Yogi Adityantah

Yogi Adityanath: ভোটের মুখে গরিবের বাড়ি ‘ভোজ’ যোগীর

বিরোধীরা বলছেন, পিছিয়ে থাকা শ্রেণির ভোট প্রায় হাতছাড়া হয়ে গিয়েছে বুঝেই এখন শেষ বেলায় ওবিসি-প্রেম দেখাচ্ছেন যোগী। 

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৫ জানুয়ারি ২০২২ ০৯:৪৬
Share:

গোরক্ষপুরে বিজেপির ওবিসি কর্মী অমৃতলাল ভারতীর দাওয়ায় বসে মধ্যাহ্নভোজ সারলেন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। শুক্রবার। পিটিআই

ভোটের মুখে এমন ঘটনার একাধিক বার সাক্ষী থেকেছে পশ্চিমবঙ্গ। পশ্চিমবঙ্গে ভোটের সময়ে দিল্লি থেকে কেন্দ্রীয় স্তরের বিজেপি নেতারা উড়ে এসে মধ্যাহ্নভোজন সেরেছেন তৃণমূল স্তরের কোনও কর্মীর মাটির দাওয়ায় বসে। আজ ভোটমুখী উত্তরপ্রদেশে, মকর সংক্রান্তির দিনে দেখা গেল একই চিত্র। গোরক্ষপুরের দলের ওবিসি কর্মী অমৃতলাল ভারতীর দাওয়ায় বসে খিচুড়ি দিয়ে মধ্যাহ্নভোজ সারলেন মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। পরে বললেন, সমান অধিকারের বার্তা দিতেই ওই মধ্যাহ্নভোজ। এর পিছনে কোনও রাজনীতি নেই। বিরোধীরা অবশ্য বলছেন, পিছিয়ে থাকা শ্রেণির ভোট প্রায় হাতছাড়া হয়ে গিয়েছে বুঝেই এখন শেষ বেলায় ওবিসি-প্রেম দেখাচ্ছেন যোগী।

Advertisement

গত পাঁচ বছরে শোষণ ও বঞ্চনার সঙ্গেই পিছিয়ে পড়া শ্রেণি ও দলিত নিগ্রহে রাজ্যের ওবিসি সমাজ যোগী সরকারের উপরে তলে তলে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছিল। যে ওবিসি সমাজ ২০১৪ ও ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে, পাঁচ বছর আগের বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপিকে ঢেলে ভোট দিয়েছিল, সেই ওবিসি-রা ক্রমশ শাসক শিবির থেকে দূরত্ব বাড়াতে শুরু করেছেন তা আঁচ করে ভোটের মুখে দল ছাড়ার হিড়িক পড়ে গিয়েছে বিজেপিতে। বিশেষ করে গত কয়েক দিন যে ভাবে তিন ওবিসি মন্ত্রী দল ছেড়েছেন এবং আরও কিছু মন্ত্রী দল ছাড়ার জন্য সক্রিয় রয়েছেন, তাতে ওবিসি সমাজ যে মুখ ঘুরিয়েছে তা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে। সূত্রের মতে, সেই কারণে আজ দলীয় নির্দেশ মেনে পিছিয়ে থাকা সমাজকে বার্তা দিতে মকর সংক্রান্তির দিনে ওবিসি সমাজের প্রতিনিধি অমৃতলাল ভারতীর বাড়িতে মধ্যাহ্নভোজন করার সিদ্ধান্ত নেন যোগী। বিরোধীরা একে লোকদেখানো ভোজন বলে কটাক্ষ করলেও, যোগীর কথায়, “অমৃতলাল দলের এক জন পুরনো কর্মী। তফসিলি জাতিভুক্ত ভারতী আমাকে তাঁর বাড়িতে মকর সংক্রান্তির দিনে খিচুড়ি খাওয়ার আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। এর পিছনে কোনও রাজনীতি নেই।” যোগী ওই দাবি করলেও, বিরোধীদের পাল্টা প্রশ্ন, কেন ভোটের আগে এ ভাবে লোক দেখিয়ে খেতে হল যোগীকে? এসপি নেতা নরেশ পটেলের কথায়, আসলে বিজেপি ভাল করেই বুঝতে পারছে পিছিয়ে থাকা সমাজ আর বিজেপির পিছনে নেই। এখন শেষবেলায় সেই ভাঙন রুখতে ওবিসি-দলিত দরদী ভাবমূর্তি তুলে ধরতে চাইছেন যোগী।

আজ যোগী যখন গোরক্ষপুরে মধ্যাহ্নভোজন সারছেন, তখন লখনউয়ে তাঁর মন্ত্রিসভার দুই সদস্য ও দলের ছয় বিধায়ক দল ছেড়ে এসপি-তে যোগ দেন। আর এক প্রাক্তন মন্ত্রী সংক্রান্তির পরে দল ছাড়তে চলেছেন। এই আবহে কাল সম্ভবত ১৭২ জন প্রার্থীর নাম ঘোষণা করতে চলেছে বিজেপি। দলীয় নেতৃত্বের আশঙ্কা, আসন ঘোষণার পরে ফের একবার দল ছাড়ার হিড়িক শুরু হতে পারে। মূলত যে সব জয়ী বিধায়কদের নাম কাটা যাবে, তাদের একটি বড় অংশ আগামী কয়েক দিনে এসপি-তে যোগদান করতে চলেছে বলে আশঙ্কা করেছে দল। কারণ এই মুহূর্তে উত্তরপ্রদেশে বিজেপিকে বড়সড় চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দিয়েছেন অখিলেশ যাদব। ফলে জেতার আশায় বিজেপি ছেড়ে বেরিয়ে আসাদেরও ভিড় ক্রমশ বাড়ছে এসপি শিবিরে। এসপি নেতৃত্বের দাবি, বিজেপি ছাড়াও কংগ্রেস ও বিএসপি নেতারাও তাঁদের দলে আসার জন্য উদগ্রীব। কিন্তু সমস্যা হল, কত জনকে দলে জায়গা দেওয়া হবে সম্ভব। কারণ যে তিন জন মন্ত্রী বিজেপি ছেড়ে দলে যোগদান করেছেন বা করতে চলেছেন, তাদের প্রত্যেকেই বড় নেতা এবং নিজেদের এলাকায় জনপ্রিয়। ফলে আগামী দিনে তাঁদের ও তাঁদের ঘনিষ্ঠ অনুগামীদের টিকিট দিতে বাধ্য

Advertisement

হবেন অখিলেশ।

বিশেষ করে স্বামীপ্রসাদ মৌর্য। মৌর্য সমাজ ছাড়াও সাইনি, কুশওয়াহাদের মধ্যে ভাল জনভিত্তি রয়েছে। উত্তরপ্রদেশে যে ৪৪ শতাংশ ওবিসি রয়েছে, তাদের মধ্যে ৮ থেকে ১০ শতাংশ মৌর্য, সাইনি ও কুশওয়াহা সমাজ। পূর্বাঞ্চলের একশোটি আসনে এদের প্রভাব রয়েছে। অতীতের তিনটি বিধানসভা নির্বাচন পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে, যারা পূর্বাঞ্চলে ভাল ফল করেছে তারাই শেষ পর্যন্ত লখনউয়ের মসনদ দখল করেছে। ফলে সদ্য দলে যোগ দিলেও ওই নেতাদের টিকিট কোনও ভাবেই কাটা সম্ভব নয় অখিলেশের পক্ষে। অন্য দিকে যাঁরা টিকিট না-পাওয়ার আশঙ্কায় বা হেরে যাওয়ার ভয়ে বিজেপি ছেড়ে এসপি-তে যোগদান করছেন, তাঁদের অধিকাংশকে ভোটে টিকিট পাওয়ার নিশ্চিয়তা দিয়েই দলে নেওয়া হয়েছে। ফলে ওই এলাকাগুলিতে যে সব কর্মী এসপি-র হয়ে দীর্ঘ দিন মেহনত করছেন, তাঁদের টিকিট দেওয়া যাবে না। সমাজবাদী পার্টিতে যাঁরা পুরনো নেতা, তাঁদের টিকিট না দিলে পরিস্থিতি খারাপ হতে পারে। এই পরিস্থিতিতে টিকিট বণ্টনের প্রশ্নে পুরনো ও নতুন শিবিরের মধ্যে সমতা রক্ষা করে এগানোটা চ্যালেঞ্জ অখিলেশের কাছে।

বিজেপি নেতৃত্ব প্রকাশ্যে অবশ্য দলত্যাগকে গুরুত্ব দিতে চাইছে না। দলের নেতা সিদ্ধার্থনাথ সিংহ বলেন, “নানা কারণে ওই নেতারা দল ছেড়েছেন। কেউ ব্যক্তিগত লাভের জন্য গিয়েছেন, অন্যরা টিকিট না পাওয়ার ভয়ে গিয়েছেন। এই ধরনের লোকেরা গত পাঁচ বছরে সরকারে থাকার সুবিধে নিয়ে অনেকে ‘মালাই’ খেয়েছেন।” সিদ্ধার্থনাথ সিংহের ওই বক্তব্য নিয়ে আজ পাল্টা প্রশ্ন তুলেছেন সিপিএম নেতা মহম্মদ সেলিম। বলেন, “প্রধানমন্ত্রী দাবি করেন ‘না খাউঙ্গা না খানে দুঙ্গা’। আর তাঁর মন্ত্রীরা বিজেপি বিধায়কদের মালাই খাওয়াতে ব্যস্ত।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন