ভি কে সিংহ। ফাইল ছবি।
জানুয়ারি মাসের ঘটনা। পাহাড় পেরিয়ে নিজের ঘোড়াটাকে নিয়ে মাইল খানেক দূরের একটা ঝিলে গিয়েছিল আট বছরের আসিফা। আর খোঁজ মেলেনি। এক সপ্তাহ পরে তার গ্রাম থেকে বেশ কিছুটা দূরে আসিফার দেহ মেলে।
এ ঘটনা নিয়ে এত দিন বিক্ষোভের আঁচ সে ভাবে গোটা দেশে পৌঁছয়নি। বৃহস্পতিবার বিদেশ প্রতিমন্ত্রী ভি কে সিংহ টুইট করেন, ‘‘আসিফাকে রক্ষা করতে ব্যর্থ হলাম। কিন্তু বিচার ওকে পাইয়ে দিতেই হবে।’’ বিজেপি সরকারের পক্ষ থেকে এই প্রথম কেউ আসিফা-কাণ্ডে মুখ খুললেন। বরং ঘটনায় অভিযুক্তদের পক্ষ নিয়ে সরব হতে দেখা গিয়েছে বিজেপির সমর্থনপ্রাপ্ত ‘হিন্দু একতা মঞ্চ’কে। গত মাসেই আর এক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জিতেন্দ্র সিংহ (তিনি আবার সংসদে কাঠুয়ারই প্রতিনিধি) ধর্ষণে অভিযুক্তের পাশে দাঁড়িয়ে বলেছিলেন, ‘‘যারা অপরাধ করেনি, তাদের বিচার মেলা উচিত।’’
এ দিন ভি কে সিংহের পরপরই টুইট করেন কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গাঁধী। লিখেছেন— ‘এক জন অপরাধীকে কী ভাবে কেউ আড়াল করতে পারে? একটি শিশুর সঙ্গে যে নৃশংস অপরাধ হয়েছে, তার মধ্যেও যদি আমরা রাজনীতি টেনে আনি, তা হলে আমাদের কী অবস্থা ভাবুন!’ জম্মু-কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি আশ্বাস দিয়েছেন, ফাস্ট ট্র্যাক কোর্টে বিচার হচ্ছে। সুবিচার হবেই।
আরও পড়ুন: ব্যারিকেড ভেঙে মিছিল রাহুলের, সঙ্গী মা ও বোন
তদন্তে জানা গিয়েছে, স্থানীয় একটি মন্দিরে বেশ কয়েক দিন ধরে লুকিয়ে রাখা হয়েছিল আসিফাকে। ঘুমের ওষুধ দিয়ে আচ্ছন্ন করে রাখা হয়েছিল। চার্জশিটে লেখা হয়েছে, ‘দিনের পর দিন ধরে ধর্ষণ করা হয় আসিফাকে। অত্যাচার করা হয়। আর শেষে খুন করা হয়।’ শ্বাসরোধ করে খুন করা হয়েছিল আসিফাকে। মাথায় পাথর দিয়ে দু’বার আঘাতের চিহ্নও মিলেছিল ময়নাতদন্তে। চার্জশিটে বলা হয়েছে— সুরেন্দ্র বর্মা, আনন্দ দত্ত, তিলক রাজ ও খাজুরিয়া নামে চার পুলিশ অফিসারকে নিয়ে গোটা ষড়যন্ত্রটি করেছিল সঞ্জি রাম নামে এক ব্যক্তি। তদন্তে জানা গিয়েছে, খাজুরিয়া-সহ ওই পুলিশ অফিসাররাই আসিফার পরিবারকে নিয়ে তার দেহ খুঁজতে বেরিয়েছিল। এমনকি আসিফার মা-বাবা যখন থানায় অভিযোগ জানাতে এসেছিল, এদেরই কেউ এফআইআর দায়ের করে। প্রমাণ লোপাট করতে আসিফার রক্ত আর কাদামাখা জামা ধুয়ে তার পর ময়নাতদন্তে পাঠিয়েছিল এরাই।
জম্মু-কাশ্মীরের ভবঘুরে বকারওয়াল সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত আসিফার পরিবার। এঁরা মূলত মেষপালকের কাজ করে দিন গুজরান করেন। বিক্ষুব্ধদের একাংশের দাবি, সংখ্যালঘু এই সম্প্রদায়কে উপত্যকা-ছাড়া করতেই এমন নৃশংস কাজ করা হয়েছিল। কাঠুয়া-কাণ্ডে বিজেপি-যোগ নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। সম্প্রতি অভিযুক্তদের সমর্থনে মিছিল বেরোয়। তাতে মেহবুবার মন্ত্রিসভার দুই বিজেপি সদস্যকেও দেখা গিয়েছিল। মেহবুবা মুফতি অবশ্য বকারওয়াল সম্প্রদায়ের দাবি মেনে সিবিআইয়ের হাতে তদন্তভার তুলে দিয়েছেন।