Uttar Pradesh

‘আইনের শাসন’ দেখিয়ে বদলি উত্তরপ্রদেশের সেই মহিলা অফিসার

এলাকার দাপুটে বিজেপি নেতার সঙ্গে মহিলা সার্কল অফিসারের চোখে চোখ রেখে কথা বলার ভিডিও মুহূর্তে ভাইরাল হয়ে পড়েছিল সোশ্যাল মিডিয়াতে। সে দিনের ঘটনার পরই ১১ বিধায়ক ও এক সাংসদ-সহ বিজেপির একটি প্রতিনিধিদল মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের সঙ্গে দেখা করেছিলেন। এক সপ্তাহ মধ্যেই ওই মহিলা অফিসারকে বুলন্দশহর থেকে বাহরাইচে বদলি করে দেওয়া হল।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ০২ জুলাই ২০১৭ ১৭:১১
Share:

বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন শাসক দলের নেতাদের দাদাগিরির বিরুদ্ধে। বিনা হেলমেটে বাইক চালানোয় ফাইন করে, হুমকি আর ধমকি শোনার পরও পিছিয়ে যাননি কর্তব্য থেকে। সেই মহিলা পুলিশ অফিসারের ভিডিও গত কয়েক দিন ধরে রীতিমতো ভাইরাল। দল না দেখে আইনের শাসনে অটল থাকায় তাঁকে পুরস্কৃত করা হবে কি না- এই নিয়ে যখন মানুষের আগ্রহ, তখন উত্তরপ্রদেশের যোগী আদিত্যনাথ সরকার আবার দেখাল, প্রশাসনকে দলতন্ত্র থেকে মুক্ত রাখার যত আওয়াজই আমাদের নেতানেত্রীরা মাঝেমধ্যে দিন না কেন, সবটাই আসলে ফাঁকা বুলি। বিজেপি নেতাদের অন্যায় মেনে না নেওয়া ওই অফিসার শ্রেষ্ঠা ঠাকুরকে শাসক দলের ‘সম্মান’ বাঁচাতে বদলিই করে দেওয়া হল। যেমনটা হয়েই থাকে এ দেশে।

Advertisement

গত ২২ জুন উত্তরপ্রদেশের বুলন্দশহরে ঘটনার সূত্রপাত। বিনা হেলমেটে মোটরবাইক চালানোয় স্থানীয় বিজেপি নেতা প্রমোদ লোধিকে ২০০ টাকা স্পট ফাইন করেন সিয়ানা সার্কলের মহিলা অফিসার শ্রেষ্ঠা। প্রমোদ তা দিতে অস্বীকার করে নিজের রাজনৈতিক পরিচয় দেন। জানান তিনি বিজেপি নেতা এবং তাঁর স্ত্রীও বুলন্দশহর জেলা পঞ্চায়েতের সদস্য। এতেও কাজ না হওয়ায় এলাকার কিছু বিজেপি কর্মীকে ফোন করে ডেকে পাঠান। দলবল মিলে চাপ দেওয়া শুরু হয়। শুরু হয় ধমকধামক, আঙুল তুলে শাসানি। কিন্তু পাল্টা আঙুল তুলে শ্রেষ্ঠা বুঝিয়ে দেন, তিনি সরকারি কাজ করছেন এবং দোষীরা যে দলেরই হোন তাঁদের ছেড়ে দেবেন না। ভিডিওয় তাঁকে দৃঢ় ভাবে বলতে শোনা গিয়েছে, ‘‘আপনি যান মুখ্যমন্ত্রীর কাছ থেকে লিখিত নির্দেশ নিয়ে আসুন যে পুলিশের গাড়ি পরীক্ষা করার কোনও অধিকার নেই। পুলিশ নিজের কাজ করতে পারবে না। পরিবারের লোকজনকে ভুলে আমরা রাতে কাজ করি। মজা করার জন্য নয়।’’ শেষ পর্যন্ত ফাইন আদায়ের পাশাপাশি, পুলিশকে কর্তব্য পালনে বাধা দেওয়ায় পাঁচ বিজেপি কর্মীকে গ্রেফতারও করেন তিনি।

দেখুন ভিডিও:

Advertisement

এলাকার দাপুটে বিজেপি নেতার সঙ্গে মহিলা সার্কল অফিসারের চোখে চোখ রেখে কথা বলার ভিডিও মুহূর্তে ভাইরাল হয়ে পড়েছিল সোশ্যাল মিডিয়াতে। সে দিনের ঘটনার পরই ১১ বিধায়ক ও এক সাংসদ-সহ বিজেপির একটি প্রতিনিধিদল মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের সঙ্গে দেখা করেছিলেন। এক সপ্তাহ মধ্যেই ওই মহিলা অফিসারকে বুলন্দশহর থেকে বাহরাইচে বদলি করে দেওয়া হল।

আরও পড়ুন: বিজেপি নেতার হুমকি, সমর্থকদের চাপ উড়িয়ে তাঁকে গ্রেফতার মহিলা সাব ইনস্পেকটরের

কিন্তু, কেন এই বদলির সিদ্ধান্ত?

বিষয়টি নিয়ে পুলিশের তরফে সরকারি ভাবে কোনও মন্তব্য করা হয়নি। তবে প্রশাসন সূত্রে দাবি, এই বদলির পিছনে কোনও রাজনৈতিক চাপ নেই। এই পর্বে মোট ২৩৪ জন পুলিশ অফিসারকের বদলি করা হয়েছে। ফলে শ্রেষ্ঠা ঠাকুরের বিষয়টিকে আলাদা করে দেখার কোনও কারণ নেই। কিন্তু, তাও বির্তক পিছু ছাড়ছে না। বির্তক বাড়িয়েছেন স্বয়ং সিয়ানায় বিজেপির শহর সভাপতি মুকেশ ভরদ্বাজ। যিনি বলেই দিলেন, বিজেপি নেতাদের ‘মর্যাদা প্রতিষ্ঠা’ করতেই এই বদলির সিদ্ধান্ত। সব মিলিয়ে এটা পরিষ্কার, শাসক দলের নেতাদের ‘আইনের শাসন’ দেখাতে গিয়েই শেষ পর্যন্ত বদলি হতে হল শ্রেষ্ঠাকে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন