ভোট-চর্চার আঁচে পাহাড়ি ট্রেনযাত্রা

জানলা দিয়ে ওঁরা হুড়মুড়িয়ে ঢোকার সময়ে খেয়াল করিনি। পরে বিড়ির গন্ধে নজর গিয়েছে কয়েক বার। একই শালে জাপটাজাপটি দু’জন।

Advertisement

দিগন্ত বন্দ্যোপাধ্যায়

শিমলা শেষ আপডেট: ২৮ অক্টোবর ২০১৭ ০৩:০৮
Share:

ছয় কামরার ঠাসাঠাসি ‘সংসার’। ঐতিহ্য বেয়ে চড়ছে পাহাড়ে। জানলা দিয়ে ওঁরা হুড়মুড়িয়ে ঢোকার সময়ে খেয়াল করিনি। পরে বিড়ির গন্ধে নজর গিয়েছে কয়েক বার। একই শালে জাপটাজাপটি দু’জন। এ বার বলিউডি কিস্সা শুনে কানও গেল সে দিকে।

Advertisement

—‘‘এ সব শাহরুখ খানের কম্মো। নেতাদের পেছন পেছন ঘোরে।’’

—‘‘যাচ্চলে শাহরুখ এল কোথা থেকে? এ কাজ সলমনের। মোদীর সঙ্গে ঘুড়ি ওড়াতে ওড়াতে ভোকাট্টা।’’

Advertisement

—‘‘শাহরুখ-সলমন সব এক। সলমনের বোনের বিয়েতে দেখিসনি? দু’জনের গলাগলি! যত ঝগড়া বাইরে। তলে তলে সব সেটিং।’’

ব্রিটিশদের হাতে গড়া ‘খেলনা রেল’ তখন কালকা থেকে আঁকাবাঁকা পথ ধরেছে। পাহাড়ের ঘুম ভাঙতেও ঢের দেরি। শীত যত বাড়ছে, বাড়ছে আলোচনার উত্তাপও। ভোট-মরসুম। একটু পরেই বোঝা গেল, তর্কটা আসলে প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সুখরামের ছেলের সদ্য কংগ্রেস ছেড়ে বিজেপিতে যাওয়া নিয়ে। সেই সূত্রেই শাহরুখ-সলমনকে নিয়ে টানাটানি। সুখরামের পুত্র অনিল শর্মার ছেলের সঙ্গে বিয়ে হয়েছে সলমনের বোন অর্পিতার। নরেন্দ্র মোদীকে বলে রাজনীতির এই ‘সেটিং’টা কোন ‘খান’ করেছেন— কথা চলছে তা নিয়েই।

সুখরামের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ। আর অনিলের পোস্টারে নাকি মোদী-অমিত শাহের সঙ্গে শুধু সুখরামেরই ছবি। তা নিয়েই তুলকালাম। তর্ক এখন গড়িয়েছে, “না খায়েঙ্গে, না খানে দেঙ্গে স্লোগান কোথায় গেল? রাজাসাহেবই বা কী দোষ করলেন?” ‘রাজাসাহেব’ মানে মুখ্যমন্ত্রী বীরভদ্র সিংহ। যাঁর মেয়ের বিয়ের পিঁড়িতে হাজির হয়েছিল সিবিআই। আর এখনও দিল্লিতে তাঁকে দৌড় করাচ্ছেন ‘মোদীর’ গোয়েন্দারা।

ভোরের প্রথম আলো যখন জানলার কাচে, ট্রেন তখন সোলন ছেড়েছে। কামরার টিমটিমে আলোয় আবছা মুখগুলো এখন স্পষ্ট। আলোচনা গড়াচ্ছে সোলনের শ্বশুর-জামাইয়ের লড়াই নিয়ে। শ্বশুর ধনীরাম শান্ডিল কংগ্রেসের বিধায়ক। বিজেপি তাঁরই জামাই রাজেশ কাশ্যপকে টিকিট দিয়েছে।

পরের স্টেশন কান্দাঘাটে চা আসতেই আলাপটা সেরে ফেলা গেল। সোহন লাল আর হুকুমচন্দ্র। দুজনেরই ছোটখাটো ব্যবসা শিমলায়। ফিরছেন চণ্ডীগড় থেকে। প্রশ্নটা করেই ফেললাম— হিমাচলে জিতবে কে? সোহনলাল বললেন, “এখনও ফিফটি-ফিফটি। জিএসটি না হলে বলে দিতাম, বিজেপি জিতছেই। ’৯০ থেকে এক বার কংগ্রেস, এক বার বিজেপি জিতেছে। এ বার…” কথা শেষ না হতেই হুকুমচন্দ্র বললেন, “এক বার রাজাসাহেব বলে দিন, শেষ লড়াই লড়ছেন— খেলা ঘুরে যাবে।”

জনমত সমীক্ষা তো বলছে, বিজেপিরই পাল্লা ভারী? “দেখুন বিজেপি বলছে, রাজাসাহেবের গয়না স্ত্রীর থেকে বেশি। যে দুর্নীতি নিয়ে এত হল্লা, তার অঙ্ক নামমাত্র। রাজার কাছে সেটা কী? আর উন্নয়নটা দেখবেন না?” হুকুমের কথা কেটে সোহন বলে ওঠেন, “উন্নয়ন যেটুকু, সব গত বছরে। আর গুড়িয়া?” গুড়িয়া-গণধর্ষণ হিমাচলের ভোটে অন্যতম স্পর্শকাতর বিষয়। যা নিয়ে প্রশ্নের মুখে বীরভদ্র। সোহন বলে চলেন, “৯ নভেম্বর ভোট। প্রেমকুমার ধুমলের কাছে ৯ ‘লাকি নম্বর’। মোবাইল থেকে গাড়ি— সব ৯ দিয়ে রাখেন। তাঁকে সামনে রেখেই গত পুরভোট বিজেপি জিতেছে। অথচ বিজেপি তাঁকেই মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেনি! জে পি নড্ডাও কলকাঠি নাড়ছেন।”

পাঁচ ঘণ্টার পেরিয়ে শিমলা এল ট্রেন। দরজা খুলতেই কনকনে হাওয়া। গোটা পথে ট্রেন তত বাঁক নেয়নি, যত না আলোচনায় হিমাচলের রাজনীতি।

জিতছে কে? সফরসঙ্গীরা বলে গেলেন, “এখনও দশ দিন বাকি। এ হিমাচলের জনতা। সকলেই ওস্তাদ। তাদের মার হয় শেষ রাতে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন