প্রত্যাশা ছিল মধ্যবিত্তকে একটু হাঁফ ছাড়ার সুযোগ দিতে করহীন আয়ের সীমা বাড়াবেন অরুণ জেটলি। নিদেন পক্ষে কিছুটা বাড়াবেন সঞ্চয়ে করছাড়ের সুযোগ। কিন্তু আদপে বাজেটে যা দিলেন, হয়তো তার থেকে বেশিই ফিরিয়ে নিলেন তিনি!
কারণ, হাতে গোনা গোটাকয়েক ক্ষেত্র ছাড়া আয়করে বাড়তি ছাড় সে ভাবে নেই। দুই শতাংশ বাড়তি সারচার্জ চেপেছে কোটিপতিদের উপর। তার উপর বেড়েছে পরিষেবা করের হার। ফলে রেস্তোরাঁয় খেতে যাওয়া থেকে শুরু করে পাঁচশো টাকার বেশি দামের জলসার টিকিট কেনা অনেক কিছুতেই বেশি টাকা গুনতে হবে সাধারণ মানুষকে।
আয়করের হার বা ধাপ কোনওটাই বদলায়নি। যে রোজগারে যেমন কর বসত, তা অপরিবর্তিতই রেখেছেন অর্থমন্ত্রী। তবে পেনশন ফান্ড ও নতুন পেনশন প্রকল্পে (নিউ পেনশন স্কিম বা এনপিএস) এখন দেড় লক্ষ টাকা পর্যন্ত রাখলে করছাড়ের সুযোগ মিলবে। আগে এই সীমা ছিল এক লক্ষ টাকা। এনপিএসে বাড়তি ৫০ হাজার টাকার উপর করছাড় মিলবে ৮০সিসিডি ধারায়।
সেই সঙ্গে বেড়েছে স্বাস্থ্যবিমার প্রিমিয়ামে করছাড়ের সুবিধা। এখন ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত প্রিমিয়ামে করছাড় মেলে। এ বার তা পাওয়া যাবে ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত। প্রবীণ (৬০ বছরের বেশি) নাগরিকরা ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত প্রিমিয়ামে ছাড় পান। তা বেড়ে হচ্ছে ৩০ হাজার টাকা। যে সমস্ত অতি প্রবীণ নাগরিকের (৮০ বছরের বেশি) স্বাস্থ্য বিমা নেই, বছরে ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত চিকিৎসা খরচে করছাড় পাবেন তাঁরা। প্রবীণদের ক্ষেত্রে বিশেষ কিছু চিকিৎসার খরচের জন্য করছাড়ের সুবিধা ৬০ হাজার থেকে বাড়িয়ে ৮০ হাজার টাকা করা হয়েছে। বিশেষ সুবিধা দেওয়া হয়েছে প্রতিবন্ধীদেরও।
বেতনে যে পরিবহণ ভাতার উল্লেখ থাকে, আগে সেই বাবদ মাসে ৮০০ টাকা করের আওতার বাইরে থাকত। সেই অঙ্ক দ্বিগুণ করে ১,৬০০ টাকায় নিয়ে গিয়েছেন অর্থমন্ত্রী।
এই পর্যন্ত যদি প্রাপ্তির তালিকা হয়, ‘কেড়ে নেওয়া’র ফর্দ তবে আরও লম্বা। বছরে যাঁদের আয় এক কোটি টাকা বা তার বেশি, তাঁদের উপর অতিরিক্ত ২% সারচার্জ চাপিয়েছেন জেটলি। পেট্রোল-ডিজেলের দাম কমার সুযোগে তার উপর বসানো উৎপাদন শুল্ককে বদলে দিয়েছেন রোড সেস-এ। এমনকী জানিয়েছেন যে, প্রয়োজনে কিছু বা সব পরিষেবার ওপর ২% হারে স্বচ্ছ ভারত সেস বসানোর দরজা খোলা রাখছেন তিনি।
আগামী অর্থবর্ষের গোড়াতেই পণ্য-পরিষেবা কর চালু করার কথা ঘোষণা করেছেন জেটলি। তার সঙ্গে সাযুজ্য রেখে পরিষেবা করের হার বাড়িয়ে করেছেন ১৪%। অর্থাৎ মোবাইল ফোনের বিল, রেস্তোরাঁয় খাওয়ার খরচ, বাড়িতে বৈদ্যুতিন সামগ্রীর মেরামতি থেকে শুরু করে প্রায় সমস্ত পরিষেবা পেতেই গুনতে হবে বাড়তি কড়ি।
সেই সঙ্গে বেড়েছে পরিষেবা করের পরিধিও। ওয়াটার পার্ক, থিম পার্ক বা বিনোদন পার্কের টিকিটে পরিষেবা কর বসছে। গান বা জলসার টিকিট পাঁচশো টাকার বেশি হলে, পরিষেবা কর চাপবে তার উপরেও। ওই করের জেরে দাম বাড়বে লটারির টিকিট, মিউচুয়াল ফান্ড এজেন্টের পরিষেবা ইত্যাদির। কিছু ক্ষেত্রে বাড়তে পারে ফোনের বিলও। ফলে সব মিলিয়ে দেখা যাচ্ছে কর বাঁচানোর যেটুকু সুযোগ মধ্যবিত্তরা পেয়েছেন, তাঁদের খরচ বাড়ছে আরও বেশি।
গত বাজেটে করহীন আয়ের ঊর্ধ্বসীমা দু’ লক্ষ থেকে বাড়িয়ে আড়াই লক্ষ টাকা করেছিলেন জেটলি। সঞ্চয়ে ৮০ সি ধারা এবং গৃহঋণের সুদেও ৫০ হাজার টাকা করে ছাড়ের সুযোগ বাড়িয়েছিলেন তিনি। অর্থমন্ত্রীর দাবি, তিনি সঞ্চয়ের প্রবণতা বাড়াতে চান। এবং তাঁর দুই বাজেটের দাওয়াইয়ে মোট ৪,৪৪,২০০ টাকা আয়ে করছাড়ের সুবিধা পেতে পারেন সাধারণ মানুষ। কিন্তু বিরোধী-সহ অনেকেরই প্রশ্ন, ওই সুবিধা পেতে জীবনবিমা, স্বাস্থ্য বিমা, পেনশন প্রকল্পে এত টাকা কোথা থেকে ঢালবেন সাধারণ মধ্যবিত্ত? বছরে আয় ৮ লক্ষ টাকা হলেও, সাড়ে চার লক্ষ টাকা সঞ্চয় করা বেশ শক্ত।
কংগ্রেস নেতা দীপেন্দ্র হুডার অভিযোগ, “জেটলিও জানেন অধিকাংশ মধ্যবিত্তের পক্ষে এটি করা সম্ভব নয়। কারণ, গৃহঋণে ২ লক্ষ টাকা সুদ বাবদ করছাড় পেতে বার্ষিক কিস্তিই হতে হবে অন্তত তিন লক্ষ টাকা। তার উপর পিএফ-পিপিএফ-পেনশন-বিমায় অত টাকা ঢালতে গেলে মানুষ খাবেন কী?”
এই ক্ষোভের কথা বিলক্ষণ আঁচ করেছেন জেটলিও। যে কারণে তিনি বলেন, দেশের জনসংখ্যার সাড়ে তিন থেকে চার শতাংশ করদাতা। সরকারের হাতে পর্যাপ্ত টাকাও নেই। ইঙ্গিত স্পষ্ট, ইচ্ছে থাকলেও হাত-পা বাঁধা থাকায় এই মুহূর্তে মধ্যবিত্তদের করছাড়ের বাড়তি সুবিধা দিতে পারলেন না তিনি।