ভেঙে পড়া ব্রিজের ধ্বংসস্তূপ সরাচ্ছেন রেল বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের কর্মীরা। —পিটিআই
মুম্বইয়ে লোকাল ট্রেনে ভিড় সবে বাড়তে শুরু করেছে। ট্রেন চলছে নির্দিষ্ট গতিতে। আচমকাই একটি লোকাল ট্রেনের চালক দেখলেন, সামান্য দূরেই রেললাইনের উপরের ব্রিজ ধীরে ধীরে ঝুলে পড়ছে। সঙ্গে সঙ্গেই এমার্জেন্সি ব্রেক কষলেন চালক। ততক্ষণে হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়েছে ব্রিজ।
শ্বাসরুদ্ধকর। রোমহর্ষক। চালকের তৎপরতায় শেষপর্যন্ত দুর্ঘটনা ঘটেনি। ভাঙা ব্রিজের কয়েক মিটার আগেই ট্রেন দাঁড় করাতে পেরেছেন ওই চালক। কিন্তু যাত্রীরা হয়তো বুঝতেও পারেননি, কী ভয়ঙ্কর দুর্ঘটনার হাত থেকে রক্ষা পেয়েছেন তাঁরা। আর যখন জানতে পারলেন, তখন আঁতকে উঠেছেন সকলে। ইষ্টদেবতার সঙ্গে ধন্যবাদ দিয়েছেন লোকাল ট্রেনের চালক চন্দ্রশেখর সবন্তকেও। যিনি এখন কার্যত বীরের মর্যাদা পাচ্ছেন। সতর্কতার সঙ্গে ট্রেন চালানো এবং তাৎক্ষণিক বুদ্ধিতে এমার্জেন্সি ব্রেক কষা এই ট্রেন চালকের গল্প ফিরছে আম মুম্বইকরের মুখে মুখে।
ভয়ঙ্কর সেই অভিজ্ঞতার কথা পরে নিজেই শুনিয়েছেন চালক চন্দ্রশেখর। ‘‘অন্যান্য দিনের মতোই ট্রেন চালাচ্ছিলাম। কিন্তু আচমকাই দেখি সামনে রেললাইনের উপরের ব্রিজটা ধীরে ধীরে ঝুলে পড়ছে। সঙ্গে সঙ্গে এমার্জেন্সি ব্রেকে কষি। প্রাণপণে চেষ্টা করছিলাম, যাতে ভাঙা ব্রিজের ধ্বংসস্তূপের আগে যেন ট্রেনটা দাঁড় করাতে পারি।’’ —বললেন ১৯৯৭ সালে রেলে চালকের চাকরিতে যোগ দেওয়া চন্দ্রশেখর।
আরও পড়ুন: ১১ জানলা, ১১ রড, ১১ পাইপ, রহস্য কাটছে না ‘আত্মঘাতী’ ১১ জনকে নিয়ে!
এই ঘটনা সামনে আসার পর অনেকেরই মনে পড়ে যাচ্ছে আট বছর আগে সাঁইথিয়ায় ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনার কথা। ২০১০ সালের এই জুলাই মাসেই বনাঞ্চল এক্সপ্রেসের পিছনে উত্তরবঙ্গ এক্সপ্রেস ধাক্কা মারে। মৃত্যু হয় ৬৬ জনের। আহত হন ১৬৫ জন। তদন্তে উঠে আসে উত্তরবঙ্গ এক্সপ্রেসের চালক ঘুমিয়ে পড়ার জেরেই ওই দুর্ঘটনা ঘটে। অনেকেই মনে করছেন, চালক সতর্ক না থাকলে এবং এমার্জেন্সি ব্রেক না কষলে সাঁইথিয়ার মতো ভয়াবহ দুর্ঘটনাও ঘটে যেতে পারত।
আরও পড়ুন: ১০ দিন গুহায় আটকে, ক্ষীণ কণ্ঠ, মানুষ দেখেই খাবার চাইল তারা
মঙ্গলবার সকালে আন্ধেরি স্টেশনের রেললাইনের উপর দিয়ে যাওয়া ফুটব্রিজ ভেঙে পড়ে। ঘটনায় আহত হন ছ’জন। দুর্ঘটনার জেরে মুম্বইয়ে ট্রেন চলাচলে ব্যাপক প্রভাব পড়ে। এমনিতেই টানা বৃষ্টির জেরে বিপর্যস্ত মুম্বই। বহু রাস্তায় জল জমে যাওয়ায় ব্যাপক যানজটে নাভিশ্বাস উঠছে। তার সঙ্গে বাণিজ্যনগরীর লাইফ লাইন লোকাল ট্রেন কার্যত স্তব্ধ হয়ে যাওয়ায় দিনভর নাজেহাল হয়েছেন মুম্বইবাসী।