বড়া পাও বিক্রেতা থেকে বিধায়ক বাম নেতা

এ বারের বিধানসভা নির্বাচনে ৭২ হাজার ভোট পেয়েছেন ৪৩ বছরের বিনোদ। ২০৮৮ জন বিধায়কের মধ্যে তাঁর সম্পত্তিই সবচেয়ে কম।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

মুম্বই শেষ আপডেট: ০৩ নভেম্বর ২০১৯ ০২:০৬
Share:

বিনোদ নিকোলে

যে বিজেপি বিধায়ককে তিনি সদ্য চার হাজার ভোটে হারিয়েছেন, তাঁর ঘোষিত সম্পত্তির পরিমাণই কয়েক কোটি। কিন্তু তিনি আর তাঁর স্ত্রী মিলে মাসে রোজগার করেন হাজার দশেক। আর্থিক সামর্থ্য ছিল না বলে কলেজের পড়া ছেড়ে এক সময়ে বড়া পাওয়ের দোকান দিয়েছিলেন। মহারাষ্ট্রের দহানু কেন্দ্র থেকে জয়ী বিনোদ নিকোলে আর ক’দিন পরেই পা রাখতে চলেছেন বিধানসভায়। গোটা রাজ্যের একমাত্র সিপিএম বিধায়ক সাংবাদিকদের জানালেন, তাঁর কেন্দ্রের ‘হেভিওয়েট’ বিজেপি প্রার্থীকে হারানোর মূল মন্ত্রই হল মানুষের সঙ্গে তাঁর নিবিড় যোগাযোগ।

Advertisement

পালঘড় জেলার ছ’টি বিধানসভা আসনের অন্যতম দহানু তফসিলি জনজাতির জন্য সংরক্ষিত। কেন্দ্রটি মহারাষ্ট্রের পিছিয়ে পড়া এলাকাগুলির মধ্যেও অন্যতম। স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলির বক্তব্য, গত দু’বছরে কম করে সেখানে ৮০০টি সদ্যোজাতের মৃত্যু হয়েছে অপুষ্টিতে। যদিও রাজ্যের বিজেপি সরকার কখনও সে কথা স্বীকার করেনি। তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী পাস্কল ধানারে এত দিন ধরে ক্ষমতায় থাকলেও মানুষের কাছে যাননি বলে অভিযোগ বিনোদেরও। তাঁর কথায়, ‘‘আমার এলাকায় একটা ভাল স্বাস্থ্যকেন্দ্র পর্যন্ত নেই। যেটা আছে তাতে ন্যূনতম সুযোগ-সুবিধেগুলো পাওয়া যায় না। এক জায়গা থেকে আর এক জায়গায় রোগীকে রেফার করতে গিয়েই চোখের সামনে কত অন্তঃসত্ত্বা আর তাঁদের শিশুদের মরতে দেখেছি, তার হিসেব নেই। অথচ আমাদের বিধায়ক এত দিন কোনও অসুবিধের কথা বিধানসভায় তোলেনইনি। মানুষ কেমন আছেন, তিনি জানতেন না। ভোটে টাকা ঢেলেছেন প্রচুর। কিন্তু দহানুর গ্রাম্য মানুষ চান, পরিষেবা। তাঁরা জানেন, আমি এসেছি মানে তাঁদের কথা এ বার বিধানসভায় তুলে ধরব।’’

এ বারের বিধানসভা নির্বাচনে ৭২ হাজার ভোট পেয়েছেন ৪৩ বছরের বিনোদ। ২০৮৮ জন বিধায়কের মধ্যে তাঁর সম্পত্তিই সবচেয়ে কম। বললেন, ‘‘এখনকার প্রজন্ম জানে, আমার বয়স অল্প। আমি ওদের হয়ে লড়তে পারব। ভোটের আগে জলের মতো টাকা অপচয় করেছেন বিরোধী প্রার্থী। কিন্তু নতুন প্রজন্ম আস্থা রেখেছে আমার উপরে।’’

Advertisement

আরও পড়ুন: কর্নাটকে বিধায়ক ভাঙানোর কলকাঠি অমিতেরই! ফাঁস ইয়েদুরাপ্পার অডিয়ো রেকর্ড

প্রবীণ কমিউনিস্ট নেতা এলবি ধাঙ্গাড়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ তাঁর জীবন পাল্টে দিয়েছে বলে দাবি করেছেন বিনোদ। জানালেন, পড়ার খরচ চালাতে না পারার জন্য এক খুড়তুতো ভাইয়ের সঙ্গে দহানু শহরে চা আর বড়া পাওয়ের দোকান দিয়েছিলেন। এক দিন সেখানেই চা খেতে এসে ধাঙ্গাড় তাঁকে কমিউনিস্ট আদর্শের কথা শোনান। বিনোদ প্রথমে সক্রিয় রাজনীতিতে আসতে নারাজ ছিলেন। কিন্তু পরে তাঁকে পার্টি সদস্য করেন প্রবীণ নেতা। সেই শুরু। তার পর টানা ১৫ বছর রাজনীতি করেছেন বিনোদ। মানুষের বাড়ি বাড়ি ঘুরেছেন, তাঁদের সুখ-দুঃখের ভাগীদার হয়েছেন। বললেন, ‘‘১০ টাকা দিয়ে পার্টি সদস্য হই। পার্টি আমায় তখন মাসে ৫০০ টাকা করে দিত। এখন সেটাই পাঁচ হাজারে দাঁড়িয়েছে। আমার স্ত্রী একটি প্রাথমিক স্কুলে পড়ান। ওই রকমই মাইনে পান। আমাদের চলে যায় তাতেই। এত দিন ব্যাঙ্কে অ্যাকাউন্ট খোলার কথা তাই মনে হয়নি। দল যখন আমায় প্রার্থী করার কথা ভাবল, তখন অ্যাকাউন্ট খুলতেই হল।’’ হেসে ফেলেন বিনোদ।

গত বছর মহারাষ্ট্রের কৃষকদের আন্দোলন ‘কিসান লং মার্চ’ গোটা দেশের নজর কেড়েছিল। আপনিও কি তাতে শামিল ছিলেন? বিনোদ জানান, টানা ২০০ কিলোমিটার পথ কৃষকদের সঙ্গে হেঁটেছিলেন তিনি। বললেন, ‘‘অশোক ধাওয়ালে, জিভা গাভিটদের মতো নেতারা গোটা মিছিলে হেঁটেছেন। তাঁদের সঙ্গে আমিও। আমরা সেই নেতা নই যে, নিজেরা গাড়িতে চেপে কৃষকদের বলব তোমরা মিছিলে হাঁটো। আমরা পরে আসছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন