রামভক্তদের ভিড়ে মহড়া মোদীভক্তির

এ নামেই কানায় কানায় ভরা রামলীলা ময়দানের জনতাকে মঞ্চ থেকে লাগাতর ডাকা হচ্ছে। পুলিশের হিসেবে, যা লক্ষাধিক। 

Advertisement

দিগন্ত বন্দ্যোপাধ্যায়

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১০ ডিসেম্বর ২০১৮ ০২:২১
Share:

এক লাফে: নয়াদিল্লিতে আরএসএসের ধর্মসভায়। রবিবার। ছবি: রয়টার্স।

ভিড়ের একটাই নাম। সবাই ‘রামভক্ত’।

Advertisement

এ নামেই কানায় কানায় ভরা রামলীলা ময়দানের জনতাকে মঞ্চ থেকে লাগাতর ডাকা হচ্ছে। পুলিশের হিসেবে, যা লক্ষাধিক।

মঞ্চে সন্ত, বিশ্ব হিন্দু পরিষদ আর আরএসএসের নেতারা। দর্শক আসনে বিজেপির সাংসদেরা। মঞ্চ সাজানোই হয়েছিল তিনটি বিষয়ে জোর দিতে। অযোধ্যায় রামমন্দির নির্মাণে বাধা রাহুল গাঁধী আর সুপ্রিম কোর্ট। দুই, জাতি নির্বিশেষে সব হিন্দুকে একজোট হতে হবে। তিন, মন্দির বানাতে ফের নরেন্দ্র মোদীকেই জেতাতে হবে।

Advertisement

রামমন্দির নিয়ে সন্তদের আন্দোলনের অধুনা পুরোধা রামানন্দচার্য হংসদেবাচার্য মহারাজ বললেন, ‘‘প্রতিজ্ঞা করুন, যত দিন নরেন্দ্র মোদী মন্দির না-বানাচ্ছেন, তাঁকে প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে সরতে দেব না। গদি থেকে নামাতেও দেব না!’’ তাল কাটলেন এক প্রবীণ সাধু পরমানন্দ মহারাজ, বাবরি মসজিদ ধ্বংসেও যিনি ‘সাক্ষী’ ছিলেন। বললেন, ‘‘এ কেমন কথা? তা হলে তো কুর্সিতে জমিয়ে বসে থাকার জন্য মন্দির নির্মাণে আরও দেরি করবেন মোদী। মন্দির এখনই না তৈরি করলে কুর্সিতেও থাকতে দেব না! আমি চামচা নই, সাদামাঠা কথা বলি।’’

আরএসএসের ‘নম্বর টু’ ভাইয়াজি জোশীও ঠারে ঠারে মোদীকে একহাত নিয়ে বলেন, ‘‘ভিক্ষে চাইছি না, জনতার প্রত্যাশার কথা বলছি। আজ যাঁরা ক্ষমতায়, তাঁরাও মন্দিরের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। তাঁদেরও উচিত মানুষের প্রত্যাশা অনুযায়ী আইন এনে অযোধ্যায় রামমন্দির নির্মাণ করা।’’

অমিত শাহ আগেই বলেছেন, জানুয়ারিতে সুপ্রিম কোর্টের অবস্থান না-দেখে সরকার এগোবে না। সরকারের শীর্ষ মন্ত্রীরাও ইঙ্গিত দিয়েছেন, পরশু থেকে শুরু হওয়া সংসদের অধিবেশনে অধ্যাদেশ আনার প্রশ্ন নেই। এমনকি আইনও এখন আসছে না। আর বিশ্ব হিন্দু পরিষদের নেতারা সেটিকেই চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে ঘোষণা করেছিলেন, এক বার দিল্লিতে ‘বিশাল ধর্মসভা’ হোক, তাতেই টনক নড়বে সরকারের। অমিত শাহকেও কৌশল বদলাতে হবে।

তবে আজ রামলীলায় দিল্লি ও পাশের রাজ্য থেকে আনা ভিড় বেশ তেতে ছিল। রামলীলা মন্দিরের দরজা ভেঙ্গেও তাণ্ডব হল ‘জয় শ্রীরাম’ বলে। কিন্তু হংসদেবাচার্য, স্বাধ্বী ঋতম্ভরা ছাড়া আর কারও বক্তব্য তেমন দাগ কাটতে পারল না। ফ্যাকাসেই রইল ধর্মসভা। বিরোধী শিবিরের নেতাদের বক্তব্য, সাধুদের এক পক্ষ ‘রামভক্ত’-এর থেকেও নিজেদের ‘মোদীভক্ত’ প্রমাণ করতে রাহুল গাঁধী আর সুপ্রিম কোর্টকে বিঁধলেন। আর এক পক্ষ উল্টে মোদীকেই কাঠগড়ায় দাঁড় করালেন।

তা হলে হবে কী?

রামলীলায় উপস্থিত এক বিজেপি সাংসদ বললেন, ‘‘অমিত শাহই বলেছেন, উন্নয়ন আর রামমন্দির— দুটো বিষয় নিয়ে ভোটে যেতে দলের আপত্তি নেই। লোকসভা ভোটের এখনও ছয় মাস বাকি। তার আগেই অধ্যাদেশ এনে নরেন্দ্র মোদী দেখাবেন, প্রকৃত হিন্দুহৃদয়সম্রাট তিনিই। রাহুল গাঁধী তো নব্য হিন্দু!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন