প্রতীকী ছবি।
শাসক-বিরোধী যুদ্ধে ঝুলে রইল তাৎক্ষণিক তিন তালাক বিলের ভাগ্য। তবে বিজেপির শরিক ও বন্ধু-দলগুলিকে ভাঙিয়ে বিলটিকে রাজ্যসভার সিলেক্ট কমিটিতে পাঠানোর পথ অনেকটাই প্রশস্ত করল বিরোধীরা। সংসদ অধিবেশনের শেষ দু’দিনে বিরোধীদের সেই কৌশল ভেস্তে দেওয়ার ফন্দিই এখন আঁটছে সরকার পক্ষ।
লোকসভায় তিন তালাক বিল পাশের পরে আজ ছিল রাজ্যসভার পালা। মুসলিম মহিলাদের রাজ্যসভার গ্যালারিতে এনে মহল সাজিয়ে রেখেছিল শাসক পক্ষ। চেয়েছিল, বিরোধীরা বিলটির বিরোধিতা করলেই সরকার চোখে আঙুল দিয়ে দেখাবে, কারা বিলের বিরোধী। সেই চেষ্টাও হয়েছে। কংগ্রেসের আনন্দ শর্মা এবং তৃণমূলের সুখেন্দুশেখর রায় বিলটিকে সিলেক্ট কমিটিতে পাঠানোর প্রস্তাব আনেন। প্রবল আপত্তি তোলেন অরুণ জেটলিরা। কিন্তু চেয়ারম্যান বেঙ্কাইয়া নায়ডুর অনুপস্থিতিতে সেই প্রস্তাব গ্রহণ করেন ডেপুটি চেয়ারম্যান পি জে কুরিয়েন। সরকারের আপত্তির জেরে বিরোধীরা ভোটাভুটির দাবি তোলে। ভোটের ভয়ে সরকার পক্ষ তখন নিজেরাই হট্টগোল করে মুলতুবি করিয়ে দেয় রাজ্যসভা।
ফলে এখন বিকল্প তিনটি। এক, বিরোধীদের চাপে নতিস্বীকার করে বিলটিকে সিলেক্ট কমিটিতে পাঠাতে রাজি হওয়া। দুই, ভোটাভুটিতে হার মেনে (যে হেতু রাজ্যসভায় সরকারের সংখ্যাগরিষ্ঠতা নেই) সেটিকে সিলেক্ট কমিটিতে পাঠানো। অথবা তৃতীয় বিকল্প, বিরোধী শিবিরে যখন সাংসদ কম থাকবেন, এমন একটি সময়ে ভোটাভুটি করে বিরোধীদের হারিয়ে বিলটিকে পাশ করিয়ে নেওয়া। কারণ, সরকারের ঘোষিত অবস্থান, মুসলিম মহিলাদের স্বার্থে বিলটিকে সিলেক্ট কমিটিতে না পাঠিয়ে লোকসভার মতো এখনই বিলটি পাশ করিয়ে নিতে হবে।
আরও পড়ুন: তিন তালাক বিলে নয়, মমতার আপত্তি পদ্ধতিতে
জেটলি আজ বলেন, ‘‘সিলেক্ট কমিটিতে পাঠানোর ব্যাপারে বিরোধীদের প্রস্তাব গৃহীত হলেও সেটি ভুলে ভরা। শুধু বিরোধী দলের সাংসদদের নাম আছে প্রস্তাবিত কমিটিতে। শাসক দলের কারও নাম নেই। সংসদের ইতিহাসে এমন ঘটনা ঘটেনি। মহিলাদের স্বার্থ-বিরোধী ভূমিকা পালন করল বিরোধী দলগুলি।’’ ও দিকে, গুলাম নবি আজাদ থেকে ডেরেক ও’ব্রায়েনদের যৌথ মত— তাঁরা তাৎক্ষণিক তিন তালাক প্রথা বন্ধের পক্ষে। কিন্তু সরকার যে বিল এনেছে, সেটি আরও শক্তপোক্ত করা দরকার। সেই কারণেই পাঠানো দরকার সিলেক্ট কমিটিতে। আর এই মত বিজেপির শরিক টিডিপি, বন্ধু দল এডিএমকে-রও। তাদের দলের সাংসদের নামও আছে প্রস্তাবিত সিলেক্ট কমিটিতে।
মহারাষ্ট্রের দলিত নিগ্রহের আঁচ আজ দিল্লি ও সংসদে ছড়িয়ে পড়ায় এমনিতেই একটু ব্যাকফুটে ছিল শাসক দল। তার উপরে তিন তালাক নিয়ে বিরোধীদের এই কৌশলে তারা আরও নড়বড়ে। লোকসভা স্তব্ধ করিয়ে রাজ্যসভায় সব মন্ত্রীদের নামিয়ে দিয়েও শেষরক্ষা হল না। অগত্যা ‘বিরোধীরাই বিল আটকাচ্ছে’ বলে প্রচার করবে বিজেপি। বিরোধীদের মতে, বিজেপি কতটা মুসলিম-দরদি, তা সকলেই জানে। এই বিলের অছিলায় আধুনিক হিন্দুদের মনও টানতে পারবে না তারা।