Natioanl News

২০০১-এর সংসদ হামলাতেও কি জড়িত দেবেন্দ্র?

ঘটনা হল, ২০০১ সালে সংসদ হামলায় নাম উঠে এসেছিল দেবেন্দ্র সিংহের।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৪ জানুয়ারি ২০২০ ০৪:০৩
Share:

দেবেন্দ্র সিংহ।

জঙ্গিদের সঙ্গে একই গাড়িতে উপস্থিত জম্মু-কাশ্মীর পুলিশের ডিএসপি দেবেন্দ্র সিংহের গ্রেফতারি উস্কে দিল একাধিক নতুন বিতর্ক। প্রশ্ন উঠেছে, তা হলে কি সংসদ হামলাতেও ভূমিকা ছিল ওই পুলিশ অফিসারের? অতীতে যে যোগসাজশের অভিযোগ তুলেছিল সংসদ হামলার অন্যতম দোষী আফজল গুরু। স্থানীয় পুলিশ থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক, সকলেরই মুখে কুলুপ এ নিয়ে। তাদের মতে, তদন্ত চলছে। তাতেই সব স্পষ্ট হবে।

Advertisement

ঘটনা হল, ২০০১ সালে সংসদ হামলায় নাম উঠে এসেছিল ওই পুলিশ অফিসারের। যে অভিযোগ করেছিল অন্যতম দোষী আফজল গুরু। ২০১৩ সালে একটি চিঠিতে আফজল অভিযোগ করে, দিল্লিতে মহম্মদ নামে এক কাশ্মীরির থাকার ব্যবস্থা ও একটি গাড়ি জোগাড়ের নির্দেশ দিয়েছিল দেবেন্দ্র। যে গাড়ি পরে সংসদ হামলায় ব্যবহৃত হয়েছিল। এবং মহম্মদ ছিল হামলাকারীদের দলে। আফজল একাধিক বার দেবেন্দ্রের নাম নিলেও, ফাঁসির আসামির বক্তব্যকে বিশেষ গুরুত্ব দেননি তদন্তকারীরা। কিন্তু গত শনিবার তিন জঙ্গির সঙ্গে দেবেন্দ্রর উপস্থিতি আফজলের অভিযোগকে তাজা করে তুলেছে। প্রশ্ন উঠেছে, তা হলে কি বাজপেয়ী সরকারের আমলে হওয়া সংসদ হামলার পিছনে ওই পুলিশ অফিসারের প্রত্যক্ষ মদত ছিল? দেবেন্দ্র কি নিজেই ওই কাজ করেছিলেন? নাকি তিনি কারও নির্দেশ পালন করেছিলেন? যদি নির্দেশ পালন করে থাকেন, তা হলে সেই নির্দেশ দিয়েছিল কে? পাকিস্তানি গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই? নাকি অন্য কেউ?

একটি সূত্রের বক্তব্য, দেবেন্দ্র ধরা পড়লে তাঁর সঙ্গে আফজল গুরুর সম্পর্কের বিষয়টি সামনে আসবে সেটাই স্বাভাবিক। হয়েছেও তাই। তাই প্রশ্ন, কেন এই সময়ে হঠাৎ করে সেই পুরনো অস্বস্তি সামনে আনতে চাইছে বর্তমান সরকার। যেখানে চাইলে দেবেন্দ্রের গ্রেফতারির বিষয়টি লুকিয়ে যেতে পারত সরকার। কিন্তু তা না করে ঘটা করে গ্রেফতারি এ ভাবে প্রকাশ করা হল কেন? জম্মু-কাশ্মীর পুলিশের আইজি বিজয় কুমার আফজলের সঙ্গে দেবেন্দ্রের সম্পর্ক প্রশ্নে জানান, ‘‘সব দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’

Advertisement

আরও পড়ুন: সিএএ-প্রতিবাদে বিদেশি স্লোগান ‘ওকে বুমার’

সাধারণত জম্মু-কাশ্মীর পুলিশের পদস্থ অফিসার বা উপত্যকায় রয়েছেন এমন আধাসেনা বা সেনার অফিসারেরা সর্বদাই নজরদারিতে থাকেন। সেই নজরদারি এড়িয়ে কী ভাবে দেবেন্দ্র জঙ্গিদের নিয়ে যাচ্ছিলেন তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। গোয়েন্দারা প্রাথমিক তদন্তে জানতে পেরেছেন, ওই অফিসারের সঙ্গে জঙ্গিদের সুসম্পর্ক থাকার বিষয়টি নতুন নয়। অতীতেও দেবেন্দ্রের বিরুদ্ধে এ ধাঁচের অভিযোগ উঠেছে। আইজি বিজয় কুমারের মতে, ‘‘জঙ্গিদের নিরাপদে জম্মুতে পৌঁছে দেওয়ার জন্য প্রতি জঙ্গি পিছু ১২ লক্ষ টাকা নিয়েছিলেন ওই অফিসার।’’ যদিও দেবেন্দ্রের দাবি ছিল, ওই জঙ্গিদের আত্মসমর্পণ করাতে তিনি নিয়ে যাচ্ছিলেন। যা অস্বীকার করে জঙ্গিরাও। পুলিশের মতে, দেবেন্দ্র জঙ্গিদের চণ্ডীগড়ে নিরাপদ আশ্রয় জুটিয়ে দেওয়ারও আশ্বাস দিয়েছিলেন। সূত্রের খবর, সেখান থেকে জঙ্গিদের দিল্লি যাওয়ার কথা ছিল। প্রজাতন্ত্র দিবসের আগে রাজধানীতে কোনও নাশকতা করার পরিকল্পনা ছিল কি না তা খতিয়ে দেখছেন গোয়েন্দারা।

গত বছর লোকসভা নির্বাচনের আগে কাশ্মীরের পুলওয়ামাতে আধাসেনার কনভয়ে হামলা চালায় জঙ্গিরা। ঠিক ভোটের আগে ওই হামলা হওয়ায় ‘সময়’ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। আগামী মাসে দিল্লিতে নির্বাচন। প্রজাতন্ত্র দিবসের আগে হওয়া ওই গ্রেফতারি নিয়ে তাই প্রশ্ন তুলছেন আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণ। তাঁর কথায়, ‘‘রাষ্ট্রীয় পদকপ্রাপ্ত ওই অফিসার কি ২৬ জানুয়ারির আগে জঙ্গিদের নিয়ে যাচ্ছিলেন পুলওয়ামা ধাঁচের হামলা করানোর জন্য? এখন কি তাঁকে সুরক্ষা দেওয়া হবে না কি মেরে ফেলা হবে?’’

ধৃত জঙ্গিদের মধ্যে রয়েছে নাভেদ বাবা। নাভেদ জম্মু-কাশ্মীর পুলিশের প্রাক্তন কর্মী। গত অগস্টে জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা লোপের পরে ১১ জন শ্রমিক হত্যার ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছিল। তার পর থেকেই নাভেদকে পাকড়াও করতে উদ্যোগী হন গোয়েন্দারা। গত শুক্রবার নাভেদের মোবাইলে আড়ি পেতে তার জম্মু যাওয়ার কথা জানতে পারেন তাঁরা। নাভেদ, তার সঙ্গী আসিফ আহমেদকে জম্মু পৌঁছে দেওয়ার বরাত নিয়েছিলেন দেবেন্দ্র। পুলিশ জানিয়েছে, গাড়িচালকও জঙ্গি সংগঠনের কর্মী। নাভেদ-আসিফকে শোপিয়ান থেকে গাড়িতে তুলে শ্রীনগরে সেনার ১৫ নম্বর কোরের সদর দফতরের কাছেই নিজের বাড়িতে আনেন দেবেন্দ্র। জঙ্গিরা দেবেন্দ্রের গাড়িতে উঠতেই গোয়েন্দারা ছায়ার মতো পিছনে লেগে যান। শুক্রবার রাতেও দেবেন্দ্রের বাড়ির চারপাশে কর্ডন করে রাখে সাদা পোশাকের পুলিশ। পরের দিন সকালে কুলগামে দেবেন্দ্রের গাড়ি আটকায় পুলিশ। অভিযানের নেতৃত্ব দেন ডিআইজি অতুল গয়াল। দেবেন্দ্র গাড়ি থাকা তিন জঙ্গিকে পুলিশের কর্মী বলে পরিচয় দেওয়ার চেষ্টা করেন। যদিও সেই চেষ্টা ব্যর্থ হয়। গ্রেফতার হন সব আরোহীই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন