শেফ বিকাশ খন্না
বাণিজ্য নগরীর অভিজাত হোটেলের রান্নাঘরে শেফদের প্রশিক্ষণ চলছিল। সময়টা ১৯৯২-এর ডিসেম্বর। ভয়াল দাঙ্গা গোটা মুম্বইয়ে। শহর জ্বলছে। কার্ফু। হোটেলেই আটকে পড়েছিলেন সবাই।
তার পর কেটে গিয়েছে ২৬ বছর।
তবু ১৯৯২ সালের দাঙ্গা-বিধ্বস্ত মুম্বইয়ের স্মৃতি এখনও দগদগে নিউ ইয়র্ক নিবাসী সেলিব্রিটি শেফ বিকাশ খন্নার মনে। সেই সময়ে হিংসা থেকে তাঁকে বাঁচিয়ে ছিলেন মুম্বইয়ের ঘাটকোপারের এক মুসলিম পরিবার। দু’দশকেরও বেশি সময় পেরিয়েও দাঙ্গার ভয়াবহতা ভোলার নয়। তার সঙ্গেই বিকাশের মনের কোণে সারা জীবনের মতো জায়গা করে নিয়েছে সেই পরিবার। তাদের জন্য গত ২৬ বছর ধরে রমজান মাসে একটা দিন না খেয়ে থাকেন বিকাশ। প্রার্থনাও করেন। নিউ ইয়র্ক পাড়ি দিলেও হন্যে হয়ে খুঁজে বেড়িয়েছেন তাঁদের।
এত বছর পার করে গত মঙ্গলবার তাঁদের সঙ্গে ফের দেখা হয়েছে বিকাশের। তার আগের দিনই জানিয়েছিলেন, সেই পরিবারকে খুঁজে বার করতে পেরেছেন। তাঁদের সঙ্গে বসে এ বারের উপোস ভাঙতে চান। আর দেখা করার পরে রাতে তাঁর টুইট, ‘‘মন ছুঁয়ে যাওয়া একটা সন্ধ্যা। হৃদয়ের কাছাকাছি। অশ্রুময়। ব্যথাতুর। গর্বের। সাহসের। মানবিকতার। কৃতজ্ঞতার।’’ এই পরিবারটিকে খুঁজে বার করতে যাঁরা তাঁকে সাহায্য করেছেন, তাঁদেরও ধন্যবাদ দেন বিকাশ। লিখেছেন, ‘‘আমার আত্মার সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দেওয়ায় ধন্যবাদ।’’
তিন বছর আগে ফেসবুকে এক পোস্টে মুম্বইয়ের সেই দিনগুলোর কথা লিখেছিলেন শেফ। পরে টিভি সাক্ষাৎকারে তিনি জানান, দাঙ্গার মধ্যে হঠাৎ গুজব ছড়ালো ঘাটকোপারে পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে গিয়েছে। অথচ ওখানেই থাকেন বিকাশের ভাই। বেরোলে কী হবে, সে সব না ভেবেই ছুটে যান সেখানে। যাওয়ার পথে তাঁকে বাধা দেন ইকবাল খান এবং ওয়াসিম ভাই। ইকবাল ছিলেন বিকাশের মতোই শিক্ষানবীশ শেফ। আর ওয়াসিম ছিলেন ওয়েটার। তাঁদের পরিবারই আশ্রয় দেয় নিজেদের ঘরে। সেই পরিবারের সকলকে সে ভাবে চিনতেনও না বিকাশ।
ওই বাড়িতে কিছু ক্ষণের মধ্যে চড়াও হয় উন্মত্ত জনতা। বিকাশের পরিচয় জানতে চায় তারা। পরিবারটি জানায়, সে তাদেরই ঘরের ছেলে। শুনে ক্ষান্ত দেয় জনতা। তার পরে আরও দু’দিন ওই বাড়িতেই ছিলেন বিকাশ। তাঁর কথায়, ‘‘ওই সময়ে আমি নিজে ঠিক কোথায় আছি, জানতাম
না। ওঁদেরও চিনতাম না।’’ অথচ সেই পরিবারের লোকই তাঁর ভাইকে খুঁজে বার করতে সাহায্য করেছিল। ভাগ্যক্রমে ভাই নিরাপদে ছিলেন।
সময়ের গতিপথে ওয়াসিম-ইকবালদের সঙ্গে যোগাযোগ একেবারে ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল। এ বার পুনর্মিলনের গল্প জেনে সোশ্যাল মিডিয়ায় অভিভূত অনেকেই। কেউ লিখেছেন, ‘‘আপনি ভাগ্যবান। আপনার জীবন অসাধারণ।’’ আর কারও কথায়, ‘‘এটাই আসল ভারত।’’