Coromandel Express accident

প্যানেল বোর্ডকে ‘ধোঁকা’ দিয়ে পয়েন্ট, সিগন্যাল কী ভাবে ‘ভিন্নমুখী’? সিবিআইয়ের নজরেও অন্তর্ঘাত!

মঙ্গলবার সকালে সিবিআইয়ের এক যুগ্ম অধিকর্তার নেতৃত্বে ১০ জনের দল ঘটনাস্থলে পৌঁছন। স্টেশন মাস্টারের অফিস ও সিগন্যাল সিস্টেম খতিয়ে দেখেন তাঁরা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বাহানগা ও কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ জুন ২০২৩ ০৯:২১
Share:

করমণ্ডলের দুর্ঘটনাস্থলে সিবিআইয়ের আধিকারিকরা। ছবি: পিটিআই। —নিজস্ব চিত্র।

করমণ্ডল-কাণ্ডের তদন্তে নেমে রেল মন্ত্রকের নির্দেশে ওড়িশার বালেশ্বর থানায় আগেই এফআইআর দায়ের করেছে রেল পুলিশ। মঙ্গলবার তার ভিত্তিতেই নিজেদের তরফ থেকে মামলা (কেস) দায়ের করে তদন্ত শুরু করল সিবিআই। যাদের হাতে এই দুর্ঘটনার তদন্তভার দেওয়া নিয়ে রাজনৈতিক বিতর্ক হয়েছে বিস্তর।

Advertisement

শুরু থেকেই রেলের বক্তব্য, করমণ্ডলের জন্য আপ মেন লাইনের সিগন্যাল সবুজ থাকলেও, পয়েন্টের অভিমুখ খোলা ছিল লুপ লাইনের দিকে। তাতে ঢুকে পড়েই সেখানে দাঁড়িয়ে থাকা মালগাড়িতে আছড়ে পড়েছিল ট্রেনটি। যা কোনও মতেই হওয়ার কথা নয়। রেলকর্তাদের মতে, ইন্টারলকিং সিস্টেমে কী ভাবে এই ‘বিচ্যুতি’ হল কিংবা তাতে কারও হাত ছিল কি না, তা খতিয়ে দেখা জরুরি। এ দিন কার্যত সেই কথাই শোনা গিয়েছে এক সিবিআই আধিকারিকের মুখে। ওই তদন্তকারী অফিসারের কথায়, ‘‘করমণ্ডল এক্সপ্রেস মেন লাইনের বদলে কী ভাবে লুপ লাইনে চলে গেল, প্রাথমিক ভাবে তা-ই খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তদন্তের আওতায় আসতে পারে অন্তর্ঘাতের বিষয়টিও।’’

এ দিন সকালে সিবিআইয়ের এক যুগ্ম অধিকর্তার নেতৃত্বে ১০ জনের দল ঘটনাস্থলে পৌঁছন। স্টেশন মাস্টারের অফিস ও সিগন্যাল সিস্টেম খতিয়ে দেখেন তাঁরা। ওই দিনের কর্তব্যরত রেল-আধিকারিক ও কর্মীদের জিজ্ঞাসাবাদ করতে নামের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। সিবিআই সূত্রের খবর, বালেশ্বরে একটি অস্থায়ী শিবির খোলা হবে। তদন্ত প্রক্রিয়া পরিচালনা করা হবে দিল্লির সদর দফতর ও ভুবনেশ্বরের আঞ্চলিক দফতর থেকে।

Advertisement

সিবিআইয়ের এক কর্তার কথায়, ‘‘দুর্ঘটনার সময়ে বাহানাগা বাজার রেল স্টেশনের কাছে সিগন্যাল ব্যবস্থায় ‘বিচ্যুতি’ কী ভাবে হল, ওই দিন কোন কর্মী কী ধরনের দায়িত্বে ছিলেন, তা খতিয়ে দেখা হবে। সমস্ত কর্মীকে জিজ্ঞাসাবাদের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।’’ রেলের জয়েন্ট সেফটি কমিশনের রিপোর্ট ইতিমধ্যেই খতিয়ে দেখা হয়েছে বলে জানান তিনি। এক সিবিআই কর্তা জানান, প্রযুক্তিগত বিষয়গুলি রেল-অফিসারদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে তদন্ত করা হবে।

যে পয়েন্টের অভিমুখ ঠিক না থাকা নিয়ে যাবতীয় বিতর্ক, স্টেশনের মুখেই আপ লুপ লাইনের সঙ্গে আপ মেন লাইনের সেই ১৭-এ নম্বর পয়েন্টের সামনে গিয়ে তা খতিয়ে দেখে সিবিআইয়ের দল। দক্ষিণ-পুর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক আদিত্য চৌধুরী বলেন, “স্টেশনের রিলে রুম ও প্যানেল রুমের সমস্ত তথ্য আমরা সুরক্ষিত রেখেছি।”

এ দিন অবশ্য রিলে রুম বন্ধই ছিল। তা খোলার আর্জি জানায়নি সিবিআই। বাইরে থেকে ওই রিলে রুমে চোখ বুলিয়ে প্যানেল রুমে যায় সিবিআই। সেখানে থাকা প্যানেল বোর্ড থেকে সেট করা হয় পয়েন্ট। যার যাবতীয় ‘হার্ডওয়্যার’ থাকে রিলে রুমে। এই পুরো প্রক্রিয়াই ইন্টারলকিং সিস্টেম নামে পরিচিত।

ছোট স্টেশন হলেও, বাহানাগা বাজারে রয়েছে আধুনিক ইলেকট্রনিক ইন্টারলকিং সিস্টেম। যাতে পয়েন্ট না বদলে মেন লাইনের সিগন্যাল সবুজ হওয়ারই কথা নয়। অথচ ঠিক সেটাই হয়ে যাওয়ায় এই দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে ইঙ্গিত রেলের যুগ্ম তদন্ত রিপোর্টে।

প্রশ্ন উঠেছে, এমন ঘটনা প্যানেলে ধরা পড়ল না কেন? সম্ভবত এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতেই এ দিন প্যানেল রুমে দীর্ঘক্ষণ কাটান সিবিআইয়ের তদন্তকারীরা। বোঝার চেষ্টা করেন, কী ভাবে কাজ করে প্যানেল বোর্ড। তাকে ‘ধোঁকা’ দিয়ে সিগন্যাল এবং পয়েন্ট ‘ভিন্নমুখী’ হল কী ভাবে?

সিবিআই অফিসারেরা এ দিন জিজ্ঞাসাবাদ করেন বাহানাগা বাজার স্টেশনের ম্যানেজার এস কে পট্টনায়েককে। যদিও তাঁর দাবি, সে দিন তিনি স্টেশনে ছিলেন না। দুর্ঘটনার দিনে ওই প্যানেল বোর্ডের দায়িত্ব সামলাচ্ছিলেন সহকারী স্টেশন মাস্টার এস বি মোহান্তি।

এরই মধ্যে, রিলে রুমের নিরাপত্তা আরও নিশ্ছিদ্র করতে দেশের সব ডিআরএম-কে নির্দেশ দিয়েছে রেল বোর্ড। এ দিন খড়্গপুরে তদন্ত চালিয়েছে কমিশনার অব রেলওয়ে সেফটির সাত সদস্যের দলও। যার নেতৃত্বে রয়েছেন রেলের সেফটি কমিশনার (দক্ষিন-পূর্ব জ়োন) এ এম চৌধুরী। তাঁরা খড়্গপুরে বহু রেলকর্মী ও আধিকারিককে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন। জানতে চেয়েছেন, মালগাড়ি কোন রুটে চলছিল? কতক্ষণ তা বাহানাগা বাজার স্টেশনে অপেক্ষা করছিল? কেন তা দাঁড়িয়েছিল? কেন যশবন্তপুর এক্সপ্রেস দেরিতে চলছিল? এ এম চৌধুরী বলেন, “এখনও পর্যন্ত ২৫ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। আমরা খবরের কাগজে বিজ্ঞাপন দিয়েছিলাম, যদি কোনও স্থানীয় মানুষ এসে আমাদের কিছু জানাতে চান, তবে জানাতে পারেন। কেউ আসেননি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন