পহেলগাঁও হামলার ছবি প্রকাশ করেছে টিআরএফ, দাবি রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদের জঙ্গি নিষেধাজ্ঞা কমিটির। —ফাইল চিত্র।
রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদের সন্ত্রাসবাদী নিষেধাজ্ঞা কমিটির নজরে লশকর-এ-ত্যায়বার (এলইটি) ছায়া সংগঠন ‘দ্য রেজ়িস্ট্যান্স ফ্রন্ট’ (টিআরএফ)। এই সংগঠনকে কি রাষ্ট্রপুঞ্জের তরফে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হবে? সেই নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছে। নিষেধাজ্ঞা কমিটির পর্যবেক্ষক দল একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। সেই রিপোর্টে উল্লেখ, পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলার দায় দু’বার স্বীকার করেছে টিআরএফ। শুধু তা-ই নয়, জঙ্গি হামলার পর পহেলগাঁওয়ের ছবিও প্রকাশ করেছে ওই সংগঠন। পাশাপাশি, ওই পর্যবেক্ষক দল এ-ও দাবি করেছে, লশকর-এ-ত্যায়বার সমর্থন ছাড়া পহেলগাঁওয়ে হামলা ঘটত না।
পর্যবেক্ষকদের দেওয়া রিপোর্টে পহেলগাঁও কাণ্ড নিয়ে একের পর এক বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে। রিপোর্টে বলা হয়েছে, ‘‘পহেলগাঁও হামলার পর পরই তার দায় স্বীকার করে টিআরএফ। এক বার নয়, দু’বার তারা দায় স্বীকার করেছিল। যদিও হামলার দাবি টিআরএফ ২৬ এপ্রিল প্রত্যাহার করে নেয়। তার পরে এই গোষ্ঠী আর কোনও মন্তব্য বা বিবৃতি দেয়নি।’’ পর্যবেক্ষক দলে থাকা রাষ্ট্রপুঞ্জের এক সদস্যদেশের প্রতিনিধি বলেছেন, ‘‘লশকর-এ-ত্যায়বার সমর্থন ছাড়া এই হামলা সম্ভব ছিল না। লশকর এবং টিআরএফের মধ্যে সম্পর্ক ছিল।’’ অন্য এক সদস্যদেশ রিপোর্টে দাবি করেছে, লশকরের সমর্থক টিআরএফ এই হামলা (পহেলগাঁও জঙ্গি হামলা) চালিয়েছে। তবে ওই রিপোর্টে এক সদস্যদেশ পহেলগাঁও কাণ্ডে লশকরের যোগ সম্পর্কিত মতামতগুলি প্রত্যাখ্যান করে। বর্তমানে রাষ্ট্রপুঞ্জের তালিকায় ১২৬৭টি নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠনের নাম রয়েছে।
গত ২২ এপ্রিল জম্মু-কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে জঙ্গিদের গুলিতে নিহত হন ২৬ জন পর্যটক। লশকরের ছায়া সংগঠন টিআরএফ প্রথমে পহেলগাঁওয়ের জঙ্গিহানার দায় স্বীকার করেছিল। পরে আবার নিজেদের বক্তব্য পরিবর্তন করে একটি নতুন বিবৃতি প্রকাশ করে তারা। নতুন বিবৃতিতে টিআরএফ জানায়, পহেলগাঁও কাণ্ডে তাদের কোনও যোগ নেই। প্রথমে স্বীকার করেও পরে সেই দায় অস্বীকার করাকে কেন্দ্র করে নানা প্রশ্নও উঠতে শুরু করে। পহেলগাঁও কাণ্ডের পর ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনার পরিস্থিতিতে রুদ্ধদ্বার বৈঠকে বসে রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদ। সেই বৈঠকে পাকিস্তানের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, পহেলগাঁওয়ের ওই ঘটনায় লশকর-এ-ত্যায়বার কোনও যোগ রয়েছে কি না। তবে পাকিস্তানের বিদেশমন্ত্রী ইশাক দার পরে দাবি করেছিলেন, হাফিজ় সইদের লশকরের সঙ্গে টিআরএফের কোনও যোগ নেই। কারণ বহু বছর আগে সেই লশকর সংগঠন নির্মূল করেছে পাকিস্তান। উল্লেখ্য, টিআরএফ-কে ইতিমধ্যেই বিদেশি সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীর তকমা দেওয়া হয়েছে। পহেলগাঁও কাণ্ডের পর রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদের জঙ্গি নিষেধাজ্ঞা কমিটির কাছে পাকিস্তানের জঙ্গি সংগঠন টিআরএফ-এর কার্যকলাপ নিয়ে বিস্তারিত নথি দিয়েছিল ভারতও।
২০১৯-এ টিআরএফের উত্থান। সংবিধান থেকে ৩৭০ অনুচ্ছেদ বিলোপ হওয়ার পর লশকরের ‘ছায়া সংগঠন’ হিসাবে উঠে আসে টিআরএফ। নয়াদিল্লির বক্তব্য, এদের মূল লক্ষ্য, কাশ্মীরে স্থিতাবস্থায় বিঘ্ন ঘটানো। তার জন্য নাশকতামূলক কাজকর্মের পুনর্বিন্যাস করার চেষ্টা শুরু করেছে এই জঙ্গিগোষ্ঠী।