কঠিন পরীক্ষা ঠিক এক বছরের মাথায়। গত বছরের ৮ নভেম্বর ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট বাতিল করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সেই নোট বাতিলকে নিয়েই এ বারে সুপ্রিম কোর্টে পরীক্ষার মুখে পড়তে চলেছে মোদী সরকার।
নোট বাতিলের ওই সিদ্ধান্ত সাংবিধানিক ভাবে বৈধ ছিল কি না, তা খতিয়ে দেখবে শীর্ষ আদালতের পাঁচ বিচারপতির সাংবিধানিক বেঞ্চ।
বাতিল নোট জমা দেওয়ার জন্য ৩০ ডিসেম্বরের সময়সীমা বেঁধে দিয়েছিল সরকার। কিন্তু অনেকেই ওই সময়ের মধ্যে সব নোট জমা দিতে পারেননি। কেউ ছিলেন বিদেশে, কেউ আবার হাসপাতালে শয্যাশায়ী। অনেক বয়স্ক মানুষই পরে বাতিল নোট খুঁজে পেয়েছেন। কিন্তু নির্দিষ্ট সময়ের পরে রিজার্ভ ব্যাঙ্কে হত্যে দিয়েও লাভ হয়নি। ওই সব নোট জমা দেওয়ার সুযোগ চেয়ে সুপ্রিম কোর্টে ১৪টি মামলা হয়েছিল। মামলাকারীদের মধ্যে বিদেশে বসবাসকারী নাগরিকেরা যেমন রয়েছেন, তেমনই আছেন মহারাষ্ট্রের কৃষকেরাও। আবার গত বছর নভেম্বর-ডিসেম্বরের ওই সময়টায় হাসপাতালে শয্যাশায়ী ছিলেন এমন কয়েক জনও আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন।
আরও পড়ুন: গুজরাতে কংগ্রেসের মঞ্চে সভা যশবন্তের
প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্রের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ আজ জানিয়েছে, নোট বাতিলের আইন এখনও সাংবিধানিক ভাবে বৈধ। কাজেই কোনও সুরাহার বন্দোবস্ত করা সম্ভব নয়। মামলাকারীদের সাংবিধানিক বেঞ্চে আবেদন জানাতে হবে। সেই বেঞ্চই খতিয়ে দেখবে, নোট বাতিল আইন সাংবিধানিক ভাবে বৈধ কি না। একই সঙ্গে এই ১৪ জনের আর্জিও আলাদা আলাদা ভাবে খতিয়ে দেখবে সুপ্রিম কোর্ট।
নোট বাতিলের পরে কেন্দ্র আইন করেছে, কারও কাছে ১০টির বেশি বাতিল পাওয়া গেলে সেটা ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে এ বার থেকে। সুপ্রিম কোর্টে আজ কেন্দ্রের অ্যাটর্নি জেনারেল কে কে বেণুগোপাল আশ্বাস দিয়েছেন, বাতিল নোট থাকলেও আইনি পদক্ষেপ করা হবে না। কিন্তু সেই আশ্বাস শুধুই মামলাকারীদের জন্যই। এবং সুপ্রিম কোর্টে জমা আর্জিতে যে নোটের কথা উল্লেখ রয়েছে, শুধুমাত্র সেই সব নোটের ক্ষেত্রেই এই সুরক্ষা মিলবে।
মামলাকারীদের পক্ষে আইনজীবী প্রণব সচদেব বলেন, ‘‘মানুষের কঠোর পরিশ্রমের উপার্জন আটকে রয়েছে।’’ দ্রুত সাংবিধানিক বেঞ্চ গঠনের আর্জি জানিয়ে তাঁর অভিযোগ, ‘‘প্রধানমন্ত্রী কথা দিয়েছিলেন, সময়সীমা বাড়ানো হবে। আমরা তো পুরনো নোট রিজার্ভ ব্যাঙ্ককে ফেরত দিতে চাইছি। তার পরিমাণও এক লক্ষ টাকা বা ওই রকম। কোটি কোটি টাকা নয়।’’ কেন্দ্র অবশ্য সময়সীমা না বাড়ানোর বিষয়ে অনড়। সুপ্রিম কোর্টেও কেন্দ্র আগেই হলফনামা দিয়ে জানিয়েছে, আবার নোট জমা দেওয়ার সুযোগ দিলে নোট বাতিলের আসল উদ্দেশ্যটাই নষ্ট হবে।
কিছু মামলাকারীর আর্জি ছিল, তাঁরা নোট বাতিলের সাংবিধানিক বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন না। শুধু তাঁদের বাতিল নোট জমা দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হোক। বিচারপতিরা পরামর্শ দেন, এই মামলার দরখাস্তের সঙ্গেই দু’তিন পৃষ্ঠা আবেদন করুন। তা সাংবিধানিক বেঞ্চ খতিয়ে দেখবে। নিট ফল, বছরভর নোটবন্দির রাজনৈতিক বিরোধিতা ও আর্থিক ধাক্কা সামাল দিয়ে এসে ফের ওই পদক্ষেপের বৈধতা নিয়ে প্রশ্নের মুখে মোদী।