ATC

ATC: সুবিধা তিনটি, আকাশে মিলছে কাশী-কলকাতা

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ নভেম্বর ২০২১ ০৭:২৩
Share:

প্রতীকী চিত্র।

ওড়ার পথে বার বার উচ্চতা বদলাতে হলে বিমানের জ্বালানি যেমন বেশি পোড়ে, সময়ও লাগে বেশি। উপরন্তু বেশি জ্বালানি পোড়ার ফলে বাড়ে দূষণ। কম জ্বালানি ব্যবহার, সফরের সময় যথাসম্ভব কম রাখা এবং দূষণে লাগাম টানা— এই ত্রিমুখী সুবিধা পেতে কলকাতার আকাশসীমার সঙ্গে বারাণসীর আকাশকে যুক্ত করে দেওয়া হচ্ছে। ২৫ হাজার ফুট উচ্চতায় ওড়া বিমানের সঙ্গে এ বার যোগাযোগ থাকবে শুধু কলকাতা বিমানবন্দরের এয়ার ট্র্যাফিক কন্ট্রোল বা এটিসি-র। কলকাতা থেকে পশ্চিমে যাওয়ার সময় বিমানের নিয়ন্ত্রণ সরাসরি দিল্লির হাতে তুলে দেওয়া হবে।

Advertisement

এত দিন কোনও বিমান কলকাতা ছাড়লে আগে তার নিয়ন্ত্রণ নিত বারাণসীর এটিসি। তার পরে তারা সেই দায়িত্ব দিল্লিকে ছাড়ত। এর ফলে বিমানগুলি একটানা একটি এটিসি-র অধীনে থাকার সুবিধা পেত না। ফলে বার বার তাদের উচ্চতা বদলাতে হত। তাতে জ্বালানি বেশি পুড়ত, সময়ও লাগত বেশি। কলকাতা বিমানবন্দরের এক কর্তা বলেন, “নতুন ব্যবস্থায় জ্বালানি কম পুড়লে দূষণও কম হবে। কলকাতা থেকে দিল্লির সরাসরি রুট ব্যবহার করা যাবে। এত দিন তো বিমান পাঠাতে হত বারাণসীর রুটে।”

বিমান-বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, সব বিমানই একটি কাঙ্ক্ষিত উচ্চতা চায়। কতটা উঁচু দিয়ে উড়লে সব চেয়ে কম জ্বালানি খরচ হবে, সেটা নির্ভর করে বিমানের ওজন, হাওয়ার গতিবেগ-সহ কয়েকটি বিষয়ের উপরে। কোনও বিমানের ক্ষেত্রে সেটা ৩৫ হাজার ফুট তো কারও ক্ষেত্রে ৩২ হাজার ফুট। ওড়ার সময় মাটিতে এটিসি-র সঙ্গে প্রতি মুহূর্তে যোগাযোগ রাখতে হয় পাইলটকে। বেশি ক্ষণ এক এটিসি-র অধীনে থাকতে পারলে তারা পাইলটকে কাঙ্ক্ষিত উচ্চতায় একটানা দীর্ঘ ক্ষণ ওড়ার অনুমতি দিতে পারে। কারণ, এটিসি তাদের আকাশসীমায় থাকা অন্য বিমানের অবস্থান মাটিতে থাকা মনিটরে দেখতে পায়।

Advertisement

এক এটিসি-র আকাশ পেরিয়ে গেলে পরের এটিসি-র নিয়ন্ত্রণে আসে বিমান। কিন্তু পরবর্তী এটিসি-র আওতায় কোন বিমান কত উচ্চতায় আছে, সেটা বিমানের পক্ষে জানা সম্ভব নয়। এত ক্ষণ সে যে-উচ্চতায় উড়ছিল, এটিসি বদলের পরেও সেই উচ্চতাই বজায় থাকবে, এমন কোনও কথা নেই। আর তা বজায় না-থাকলে বিমানকে উঠে যেতে হয় অন্য উচ্চতায় অথবা নেমে আসতে হয় নীচে। ফলে বেশি জ্বালানি পোড়ে।

কলকাতা বিমানবন্দর সূত্রের খবর, তাদের অধীনে ছিল পশ্চিম, পূর্ব, উত্তর আকাশ। ছিল দক্ষিণের সামুদ্রিক আকাশও। ২০১৫-র পরে ‘আপার এয়ার স্পেস হারমোনাইজ়েশন’ প্রকল্পে কলকাতা থেকে এক-এক করে নিয়ন্ত্রিত হতে শুরু করে গুয়াহাটি, রায়পুর ও ভুবনেশ্বরের আকাশ দিয়ে উড়ে যাওয়া বিমানও। সেই সব বিমান ভারতে ঢোকে মূলত বাংলাদেশ বা মায়ানমারের দিক থেকে। ভারতের সীমায় ঢুকলেই তার নিয়ন্ত্রণ নেয় কলকাতা। দিল্লির পথে তাকে তুলে দেওয়া হয় বারাণসীর হাতে। মুম্বইয়ের পথে যাওয়া বিমানের ভার পায় নাগপুর। আবার পশ্চিম থেকে যে-সব বিমান পূর্বে উড়ে আসে, সেগুলির ক্ষেত্রে একই ভাবে বারাণসী ও নাগপুর এটিসি-র থেকে তার নিয়ন্ত্রণ পায় কলকাতা। তারা সেই ভার দেয় বাংলাদেশ বা মায়ানমারের হাতে।

কলকাতা বিমানবন্দরের এক কর্তা জানান, ২৫ অক্টোবর থেকে চলছে পরীক্ষামূলক নিয়ন্ত্রণ। ১ নভেম্বর কলকাতার এটিসি অফিসারদের প্রশিক্ষণ শুরু হয়েছে। বারাণসী থেকে সেখানকার আকাশ সম্পর্কে অভিজ্ঞ তিন অফিসার কলকাতায় এসে সেই প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন। আপাতত সকালে দু’ঘণ্টা আর সন্ধ্যায় দু’ঘণ্টা বারাণসীর আকাশ নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে কলকাতা থেকে। ওই কর্তা বলেন, ‘‘বাকি সময়ে বিমানের নিয়ন্ত্রণ চলছে বারাণসী থেকেই। প্রশিক্ষণ শেষে বারাণসীর ২৪ ঘণ্টারই নিয়ন্ত্রণ পাবে কলকাতা।” ওই কর্তা মনে করিয়ে দিয়েছেন, শুধু ২৫ হাজার ফুট বা তার উপরে থাকা বিমানের ক্ষেত্রেই এটি প্রযোজ্য। তার নীচে থাকা বিমানের নিয়ন্ত্রণ থাকবে বারাণসীর এটিসি-র হাতেই।

বিমানবন্দর সূত্রে জানা গিয়েছে, নাগপুরের আকাশসীমা কলকাতার হাতে চলে এলেও মুম্বইয়ের পথে নাগপুরের আকাশসীমার ভার এখনও পায়নি তারা। এক কর্তা জানান, সেই দায়িত্ব কলকাতার বদলে যেতে পারে মুম্বইয়ের হাতেও। সে-ক্ষেত্রেও সুবিধা হবে। কলকাতা ছাড়লে সরাসরি বিমানের নিয়ন্ত্রণ নেবে মুম্বই-ই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন