দিল্লি আক্রান্ত!
এক অচেনা ছত্রাক-সংক্রমণের প্রকোপে আতঙ্কিত রাজধানীর চিকিৎসক মহল। আশঙ্কা, ইতিমধ্যেই অসুস্থ ব্যক্তি এবং ছোট শিশুদের জন্য ভয়াবহ হয়ে উঠতে পারে এই সংক্রমণ। বিশেষত, অঙ্গ প্রতিস্থাপন হয়েছে বা অস্ত্রোপচার হওয়া রোগীদের ক্ষেত্রে এই সংক্রমণ জীবনহানিকর হয়ে উঠতে পারে বলেও মনে করছেন চিকিৎসকেরা।
এইমস-এর এক প্রবীণ সার্জেন ও অধ্যাপক জানালেন, এই ছত্রাক-সংক্রমণ দু’ধরনের হয়। যে সব ছত্রাক সংক্রমণ ত্বকে সংক্রমিত হয় সেগুলি বিশেষ ক্ষতিকারক নয়। কিন্তু যে ছত্রাক সংক্রমণ বিভিন্ন অঙ্গ বা রক্তের মাধ্যমে শরীরের ভিতর প্রবেশ করে সেগুলি অত্যন্ত ক্ষতিকারক। এমনকী, রোগীর জীবনহানিও হতে পারে বলে জানালেন তিনি। এই ধরনের ছত্রাকের সংক্রমণ মধুমেহ, ক্যান্সার আক্রান্ত বা অঙ্গ প্রতিস্থাপিত হয়েছে এমন রোগীদের জন্য অত্যন্ত ভয়ানক। সাধারণ মানুষের জন্যও এই সংক্রমণ ক্ষতিকারক বলে জানালেন ম্যাক্স হাসপাতালের প্রবীণ চিকিৎসক পঙ্কজ গর্গ। তিনি জানালেন, আপারেশন হওয়া রোগী বা কম প্রতিরোধক ক্ষমতাসম্পন্ন রোগীর জন্য যেমন ইন্ট্রাভেনাস ফাংগাল সংক্রমণ ক্ষতিকারক, ঠিক তেমনই ক্ষতিকারক সাধারণ মানুষের জন্যও। কারণ, এই ধরনের সংক্রমণের চিকিৎসা সাধারণত ইনজেকশনের মাধ্যমে করা হয়। কিন্তু তা বিশেষ কার্যকর হয় না।
ইতিমধ্যেই এই সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছে দিল্লির বেশ কিছু হাসপাতালে। যার জেরে কেন্দ্রীয় সরকার পরিচালিত দক্ষিণ দিল্লির সফদরজং হাসপাতালে গত তিন দিন যাবৎ কার্ডিও-থোরাসিক এবং অর্থোপেডিক বিভাগের অপারেশন থিয়েটার দু’টি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ফাংগাল সংক্রমণ থাকার দরুন সমস্যায় পড়েছেন রোগী ও তাঁর বাড়ির লোকেরা। ফাংগাল সংক্রমণের স্তর অনেক বেশি হওয়ায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এই দুটি অপারেশন থিয়েটার বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়েছেন বলে জানা গিয়েছে।
অপারেশন থিয়েটার দু’টি বন্ধ হওয়ার ফলে সমস্যায় পড়েছেন অপারেশনের অপেক্ষায় থাকা কয়েকশো রোগী। গত শনিবার থেকে হাসপাতালে কার্ডিও-থোরাসিক অপারেশন বন্ধ রয়েছে। হাসপাতালের মাইক্রো-বায়োলজি বিভাগ নিয়মিত পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর কার্ডিওলজি বিভাগকে সংক্রমণের ঘটনা জানায় গত শনিবার। তারপরই, রোগীদের ফাংগাল সংক্রমণের হাত থেকে বাঁচাতে অপারেশন বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। হাসপাতালের মেডিক্যাল সুপার রাজপালের কাছে বিষয়টি জানতে চাওয়া হলে তিনি অবশ্য প্রকাশ্যে বিষয়টি অস্বীকার করেন। তিনি জানান, অপারেশন থিয়েটারে কিছু রুটিন মেরামতি চলার জন্য অপারেশন দু’দিন বন্ধ রাখা হয়েছে। আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই আপারেশন শুরু হবে।
তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতালের এক সিনিয়র ডাক্তার জানালেন, মাইক্রোবায়োলজি বিভাগ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে জানিয়েছে, কার্ডিও বিভাগের অপারেশন থিয়েটারে ফাংগাস সংক্রমণের স্তর অনেক বেশি। এই সংক্রমণের ফলে রোগীদের জীবনহানিও হতে পারে। মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের এই রিপোর্টের পরই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তড়িঘড়ি অপারেশন থিয়েটার বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেন। পরবর্তী নির্দেশ জারি না হওয়া অবধি অস্ত্রোপচার বন্ধ থাকবে বলে জানান। সংক্রমণের ঘটনার পরই কর্তৃপক্ষ দ্রুত হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটার সমেত বিভিন্ন বিভাগে ফ্যিউমিগেশন (সংক্রমণ দূর করার প্রক্রিয়া) করা শুরু করেছেন। তবে আপারেশন শুরু হতে আরও দু-তিন দিন সময় লাগবে বলে জানা গিয়েছে। অস্ত্রোপচার কেন বন্ধ রাখা হয়েছে, সে বিষয়েও তাঁদের বাড়ির লোকজনকে কিছু জানানো হয়নি। স্বাভাবিক ভাবেই হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের আত্মীয়-স্বজনরা দিশাহারা। এমন অনেক রোগী এখানে ভর্তি আছেন যাঁরা অপারশনের জন্য কয়েক মাস যাবত অপেক্ষায় রয়েছেন। কয়েক জনের অবস্থা সঙ্কটজনক। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য-মন্ত্রকের ডিরেক্টর জেনারেল অফ হেলথ সার্ভিস জগদীশ প্রসাদ প্রতি দিন দুপুর ১টার সময় হাসপাতালে এলেও ঘটনাটি তিনি জানেন না বলেই জানালেন। তিনি এই হাসপাতালের প্রাক্তন মেডিক্যাল সুপার। অপেক্ষারত রোগীদের বিরাট লাইন দেখে কর্তৃপক্ষ ভোর ৪টে থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত অস্ত্রোপচার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ফাংগাল সংক্রমণের হাত থেকে অপারেশন থিয়েটার বাঁচানোর জন্য ফ্যিউমিগেশনের ব্যবস্থা থাকলেও বাইরে তেমন কোনও ব্যবস্থা নেই। এর মোকাবিলা করার জন্য সাধারণ অ্যান্টি-ফাংগাল ওষুধ কার্যকর কি না সে বিষয়ে চিকিৎসকেরাই যথেষ্ট চিন্তায় রয়েছেন।