‘শহুরে নকশাল’ বাড়ছে, কেন্দ্রের বার্তায় প্রশ্ন

গোটা দেশেই গত কয়েক বছরে মাওবাদী হামলা কমে এলেও, ‘শহুরে নকশালপন্থী’ মানুষের সংখ্যা উল্লেখজনক ভাবে বেড়ে গিয়েছে বলেই জানাচ্ছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। সে কারণে তারা গুজরাত, পঞ্জাব-সহ ২০টি রাজ্যকে সতর্ক করে দিয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৭ নভেম্বর ২০১৮ ০৪:৩০
Share:

গোটা দেশেই গত কয়েক বছরে মাওবাদী হামলা কমে এলেও, ‘শহুরে নকশালপন্থী’ মানুষের সংখ্যা উল্লেখজনক ভাবে বেড়ে গিয়েছে বলেই জানাচ্ছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। সে কারণে তারা গুজরাত, পঞ্জাব-সহ ২০টি রাজ্যকে সতর্ক করে দিয়েছে।

Advertisement

কেন্দ্র ওই সতর্কবার্তা দিলেও, সাধারণ মানুষের স্বার্থে কিংবা আদিবাসীদের বঞ্চনার বিরুদ্ধে শিক্ষিত সমাজ মুখ খুললেই ‘শহুরে নকশাল’ বলে তকমা দেওয়ার যে প্রবণতা তৈরি হয়েছে, তাতে ওই সতর্কবার্তা আদৌও কতটা যুক্তিযুক্ত তা নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে। ভীমা কোরেগাঁওয়ের সংঘর্ষের পরে তাতে জড়িত থাকার অপরাধে পাঁচ সমাজকর্মীকে গ্রেফতার করে পুণে পুলিশ। পুলিশ আদালতে অভিযোগ জানায়, ওই পাঁচ জনের সঙ্গে যোগসাজশ রয়েছে নকশালপন্থী সংগঠনগুলির। যাঁরা প্রধানমন্ত্রীকে হত্যার পরিকল্পনা করেছিলেন। যদিও সেই দাবির পক্ষে কোর্টে বিশেষ প্রমাণ দিতে পারেনি পুলিশ।

এই গ্রেফতারির বিরোধিতায় সরব হয় একাধিক মানবাধিকার সংগঠন। অভিযোগ ওঠে, মানবাধিকার কর্মী ও আন্দোলনের উপরে সঙ্ঘ পরিবার তথা বিজেপি এবং কেন্দ্র পরিকল্পিত ভাবে আক্রমণ শানাচ্ছে। সরকারের বিরোধিতা করলেই মাওবাদী তকমা দিয়ে সেই ব্যক্তি বা সংগঠনের মুখ বন্ধ করার চেষ্টা চলছে। এমনকি পাঁচ সমাজকর্মীর মুক্তির দাবিতে রোমিলা থাপার, রামচন্দ্র গুহের মতো ব্যক্তিত্ব আদালতের দ্বারস্থ হলে তাঁদের নামের পিছনেও ‘শহুরে নকশাল’ তকমা জুড়ে দেওয়া হয়। তদন্তের নামে মারধরের অভিযোগও উঠছে। সমাজকর্মী অরুণ ফেরেরা আজ পুণের আদালতে জানিয়েছেন, এলগার পরিষদ মামলায় তদন্তের নামে এসিপি শিবরাজ পওয়ার তাঁকে আট-দশ বার ঘুষি মেরেছেন।

Advertisement

আরও পড়ুন: মোদীর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে ডাক উর্জিতকে

এই আবহে কেন্দ্র সম্প্রতি রাজ্যগুলিকে সতর্ক করে জানায়, জনতার ক্ষোভকে হাতিয়ার করে এক শ্রেণির মানুষ সরকার বিরোধিতায় সক্রিয় রয়েছেন। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা জানিয়েছেন, নিষিদ্ধ নয়, মাওবাদীদের এমন কিছু ‘ফ্রন্টাল’ সংগঠনের সক্রিয়তা গত কয়েক বছরে অতি মাত্রায় বেড়ে গিয়েছে গুজরাত ও পঞ্জাবে। জেলায়-জেলায় ছড়িয়ে পড়েছে ও শক্তি বাড়াচ্ছে ওই সংগঠনগুলি। কেন্দ্রের কাছে উদ্যোগের বিষয় হল, খোদ প্রধানমন্ত্রীর রাজ্যে গত এক দশকে যে ভাবে শিল্পের প্রশ্নে কৃষকদের জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে তাতে সেখানে কৃষকদের মধ্যে প্রবল অসন্তোষ তৈরি হয়েছে। যাকে কাজে লাগিয়ে ওই রাজ্যে প্রভাব বাড়াচ্ছে নকশালরা। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের রিপোর্ট বলছে, বিভিন্ন আঞ্চলিক শাখা ও গণসংগঠনের মাধ্যমে শহর এলাকায় সক্রিয়তা আগের চেয়ে বাড়িয়ে ফেলেছে মাওবাদীরা। ওই গণসংগঠনগুলিই শহর ও গ্রামীণ নকশালদের মধ্যে সেতুর কাজ করছে। বিভিন্ন গ্রামীণ এলাকায় মানুষকে বোঝানো, সরকার বিরোধী বিবৃতি বা অতি-বাম সাহিত্য পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্বে রয়েছে গণসংগঠনগুলি। শিক্ষিত শহুরে যুবকদের অস্ত্র তুলে নেওয়ার জন্য তাদের প্রভাবিত করার দায়িত্বেও রয়েছে তারা। মন্ত্রকের বক্তব্য, শিল্পের প্রশ্নে জমি দেওয়ার বিষয়ে গণসংগঠনগুলি মানুষকে অনুৎসাহিত করায় সুরাত-পুণে শিল্প করিডর কিংবা বুলেট ট্রেন প্রকল্পের কাজ আটকে গিয়েছে। অবিলম্বে ওই সব এলাকায় গিয়ে মানুষের ক্ষোভ নিরসন করতে সরকারকে সক্রিয় ভূমিকা নিতে পরামর্শ দেওয়া রয়েছে রিপোর্টে। না হলে পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যাবে বলেই মনে করছে কেন্দ্র।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন