ঘরছাড়া: জলমগ্ন কোচিতে। শনিবার। ছবি: পিটিআই।
সবুজ পাহাড়ের ঢালে দিগন্ত ছোঁয়া বেগনি সাগরের ঢেউ! মুন্নারের উপত্যকায় বেগনিরঙা নীলাকুরিঞ্জি ফুলের প্লাবন এ জন্মে আর দেখা হবে না ভাবছেন সত্তরোর্ধ্ব কল্যাণ রায়।
স্ত্রী অর্চনাও এখন মধ্যষাট। লোকগাথায় ভরা ফুল নীলাকুরিঞ্জির বছরে কেরলে যেতে তিনিও মুখিয়ে ছিলেন। সচরাচর সে-ফুলের দেখা মেলে না। ১২ বছরে একবার, এ পৃথিবী পায় তাকে। এক যুগ অন্তর অগস্ট থেকে অক্টোবর, কেরলের মুন্নার, পালানি ছেয়ে যায় নীলাকুরিঞ্জির বেগনিরঙা বিস্ফোরণ। সেই ফুলের গল্প ঢেকে গিয়েছে অন্য প্লাবনের বিভীষিকায়। বিএসএনএল-এর অবসরপ্রাপ্ত দম্পতি কল্যাণ-অর্চনারা বলছিলেন, ‘‘১২ বছর বাদে পারব কি না, কে জানে! পাহাড়ের গায়ে নীলাকুরিঞ্জি র বান ডেকেছে দেখব বলেই কেরল যাব ভেবেছিলাম।’’ ২০ অগস্ট থেকে নির্দিষ্ট তাঁদের প্যাকেজ সফর বাতিল বিধ্বংসী বন্যায়।
ফি-বছর অগস্টের শেষ থেকেই সাধারণত শুরু হয় বাঙালির কেরল বেড়ানো। পুজোয় তো খান চার-পাঁচ ভ্রমণ সংস্থা ৮-১০টা করে কেরল সফর আয়োজন করে। কন্যাকুমারী থেকে শুরু করে তিরুঅনন্তপুরম, কোভালম-আলেপ্পি-কুমারাকম-পেরিয়ার-মুন্নার-কোচি ঘুরে ফেরা! ‘কুণ্ডু স্পেশ্যাল’-এর আশিস বিশ্বাস বললেন, ‘‘অগস্টের টুরটা বাতিল করে দিলাম। ৪০ জনকে সব টাকা ফেরত দিচ্ছি।’’
ডলফিন-এর রক্তিম রায় বা যাত্রিক-এর নীতিশ চক্রবর্তীরা বলছেন, সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহের আগে পুজোর বেড়ানোর ভাগ্যে কী আছে, বলা যাচ্ছে না। শনিবার আলেপ্পি থেকে ফোনে হাউজ়বোট ডিপোর আধিকারিক জলি বললেন, ‘‘থামছেই না বৃষ্টি। গোটা শহরটাই ভাসছে! কেরল জুড়েই ‘রেড অ্যালার্ট’।’’ নৌকায় প্রমোদ-ভবন দূর অস্ত্! ‘‘সকাল থেকে উদ্ধারকাজ চালাচ্ছি।’’— বলতে বলতে জলি ফোন ছাড়লেন। দেশদুনিয়া-র শুদ্ধব্রত দেব অবশ্য আশা করছেন, পুজোর আগে জল নেমে যাবে।
এত লোকের জন্য একসঙ্গে বিকল্প ব্যবস্থা করা মুশকিল! কেরলে না-হলে অনেকেই কাছেপিঠে হাতের পাঁচ কোনও টিকিট কেটে রাখছেন। কন্টিনেন্টাল ট্র্যাভেলসের বাচ্চু চৌধুরী বিষণ্ণ: ‘‘কাশ্মীরে বেড়ানোর করুণ পরিস্থিতি! কেরলের মতো জনপ্রিয় জায়গাও ফস্কে গেলে তো খুব সমস্যা।’’
এই ডামাডোলেই কেরলে মধুচন্দ্রিমা সেরে বরাহনগরের নবদম্পতি অভিষেক গুপ্ত-শ্বেতা জায়সবালেরা এ দিন বিকেলে শহরে ফিরলেন। বন্যা-বিধ্বস্ত কোচির বিমানবন্দর বন্ধ থাকায় বিমান সংস্থা একই ভাড়ায় মাদুরাই বা কোয়ম্বত্তূর হয়ে ফেরার ব্যবস্থা করেছিল। থেক্কাডি থেকে প্রাণ-হাতে করে গাড়িতে মাদুরাইয়ের পথে অভিষেকরা দেখেন, অঝোর বৃষ্টিতে পাহাড় খসে-খসে ধস নামছে! বিপজ্জনক পরিস্থিতির জেরেই মুন্নারে যেতে পারেনি নবদম্পতি। অত কাছে গিয়েও বিরল ফুল ফোটার দৃশ্য তাঁদেরও অদেখা থাকল।