Tripura

প্রচারে গেরুয়া ঝড়, প্রদীপ আগলাতে মরিয়া মানিক

দীর্ঘ ভাষণে মুখ্যমন্ত্রীর গলায় উঠে আসছিল, উপজাতি এলাকায় উন্নয়নের সবিস্তার খতিয়ান। বিজেপি-কে পাল্টা আক্রমণ করে মুখ্যমন্ত্রী বলছিলেন, ওদের উদ্দেশ্য, উপজাতি ও বাঙালিদের আলাদা করা।

Advertisement

তাপস সিংহ

আগরতলা শেষ আপডেট: ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ১৪:৫০
Share:

মানিক ও তাঁর দল কি পারবেন শিখা বাঁচিয়ে রাখতে? ত্রিপুরার নির্বাচনী লড়াই জন্ম দিয়েছে টানটান এক নয়া চিত্রনাট্যের! ফাইল চিত্র।

ভরদুপুরের মান্দাই রোডের দু’পাশের শাল-সেগুনের জঙ্গল চোখের বড় আরাম দিল। সমাজভিত্তিক বনসৃজন নয়, একেবারে স্বাভাবিক। আগরতলা শহর ছাড়িয়ে এখানে ঢুকেই বুনো গন্ধ নাকে যেতে ভোট-ভোট গন্ধটা ভুলে যেতে ইচ্ছে করে। অথচ, এই ভোটের টানেই তো উত্তর-পুবের এ রাজ্যে পা রাখা।

Advertisement

সংরক্ষিত মান্দাইনগর কেন্দ্রে সিপিএম প্রার্থী মনোরঞ্জন দেববর্মার সমর্থনে জনসভা চলছে সিপিএমের। প্রধান বক্তা মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার। সভা শুরু হতে তখনও বেশ খানিকটা দেরি। মান্দাই গুরুমণি স্টেডিয়ামের মাঠে আসা ইস্তক লাল টুপি ও লাল গেঞ্জি পরা সিপিএমের ক্যাডার বাহিনী চোখে পড়ছে। কে কোথায় কোন দায়িত্বে থাকবেন, আলোচনা চলছে তার। উপজাতি এলাকা এই মান্দাই।

এবং সেই মান্দাই, যেখানে গত ২০ সেপ্টেম্বর স্থানীয় টিভি চ্যানেলের সাংবাদিক শান্তনু ভৌমিককে নৃশংস ভাবে খুন করা হয়। অভিযোগের আঙুল ওঠে উপজাতীয় সংগঠন ইন্ডিজেনাস পিপল’স ফ্রন্ট অব ত্রিপুরা’র (আইপিএফটি) কিছু কর্মী-সমর্থকের দিকে। এই আইপিএফটি’র সঙ্গে জোট বেঁধেই ত্রিপুরায় এ বারের বিধানসভা নির্বাচনে লড়ছে বিজেপি।

Advertisement

রঙিন মিছিল আর ককবরক ভাষায় গান যেন সেই খুনের ভয়াল স্মৃতিকে কিছুটা হলেও ফিকে করে দিচ্ছে। অসংখ্য মহিলা মিছিলে পা মিলিয়েছেন, সভা শুনেছেন, ভিড় করেছেন মাঠের এ দিক-ও দিক। হাল্কা মেঘলা আকাশ যেন ক্যাডারদের লাল টুপি আর গেঞ্জিকে আরও উজ্জ্বল করে তুলছে।

তবে, এ তো বহিরঙ্গে। এমনিতেই সামগ্রিক ভাবে উপজাতীয় এলাকার সংরক্ষিত ২০টি আসন নিয়ে এ বারে মাথাব্যথা আছে সিপিএমের। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বিজেপি-র সুতীব্র আক্রমণ। মুখ্যমন্ত্রী মানিকবাবুর বিরুদ্ধে তো ব্যক্তিগত আক্রমণ শানাচ্ছে বিজেপি। প্রশ্ন তুলছে তাঁর ভাবমূর্তি নিয়ে। এর জবাবে গোটা রাজ্যে, বিশেষ করে উপজাতীয় এলাকায় উন্নয়নের খতিয়ান তুলে ধরছেন সিপিএম নেতারা। বলছেন সাম্প্রদায়িক হানাহানির কথা। যেমন, সিপিএম প্রার্থী মনোরঞ্জন দেববর্মা আনন্দবাজার ডিজিটালকে বললেন, ‘‘বিজেপি এবং আইপিএফটি-র এই জোটকে মানুষ ভাল চোখে দেখছেন না। বিজেপি-ই আসলে দেশের উপজাতীয়দের শত্রু। ওরা দ্বিচারিতা করছে।’’ বক্তৃতায় মানিক সরকারও বিজেপি-কে তীব্র আক্রমণ করে বলছেন, এখানে ওরা সরকার পাল্টানোর কথা বলছে? আরে, দিল্লিতেই না সরকার পাল্টে যায়! ২০১৯ তো আর দেরি নেই। দীর্ঘ ভাষণে মুখ্যমন্ত্রীর গলায় উঠে আসছিল, উপজাতি এলাকায় উন্নয়নের সবিস্তার খতিয়ান। বিজেপি-কে পাল্টা আক্রমণ করে মুখ্যমন্ত্রী বলছিলেন, ওদের উদ্দেশ্য, উপজাতি ও বাঙালিদের আলাদা করা।

আরও পড়ুন: ৩০ ঘণ্টা পর জঙ্গি মুক্ত সেনা ঘাঁটি, হত ৫ সেনা, ৪ জঙ্গি

তবে, জনসভা যা-ই বলুক না কেন, নির্বাচনের আঁচ ছড়িয়েছে সর্বত্র। সিপিএমের লাল পতাকার সঙ্গে পাল্লা দিচ্ছে বিজেপির পতাকা আর ফেস্টুন। শনিবার সকালে আগরতলা এয়ারপোর্ট থেকে শহরে আসার পথে চোখে পড়ছিল এই টক্কর। এয়ারপোর্টের অ্যারাইভাল লাউঞ্জে দেখা হয়েছিল সিপিএম সাংসদ মহম্মদ সেলিমের সঙ্গে। বললেন, ‘‘সংসদের অধিবেশন চলছিল বলে এর আগে আসতে পারিনি। আছি কয়েকটা দিন।’’

আরও পড়ুন: প্রতিবেশীদের ক্ষেত্রে ডোভাল কি ডোবালেন

হোটেলের লাউঞ্জেও থিকথিকে ভিড়। বিজেপি-র হয়ে প্রচারে কে নেই! প্রচুর কর্মকর্তার মাঝেই এক দিকে বসে ঝাড়খণ্ডের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী অর্জুন মুন্ডা। আছেন পশ্চিমবঙ্গ থেকে আসা বিজেপি নেত্রী লকেট চট্টোপাধ্যায়। লকেট অবশ্য মাত্র দু’দিনের জন্য এসেছিলেন। ছেলের পরীক্ষার জন্য ফিরে যেতে হচ্ছে। শুধু আগরতলা কেন, গোটা ত্রিপুরা দেখছে বিজেপি-র হেভিওয়েট নেতাদের আনাগোনা আর তৎপরতা। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, দলীয় সভাপতি অমিত শাহ, কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি, বাদ যাচ্ছেন না কেউ! হেলিকপ্টার, প্রাইভেট জেট, অসংখ্য কনভয়ের আনাগোনা— এই ত্রিপুরা মেলে ধরছে তার সম্পূর্ণ অন্য চেহারা।

উল্টো দিকে, সাদা পাঞ্জাবি-পায়জামা আর গলায় মাফলার পরিহিত সাদা চুলের এক চেহারাকে সামনে রেখে রণভূমিতে অবতীর্ণ একটানা পঁচিশ বছর ক্ষমতায় থাকা বামফ্রন্ট তথা সিপিএম। গোটা দেশে ভিন্ন রঙের ঝড়ের মুখে এই ত্রিপুরায় সে যেন টিমটিমে এক প্রদীপ। তার শিখাকে দু’হাতে আগলে রাখার মরিয়া চেষ্টা চলছে।

মানিক সরকার ও তাঁর দল কি পারবেন সে শিখা বাঁচিয়ে রাখতে?

কোনও সন্দেহ নেই, ত্রিপুরার এই নির্বাচনী লড়াই জন্ম দিয়েছে টানটান এক চিত্রনাট্যের!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন