন না তীর্থযাত্রীরা। ছবি: রয়টার্স।

এই প্রথম মৌনী অমাবস্যায় প্রয়াগসঙ্গমে স্নান সেরে, রাম-লক্ষ্মণ-সীতার অক্ষয়বট দেখতে পারবেন না তীর্থযাত্রীরা। রবিবার সকাল থেকে মাইকে পুলিশ এবং প্রশাসন অনবরত ঘোষণা করে চলেছে, ‘মাত্রাতিরিক্ত ভিড়ের কারণে, যাত্রীদের নিরাপত্তা বজায় রাখতে আগামী তিন দিন অক্ষয়বট দর্শন বন্ধ রাখা হল।’ মনে পড়ছে, ছয় বছর আগে পূর্ণকুম্ভের মৌনী অমাবস্যা স্নানেও নিরাপত্তা নিয়ে প্রবল উৎকণ্ঠা ছিল। তার আগের দিনই আফজল গুরুর ফাঁসি হয়েছিল। কিন্তু স্নান সেরে দুর্গের অভ্যন্তরে অক্ষয়বট, সরস্বতী কূপ দর্শনে অসুবিধা হয়নি। এ বার আফজল গুরু নেই, কিন্তু অর্ধকুম্ভকে ‘দিব্যকুম্ভ’ বানানোর জন্য মোদী-যোগীর প্রয়াস আপনা থেকেই ‘ব্যাকফায়ার’ করেছে।

Advertisement

সকাল থেকেই কুম্ভনগরীর রাস্তায় গাড়ি বন্ধ, শুধুই চলমান জনসমুদ্র। পোঁটলা মাথায় দেহাতি নারী, ট্রলিব্যাগ টানা গেরুয়াধারী, ছাইমাখা নাগা সন্ন্যাসী কত যে মানুষ! প্রশাসন তটস্থ। তাদের হিসাব, আজ রবিবার মধ্য রাতের মাহেন্দ্রক্ষণ থেকেই শুরু হয়ে যাবে স্নান। আগামী কাল, সোমবারই চূড়ান্ত পরীক্ষা, পুলিশ বলছে, ভিড় প্রায় তিন কোটি ছাড়িয়ে যাবে।

এত ভি়ড়, কারণ মৌনী অমাবস্যা বা মাঘ মাসের অমাবস্যাই প্রয়াগসঙ্গমে স্নানের মূল তিথি। সে ফি বছর পৌষপূর্ণিমা থেকে মাঘী পুর্ণিমা ইস্তক এক মাসের কল্পবাস, তিন মাসের অর্ধ বা পূর্ণকুম্ভ যাই হোক না কেন! তামাম উত্তর ভারত জানে, এ দিন মৌনতা বা নীরবতাকে মনে মনে পুজো করতে হয়, গীতা পাঠ করে ব্রাহ্মণকে দানদক্ষিণা দিতে হয়। সেই তিথি মেনেই আগামী কাল আখড়াগুলির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শাহি স্নান। ভারতীয় গণতন্ত্রেও এই দিনের অন্য তাৎপর্য আছে। ১৯৭৭ সালে প্রয়াগের পূর্ণকুম্ভে মৌনী অমাবস্যার স্নানের দিনই ইন্দিরা গাঁধী জরুরি অবস্থা তুলে নিয়েছিলেন।

Advertisement

গণতন্ত্র সাধুসমাজেও। স্নানের আগের দিন ১৪ নম্বর সেক্টরে নাগা সাধুদের আখড়ায় গিয়েছিলাম। প্রতিটি আখড়ার মাঝে তাঁদের নিজস্ব পতাকা ও উপাস্য দেবতা। জুনা আখড়ায় যেমন প্রধান উপাস্য দত্তাত্রেয়, নিরঞ্জনীতে কার্তিকেয়, মহানির্বাণীতে কপিল মুনি। কুম্ভের এই ক’দিন অস্থায়ী ছাউনিতে উপাস্য দেবতার ছবি আঁকা পতাকার কাছেই এঁদের ভল্ল, তরবারি থাকে। আগামী কাল সেই অস্ত্রকে স্নান করিয়েই এঁরা ঝাঁপিয়ে পড়বেন পুণ্যস্নানে। যোগী-মোদীরা ইলাহাবাদকে প্রয়াগরাজ বানিয়ে আর কত দূর এগোবেন?

যে নাগা সন্ন্যাসীরা প্রায় সারা বছর দল বেঁধে এখানে-সেখানে ঘুরে বেড়ান, তাঁদের বলে ‘জামাত’। যদুনাথ সরকার এবং তাঁর পরে কামা ম্যাকলিন, ম্যাথু ক্লার্ক অনেক ইতিহাসবিদই জানিয়েছেন, শঙ্করাচার্যের সঙ্গে দশনামী সন্ন্যাসীদের আদৌ সম্পর্ক নেই। এই নাগা সাধুদের সংগঠনগুলি সপ্তদশ-অষ্টাদশ শতকে তৈরি। সব কাজেই অকুতোভয়। ওয়ারেন হেস্টিংস তিব্বতের সঙ্গে বাণিজ্যের পথ খুলতে পুরণগিরি গোঁসাই নামে এক নাগা সাধুকে তিব্বতে পাঠিয়েছিলেন। তিনি পরে, তিব্বত ছাড়িয়ে চিনের সম্রাটের সঙ্গেও দেখা করে এসেছিলেন।

রামদেব যতই কুম্ভকে ‘তামাকবর্জিত ক্ষেত্র’ বানানোর সঙ্কল্প করুন, নাগা সাধুরা অনেকেই

গাঁজা খাচ্ছিলেন।

যা দেখে অনেকেরই মনে হতে পারে, প্রকৃত হিন্দু ধর্মে কোনও একমেবাদ্বিতীয়ম গুরু নেই। তিনি রামদেব বা যিনিই হন না কেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন