গিরিরাজ সিংহ। —ফাইল চিত্র।
বিহার নির্বাচনের প্রাথমিক গণনায় বিরোধী জোট ‘মহাগঠবন্ধন’-এর তুলনায় অনেকটাই এগিয়ে রয়েছে এনডিএ। সকালে ফলাফলের এই আভাস মিলতেই পশ্চিমবঙ্গের শাসকদল তৃণমূলকে আক্রমণ করলেন বিজেপি নেতা তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী গিরিরাজ সিংহ। হুঁশিয়ারির সুরে জানালেন, বিহারের পর এ বার বাংলার পালা! প্রত্যয়ের সুরে জানালেন, এ বার সেখানেও বিজেপি জয়ী হবে।
ফলাফলে খুব বড় রদবদল না-ঘটলে প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে বিহারে ফের ক্ষমতায় আসতে চলেছে বিজেপি, জেডিইউ-র জোট। স্বাভাবিক ভাবেই এই ফলে উজ্জীবিত পদ্মশিবির। এই আবহে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা বিহারের বেগুসরাই কেন্দ্রের বিজেপি বিধায়ক গিরিরাজ সিংহ ‘ইন্ডিয়া টুডে’-কে বলেন, “এখানে (বিহারে) আমাদের জয় হয়েছে। এ বার বাংলার পালা।” একই সঙ্গে প্রবীণ বিজেপি নেতার সংযোজন, “যাঁরা বিহারকে বোঝেন, তাঁরা এটাও জানেন যে, এখানকার মানুষ ‘জঙ্গলরাজ’ চায় না। বিহারের জনগণ বিশৃঙ্খলা আর দুর্নীতিগ্রস্ত নেতাদের প্রত্যাখ্যান করেছে।” প্রসঙ্গত, আরজেডি শাসনাধীন বিহারের পরিস্থিতিকে ‘জঙ্গলরাজ’ বলে অভিহিত করে থাকে বিজেপি।
পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল সরকারকে নিশানা করে গিরিরাজ বলেন, “আমরা বাংলাতেও জিতব। ওখানকার বর্তমান সরকার বাইরের শক্তির মদতে রাজ্যে বিশৃঙ্খলা তৈরি করছে। কিন্তু বাংলার মানুষ এ বার সত্যটা বুঝতে পারবেন।” এর আগেও বহু বার পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল সরকার এবং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে কড়া আক্রমণ করেছেন গিরিরাজ। কখনও কখনও সেই আক্রমণের ভাষা এবং ভঙ্গি শালীনতার সীমা অতিক্রম করেছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। ২০২৪ সালে মমতাকে উত্তর কোরিয়ার শাসক কিম জং উনের সঙ্গে তুলনা করে বিতর্কে জড়িয়েছিলেন গিরিরাজ।
অধুনা বস্ত্রমন্ত্রী গিরিরাজ ২০২১ থেকে ২০২৪ সালের ১০ জুন পর্যন্ত গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকের দায়িত্বে ছিলেন। সেই সময় ১০০ দিনের কাজে বাংলার বকেয়া নিয়ে গিরিরাজের সঙ্গে টক্কর চলেছিল তৃণমূলের। এক দিকে গিরিরাজের অভিযোগ ছিল, তৃণমূল হিসাব দিচ্ছে না বলেই নতুন করে তহবিল দেওয়া হচ্ছে না। পাল্টা তৃণমূলের বক্তব্য ছিল, গিরিরাজ অসত্য বলছেন। সমস্ত হিসাব কেন্দ্রকে দেওয়া হয়েছে। বাংলার গরিব মানুষকে ভাতে মারতেই টাকা আটকে রেখেছে কেন্দ্র।
২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে ১০০ দিনের কাজ-সহ বিভিন্ন কেন্দ্রীয় প্রকল্পে বকেয়া পাওনার দাবিতে দিল্লিতে আন্দোলন নিয়ে গিয়েছিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই সময়ে নয়াদিল্লির কৃষি ভবনে গিরিরাজ ছিলেন না। প্রতিমন্ত্রী সাধ্বী নিরঞ্জন জ্যোতি ছিলেন। তৃণমূলের অভিযোগ ছিল, কৃষি ভবনে থাকলেও নিরঞ্জন জ্যোতি বাংলার সাংসদ এবং ভুক্তভোগীদের সঙ্গে দেখা করতে চাননি। তার পর কৃষি ভবনে অভিষেকদের ধর্না, পুলিশি ধরপাকড় দিল্লিতে শোরগোল ফেলে দিয়েছিল। তার পর গঙ্গা দিয়ে অনেক জল গড়িয়েছে। কিন্তু কট্টর তৃণমূল বিরোধিতা থেকে সরেননি গিরিরাজ। শুক্রবার বিহার নির্বাচনের ভোটগণনার দিনও তৃণমূল বিরোধিতায় শান দিয়ে রাখলেন তিনি।