বেসরকারি অর্থলগ্নি সংস্থা ‘রিলেশন’-এর দুই কর্ণধারকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। কাল গভীর রাতে করিমগঞ্জের বাড়ি থেকে তাঁদের গ্রেফতার করে শিলচরে নিয়ে আসা হয় তাঁদের। আজ আদালতে তোলা হলে বিচারক তাঁদের পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন।
সুদীপ্ত সেনের সঙ্গে এই দুই লগ্নি-কর্তার যথেষ্ট মিল রয়েছে। সুদীপ্ত সেন গড়েছিলেন সারদা কোম্পানি। অরুণাভ ভট্টাচার্য ও রাজন ভট্টাচার্য, দুই ভাই তৈরি করেন রিলেশন ইকনমিক ডেভেলপারস সোসাইটি। তাঁদের কাজের নমুনাও একই রকম। চড়া সুদের লোভ দেখিয়ে অর্থ সংগ্রহ, পরে আমানতের মেয়াদ ফুরোলে নানান যুক্তি। ফলে এজেন্ট দুর্ভোগ এবং দুঃস্থ গ্রাহকদের সর্বস্বান্ত হওয়া। দুই লগ্নি (সাধারণের কথায় চিট ফান্ড) সংস্থার আরও বড় মিল, উভয়েই চেয়েছিলেন পত্রিকা খুলে বাকি ঝুটঝামেলা সামাল দিতে। সারদার ছিল সকালবেলা-সহ বাংলা-ইংরেজি আরও ক’টি পত্রিকা, রিলেশন খোলে ‘জনকণ্ঠ’। করিমগঞ্জেই রিলেশনের অফিস, জনকণ্ঠের কার্যালয়, মিষ্টির দোকান, রেস্তোরাঁ ইত্যাদি। ২০১২-র এপ্রিলে রাজস্ব বিভাগের নিষেধাজ্ঞায় প্রথমে রিলেশন অফিসে তালা ঝোলে। দ্রুত প্রভাব পড়ে মিষ্টির দোকান ও রেস্তোরাঁয়। এ বারের চৈত্র সংক্রান্তি-নববর্ষের ছুটির পর খুলছিল না জনকণ্ঠও। এই কয়েক দিন থেকে ফের পত্রিকা প্রকাশ হচ্ছিল। দুই ভাইয়ের বয়ান, কাল রাতে পত্রিকার কাজই করছিলেন সম্পাদক অরুণাভ ভট্টাচার্য ও প্রকাশক রাজন ভট্টাচার্য। রাত আড়াইটা নাগাদ পুলিশ পত্রিকা অফিস থেকে তাঁদের শিলচরে নিয়ে আসে। রাঙ্গিরখাড়ি থানার ইনচার্জ অমর ঘোষ জানান, করিমগঞ্জ পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে বাড়ি থেকেই গ্রেফতার করা হয়েছে দুই ভাইকে। তাঁদের বিরুদ্ধে হরিধন দাস নামে শিলচর লেবুরবন্দের এক এজেন্ট আদালতে মামলা দায়ের করেছিলেন। এ অবশ্য ২০১৩ সালের ২১ মে-র ঘটনা। চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তদন্তের জন্য তা থানায় পাঠিয়ে দেন। সেই সূত্রেই কাল অভিযানে নামে পুলিশ। এই মামলায় আরও তিনজনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। এরা হলেন—অমল লস্কর, মহাদেব দাস ও প্রমোদ দাস। তাঁদেরও শীঘ্রই গ্রেফতার করা হবে বলে পুলিশ জানিয়েছে। কেন দুই ভাইকে গ্রেফতার করতে দু’বছর লাগল? পুলিশের জবাব, আদালত তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলেছে। আদালত থেকে মামলা এসেছে বলেই গ্রেফতারের সুযোগ ছিল না। এতদিনে সমস্ত তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহ করেছে পুলিশ। তাঁদের বিরুদ্ধে ভারতীয় ফৌজদারি দণ্ডবিধির ৪০৬, ৪০৯, ৪২০, ৪৬৮ ও ৩৪ ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে। অমরবাবুর কথায়, শিলচর শহরে প্রচুর মানুষ তাঁদের প্রতারণার শিকার হয়েছে। অঙ্কটি ১৫ কোটি টাকার কম নয়। বরাকের অন্য এলাকা এবং পার্শ্ববর্তী রাজ্য ত্রিপুরা ও মিজোরামেও ছড়িয়েছিল তাঁদের ‘ব্যবসা’। রিলেশনের ম্যানেজিং ডিরেক্টর অরুণাভ ও সচিব-ডিরেক্টর রাজনের দাবি, সব মিলিয়ে ১৫ কোটি টাকা গ্রাহকরা পাবেন। বরাক উপত্যকার বাইরে বলতে ত্রিপুরার উত্তরাঞ্চলে কিছু ব্যবসা হয়েছিল। মিজোরামের ব্যবসা আগেই বন্ধ করে দেওয়া হয়। কড়ায়-গণ্ডায় সকলের টাকা মিটিয়ে দেওয়া হয়েছে বলেও তাঁরা দাবি করেন। অন্যদের পাওনাও মিটিয়ে দেওয়া যেত বলে তাঁরা মনে করেন। তাঁরা বলেন, ‘‘পাথারকান্দিতে ৬০০ বিঘার রবার বাগান রয়েছে। ৪০ হাজার গাছ আছে সেখানে। আছে বহু জমি, বাড়ি। কিন্তু সম্পত্তি বিক্রির ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকার দরুন আমরা তা বিক্রি করতে পারছি না।’’
এই প্রথম গ্রেফতার হলেও এটিই তাঁদের বিরুদ্ধে প্রথম মামলা নয়। মিজোরামের ঝামেলা আদালতের মাধ্যমেই মিটেছে। এ ছাড়া, এই সময়ে তাঁদের নামে আরও দু’টি মামলা ঝুলছে। একটি শিলচর আদালতে। চেক বাউন্সের অভিযোগে মামলা করেছেন রংপুর করাতিগ্রামের অমৃতলাল দাস। অন্যটি করেছেন করিমগঞ্জ জেলার রামকৃষ্ণনগরের অমরেশ রায়। মামলার সঙ্গে ক্ষোভ-বিক্ষোভও কম সামাল দিতে হয়নি তাঁদের। ২০১৩ সাল থেকে দফায় দফায় এজেন্ট-গ্রাহকরা জড়ো হয়েছেন। উত্তেজনারও সৃষ্টি হয়। দুই ভাই গ্রেফতার হওয়ায় এজেন্ট-গ্রাহকরা সন্তোষ প্রকাশ করছেন। তাঁদের দাবি, গ্রাহকদের পাওনা মিটিয়ে দেওয়ার জন্য যেন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।