facebook

ফেসবুক ছেড়ে আঁখি কি নেত্রীর অবতারে!

গত ন’বছর তিনি সংস্থার জন্য যে ভাবে কাজ করেছেন, এ দিনও তারা তাঁর প্রশংসা করেছে বিবৃতিতে। কিন্তু শেষমেশ ওই সমস্ত অভিযোগের চাপেই তাঁকে সরতে হল কি না, প্রশ্ন থাকছেই।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৮ অক্টোবর ২০২০ ০৩:৩৮
Share:

আঁখি দাস। ছবি:সংগৃহীত

কখনও তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, সংস্থার ব্যবসায়িক স্বার্থে বিজেপির সঙ্গে ‘গোপন’ আঁতাঁতের। সরকারকে চটাতে না-চাওয়ার কারণে বিজেপি নেতাদের বিরুদ্ধে ‘বিদ্বেষ-রোধ নিয়ম’ প্রয়োগে বাধা দেওয়ার। আবার কখনও ভোটে নরেন্দ্র মোদীর বিপুল জয়ে তিনি মুক্তকণ্ঠে উচ্ছ্বসিত। গত কয়েক মাস ভারতীয় রাজনীতির পেয়ালায় তুফান তোলার পরে অবশেষে ফেসবুক থেকে পদত্যাগ করলেন বিতর্কিত আঁখি দাস। যদিও একই সঙ্গে জিইয়ে রাখলেন এ বার একেবারে পুরোদস্তুর রাজনীতির ময়দানে নেমে পড়ার সম্ভাবনা! বিবৃতিতে ভারতে ফেসবুকের প্রধান অজিত মোহন জানিয়েছেন, আগামী দিনে জনসেবায় সময় দিতেই আমেরিকার ওই সোশ্যাল মিডিয়া বহুজাতিকের উঁচু পদ থেকে সরে দাঁড়াচ্ছেন আঁখি। ফলে ঘুরপাক খেয়েছে প্রশ্ন, এ বার কি তবে নতুন অবতারে তিনি নেত্রী?

Advertisement

২০১১ সালে ফেসবুকের ভারতীয় শাখায় যোগ দেওয়া আঁখির অন্যতম কাজই ছিল সরকারের সঙ্গে সংস্থার সম্পর্ক মসৃণ রাখা। সংস্থা ছাড়ার আগে পোশাকি পদ ছিল ভারত, দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়ায় সংস্থার পাবলিক পলিসির প্রধান। তাঁকে ঘিরে ঝোড়ো বিতর্কের শুরু অগস্টের মাঝামাঝি। আমেরিকার অন্যতম নামী দুই সংবাদমাধ্যমে রীতিমতো চমকে দেওয়া খবর ফাঁস হওয়ার পরে। খবরটি হল, ২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদী লোকসভা ভোটে জেতার পরে উচ্ছ্বসিত আঁখি কর্মীদের ই-মেলে লিখেছিলেন, “আমরা ওঁর সোশ্যাল মিডিয়ার প্রচার দাবানলের মতো ছড়িয়ে দিয়েছিলাম। বাকিটা ইতিহাস।” ২০১২ সালে গুজরাতে বিধানসভা ভোটের সময়েও নাকি বিজেপিকে সোশ্যাল মিডিয়ায় দড় করে তোলায় ভূমিকা ছিল প্রাক্তন ফেসবুক কর্ত্রীর।

অভিযোগ শুধু রাজনৈতিক পক্ষপাতের নয়, নিয়ম ভাঙারও। আমেরিকার সংবাদমাধ্যমকে উদ্ধৃত করেই কংগ্রেস, তৃণমূল-সহ বিরোধীদের অভিযোগ, বিজেপি নেতাদের বিদ্বেষমূলক লেখা-ছবি-ভিডিয়ো (কনটেন্ট) সরিয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে শিথিলতা দেখাতেন আঁখি। রেখে দেওয়া হত বহু উস্কানিমূলক কথাবার্তা। একই নীতি নেওয়া হত তাদের হোয়াটসঅ্যাপের বেলায়। অথচ হিংসায় ইন্ধন জোগানোর কারণ দেখিয়ে সরকার-বিরোধী অনেক পেজ মুছে দেওয়া হত ফেসবুক থেকে। আটকে দেওয়া হত হোয়াটসঅ্যাপ বার্তা। যা নিয়ে গত মাসে কংগ্রেস নেতা রাহুল গাঁধী বলেছিলেন, “ভারতের গণতন্ত্র এবং সামাজিক একতাকে নষ্ট করতে ফেসবুক ও হোয়াটসঅ্যাপের আক্রমণ নগ্ন হয়ে গিয়েছে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে।... এ নিয়ে অবিলম্বে তদন্ত হোক। শাস্তি হোক দোষীদের।”

Advertisement

আরও পড়ুন: ফেসবুক ছেড়ে আঁখি কি নেত্রীর অবতারে!

কংগ্রেস অভিযোগ তুলেছিল, অনলাইন কেনাকাটার বাজারে টাকা মেটানোর মাধ্যম হয়ে উঠতে চায় ফেসবুকের শাখা হোয়াটসঅ্যাপ। সরকারের অনুমোদন পেতে তারা শাসক দলের সঙ্গে গোপন বোঝাপড়ার পথে হাঁটছে। এটা বিপজ্জনক। এ নিয়ে ফেসবুক কর্ণধার মার্ক জ়াকারবার্গকে চিঠি দিয়েছিল কংগ্রেস-সহ একাধিক বিরোধী দল। গত মাসের গোড়ায় আঁখি, অজিতকে হাজিরা দিতে হয়েছিল সংশ্লিষ্ট সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সামনে।

আরও পড়ুন: সংক্রমণে রাশ, তবু মেয়াদ বাড়ল আনলক পাঁচের

সর্বসমক্ষে এ বিষয়ে আগাগোড়া আঁখির পাশে ফেসবুক। গত ন’বছর তিনি সংস্থার জন্য যে ভাবে কাজ করেছেন, এ দিনও তারা তাঁর প্রশংসা করেছে বিবৃতিতে। কিন্তু শেষমেশ ওই সমস্ত অভিযোগের চাপেই তাঁকে সরতে হল কি না, প্রশ্ন থাকছেই। ঠিক যেমন অনেকের জিজ্ঞাসা, পর্দার আড়াল থেকে বেরিয়ে আঁখি কি এ বার নিজেই ‘জনসেবার তাগিদে’ কোনও রাজনৈতিক দলে নাম লেখাবেন?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন