ভাগবতের অসন্তোষের মুখে মোদীর মন্ত্রীরা

এক বছর পর মোদী সরকারের নাজেহাল অবস্থা হতেই চেপে ধরতে শুরু করল সঙ্ঘ। দিল্লিতে সমন্বয় বৈঠকের প্রথম দিনেই সরকারের কাজে অসন্তোষ প্রকাশ করল আরএসএস। প্রশ্নের মুখে পড়তে হল নরেন্দ্র মোদী সরকারের মন্ত্রীদের।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৩ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০৩:৩২
Share:

এক বছর পর মোদী সরকারের নাজেহাল অবস্থা হতেই চেপে ধরতে শুরু করল সঙ্ঘ। দিল্লিতে সমন্বয় বৈঠকের প্রথম দিনেই সরকারের কাজে অসন্তোষ প্রকাশ করল আরএসএস। প্রশ্নের মুখে পড়তে হল নরেন্দ্র মোদী সরকারের মন্ত্রীদের।

Advertisement

দিল্লিতে সরসঙ্ঘচালক মোহন ভাগবতের উপস্থিতিতে আরএসএস ও বিজেপির সমন্বয় বৈঠক শুরু হয়েছে আজ। প্রথম দিনেই অরুণ জেটলি, রাজনাথ সিংহ, নিতিন গডকড়ী, মনোহর পর্রীকর, স্মৃতি ইরানির মতো মোদী সরকারের শীর্ষ নেতারা দক্ষিণ দিল্লিতে এক ভবনে সঙ্ঘের নেতাদের সঙ্গে দেখা করতে যান। সরকারের কাজের মূল্যায়ন করা হয় সেখানে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে সরকারের কাজকর্ম নিয়ে মানুষের অসন্তোষের কথাও মন্ত্রীদের জানান সঙ্ঘ নেতারা। তিন দিনের সমন্বয় বৈঠকের প্রথম দিনে জোর দেওয়া হয় মূলত দু’টি বিষয়ে। সেনাদের ‘এক পদ এক পেনশন’ নিয়ে অচলাবস্থা ও আর্থিক ক্ষেত্রে আশাব্যঞ্জক অগ্রগতি না হওয়া। কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরাও তাঁদের কাজের খতিয়ান তুলে ধরেন। সমন্বয় বৈঠকে সঙ্ঘের ১৫টি সহযোগী সংগঠনের প্রতিনিধিরাও ছিলেন। বিশ্ব হিন্দু পরিষদের পক্ষ থেকে তুলে ধরা হয় রামমন্দির না হওয়া নিয়ে হিন্দুদের হতাশার কথা। ঘণ্টা দশেক ধরে চলে এ দিনের বৈঠক।

সঙ্ঘ সূত্রে খবর, স্বয়ং মোহন ভাগবত আজ ‘এক পদ এক পেনশন’ নিয়ে অচলাবস্থা সম্পর্কে অসন্তোষ প্রকাশ করেন। অবসরপ্রাপ্ত সেনারা এখনও যে ভাবে রাস্তায় নেমে অনশন-বিক্ষোভ করছেন, সরকার কেন এই সঙ্কট মেটাতে পারল না— এ সব নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তিনি।

Advertisement

ভাগবত প্রস্তাব দেন, সেনারা পেনশন পর্যালোচনা নিয়ে যে দাবি তুলছেন, তা বাস্তবায়িত করার জন্য একটি কমিশন গঠন করে দিতে পারে সরকার। সেই কমিশনই সময় মতো পেনশনের হার পর্যালোচনা করবে। তাতে সরকারের উপর থেকে চাপ কমবে। জমি বিল নিয়ে সরকারের ভাবমূর্তি যে কৃষক-বিরোধী হয়ে গিয়েছে, দ্রুত তার পরিবর্তন ঘটাতে সরকারকেই তৎপর হতে হবে বলে দাবি তোলেন সঙ্ঘ নেতৃত্ব। কৃষিমন্ত্রী রাধামোহন সিংহকে এ দিন প্রায় জেরার মুখে পড়তে হয় সঙ্ঘের। কৃষি-ভিত্তিক শিল্পের প্রসারে এক বছরেও তেমন কোনও অগ্রগতি কেন হল না, তার জবাব চাওয়া হয়।

সঙ্ঘের নেতারা বিজেপির মন্ত্রীদের বলেছেন, আর্থিক উন্নয়ন ও সংস্কার হাতে হাত ধরে চলতে পারে। কিন্তু তৃণমূল স্তরের মানুষকে উপেক্ষা করে নয়। বিজেপির এক নেতার কথায়, ‘‘সঙ্ঘ নেতৃত্বও জানেন, নরেন্দ্র মোদীর সরকার পাঁচ বছরে সফল ভাবে কাজ করতে পারলে বিজেপি পরের নির্বাচনেও ফের দেশ চালানোর ভার পেতে পারে, ক্ষমতা দখল করতে পারে বেশির ভাগ রাজ্যে। তাতে সঙ্ঘেরও শ্রীবৃদ্ধি হবে।’’ এবং সেই কারণেই মোদী সরকার সম্পর্কে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষের যে মতামত ও প্রতিক্রিয়া সঙ্ঘ সদস্যরা পাচ্ছেন, সেগুলি সরকারের কাছে তুলে ধরা হচ্ছে। সরকারের ফাঁকফোকরগুলি যাতে বোজানো যায়।

কিন্তু ঘরোয়া আলোচনায় সঙ্ঘ ও বিজেপির অনেকেই কবুল করছেন, সমন্বয়ের লক্ষ্যে এ বারে এত বড় আয়োজনের পিছনে সঙ্ঘের অন্য লক্ষও রয়েছে। বিজেপি গত বছর বিপুল শক্তি নিয়ে ক্ষমতায় আসার পর থেকে এ পর্যন্ত সঙ্ঘ তেমন দাঁত ফোটাতে পারেনি। কিন্তু এখন মোদী সরকারের নাজেহাল অবস্থা হতেই আরএসএস সক্রিয় হতে শুরু করেছে।

কিন্তু কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরা যে ভাবে সার বেঁধে আরএসএসের দ্বারস্থ হচ্ছেন, তা নিয়ে কটাক্ষ করতে ছাড়ছেন না বিরোধীরা। সঙ্ঘের সঙ্গে বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীরও যাওয়ার কথা। আম আদমি পার্টি নেতা আশুতোষ সেই সূত্রে আজ বলেন, ‘‘নরেন্দ্র মোদী বলেছিলেন প্রধানমন্ত্রী হয়ে সঙ্ঘকে সরকারের দখল নিতে দেবেন না। সরকার সংবিধান মেনেই চলবে। যে ভাবে মন্ত্রীরা সঙ্ঘের কাছে মাথা ঠুকছেন, সেটাই তো সংবিধানের পরিপন্থী। রীতিমত হাস্যকর। সঙ্ঘ সরাসরি নাক গলাচ্ছে সরকারের কাজে।’’

সমন্বয় বৈঠক নিয়ে বিতর্ক দানা বাঁধছে বুঝে আরএসএসের প্রাক্তন মুখপাত্র রাম মাধব বৈঠক ভবনের বাইরে এসে সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘এখানে সরকারের কোনও মূল্যায়ন হচ্ছে না। এক পদ এক পেনশন কিংবা রামমন্দির নিয়েও কোনও আলোচনা হয়নি। এটি শুধুই মত আদান-প্রদানের বৈঠক।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন