মোদী-রাজ্যেও পরপর শিশুমৃত্যু, চাপে রূপাণী

এতগুলি শিশুর মৃত্যুর পিছনে প্রত্যন্ত হাসপাতালগুলির ‘রেফার’ রোগ ও দেওয়ালির ছুটির শেষে অনেক চিকিৎসকের কাজে না ফেরার কথাই উঠে এসেছে প্রাথমিক ভাবে। স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্নের মুখে রাজ্যের চিকিৎসা ব্যবস্থা তথা স্বাস্থ্য পরিকাঠামো।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

অমদাবাদ শেষ আপডেট: ৩০ অক্টোবর ২০১৭ ০৩:২৯
Share:

উত্তরপ্রদেশ-সহ বিজেপি-শাসিত অন্য রাজ্যগুলির পরে এ বার গুজরাত। ২৪ ঘণ্টায় ৯টি সদ্যোজাতের মৃত্যু হলো অমদাবাদের সরকারি হাসপাতালে। এই হাসপাতালেরই এক অফিসার আজ জানিয়েছেন, গত ৩ দিনে তাঁদের এখানে মোট ১৮টি শিশুর মৃত্যু হয়েছে।

Advertisement

এতগুলি শিশুর মৃত্যুর পিছনে প্রত্যন্ত হাসপাতালগুলির ‘রেফার’ রোগ ও দেওয়ালির ছুটির শেষে অনেক চিকিৎসকের কাজে না ফেরার কথাই উঠে এসেছে প্রাথমিক ভাবে। স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্নের মুখে রাজ্যের চিকিৎসা ব্যবস্থা তথা স্বাস্থ্য পরিকাঠামো। ভোটের দোরগোড়ায় এসে যা কিনা রাজ্যের বিজেপি সরকারের কাছে বেশ অস্বস্তিকর।

পরপর শিশুর মৃত্যুর খবরে নড়ে বসতে হয়েছে খোদ মুখ্যমন্ত্রী বিজয় রূপাণীকেও। তড়িঘড়ি তিনি আজ গাঁধীনগরে স্বাস্থ্যকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকও করেছেন এ নিয়ে। কী পরিস্থিতিতে ও কেন এতগুলি শিশু মারা গেল, তা জানতে তদন্তেরও নির্দেশ দিয়েছে গুজরাত সরকার।

Advertisement

সরকারি বিবৃতিতেই আজ জানানো হয়েছে, ২৪ ঘণ্টায় যে ন’জন নবজাতক মারা গিয়েছে, তাদের পাঁচ জনকেই দূরের হাসপাতাল থেকে ‘রেফার’ করে পাঠানো হয়েছিল অমদাবাদের হাসপাতালটিতে। ভর্তির পরেই ওই শিশুদের পরীক্ষা করে দেখা গিয়েছে, প্রত্যেকেই অতিরিক্ত কম ওজনজনিত সমস্যায় ভুগছিল।

শুধু তা-ই নয়, জন্মের পরে প্রাণঘাতী রোগেও আক্রান্ত হয়েছিল ওই পাঁচ শিশু। সব মিলিয়ে তাদের অবস্থা ছিল আশঙ্কাজনক। আর বাকি চারটি শিশু ওই হাসপাতালেই জন্মেছিল। তবে জন্মের পরই নানা রকম গুরুতর সমস্যা দেখা গিয়েছিল তাদের মধ্যে। যার জেরে মৃত্যু হয় ওই চার জনেরও।

তবে সরকারের দেওয়ার এই বিবৃতির জেরেই প্রশ্ন উঠেছে, গুরুতর অসুস্থ জেনেও সদ্যোজাতদের কেন লুনাওয়াড়া, সুরেন্দ্রনগর, মনসা, বিরামগাম ও হিম্মতনগরের মতো দূরের হাসপাতাল থেকে অমদাবাদে ‘রেফার’ করা হচ্ছে?

জবাব দিতে গিয়ে দেওয়ালির প্রসঙ্গ টেনেছেন রাজ্যের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ দফতরের প্রধান সচিব জয়ন্তী রবি। তাঁর বক্তব্য, সম্ভবত দূর-দূরান্তের ওই হাসপাতালগুলির চিকিৎসকেরা অনেকেই এখনও দেওয়ালির ছুটি কাটিয়ে কাজে ফিরতে পারেননি। এই অবস্থায় ওই সব হাসপাতালে জন্মের পরেই কয়েকটি শিশুর অবস্থা এতটাই খারাপ হচ্ছিল এবং পরিস্থিতিও এতটাই জটিল হয়ে পড়ছিল যে, তাদের অমদাবাদে রেফার করে দিতে হয়েছে। তদন্তে সব দিকই খতিয়ে দেখা হবে।

এর আগে উত্তরপ্রদেশের গোরক্ষপুরের বিআরডি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে অক্সিজেনের জোগান বন্ধের ফলে ও অন্যান্য রোগে একের পর এক শিশুমৃত্যুর ঘটনায় অস্বস্তিতে পড়েছিল যোগী আদিত্যনাথ সরকার। গত সেপ্টেম্বরের গোড়ায় এক হিসেবে দেখা যাচ্ছে, শুধু গোরক্ষপুরেই সাড়ে তিনশোর বেশি, উত্তরপ্রদেশেরই ফারুকাবাদে ৪৯টি শিশু মারা গিয়েছে অল্প দিনের ব্যবধানে।

চলতি বছরে রাজস্থানের বাঁশওয়ারায় ২৩৬টি শিশু, ঝাড়খণ্ডে এক মাসের মধ্যে ১৩৩টি শিশু মারা গিয়েছে। কংগ্রেস সে সময়েই বিজেপি-শাসিত রাজ্যগুলিতে শিশুমৃত্যু নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর জবাবদিহি দাবি করেছিল। শিশুমৃত্যুর তালিকায় এ বার খোদ মোদীর নিজের রাজ্যও। তা-ও ভোট যখন শিয়রে!

এই অবস্থায় বিতর্ক যাতে না বাড়ে, তার জন্য রূপাণী সরকার চিকিৎসা শিক্ষার ডেপুটি ডিরেক্টর আর কে দীক্ষিতের নেতৃত্বে তড়িঘড়ি একটি কমিটি গড়েছে। জানানো হয়েছে, ঠিক কী কারণে এবং কোন পরিস্থিতিতে সদ্যোজাতদের মৃত্যু হয়েছে, তা তদন্ত করে দেখবে এই কমিটি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন