লাল কেল্লা নিয়ে ধন্দ পুলিশেই
Delhi Blast

হামলার লক্ষ্য কি ছিল আরও গুরুত্বপূর্ণ এলাকা

গত রবি ও সোমবার তল্লাশি চালিয়ে ফরিদাবাদ থেকে প্রায় ২৯০০ কেজি বিস্ফোরক উদ্ধার করে হরিয়ানা ও জম্মু-কাশ্মীর পুলিশ। সূত্রের মতে, গত কালের বিস্ফোরকস্থল থেকে যে নমুনা পাওয়া গিয়েছে, তাতে প্রাথমিক ভাবে দু’টি বিস্ফোরকের সাদৃশ্য মিলেছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১২ নভেম্বর ২০২৫ ০৮:৪৫
Share:

— ফাইল চিত্র।

গত কালের হামলায় মূল নিশানা কি লাল কেল্লাই ছিল? না কি দিল্লির সংসদ ভবন, প্রতিরক্ষা ভবন বা প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন! বা অন্য কোনও রাজ্যে হামলা চালানোর পরিকল্পনা করেই বিস্ফোরক জমা করা হচ্ছিল? লাল কেল্লা-বিস্ফোরণের চব্বিশ ঘণ্টা পরে এমন প্রশ্ন তুলছেন খোদ কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারাই।

Advertisement

গত রবি ও সোমবার তল্লাশি চালিয়ে ফরিদাবাদ থেকে প্রায় ২৯০০ কেজি বিস্ফোরক উদ্ধার করে হরিয়ানা ও জম্মু-কাশ্মীর পুলিশ। সূত্রের মতে, গত কালের বিস্ফোরকস্থল থেকে যে নমুনা পাওয়া গিয়েছে, তাতে প্রাথমিক ভাবে দু’টি বিস্ফোরকের সাদৃশ্য মিলেছে। কিন্তু গোয়েন্দাদের একাংশের মতে, সম্ভবত লাল কেল্লার সামনে বিস্ফোরণের পরিকল্পনা ছিল না উমর-উন-নবীর। ফরিদাবাদের সঙ্গীরা গ্রেফতার হওয়ার পরে, পালাতে গিয়ে অসাবধানতাবশতই গত কাল লালকেল্লার বিস্ফোরণ ঘটে যায় উমরের গাড়িতে। ফরিদাবাদথেকে বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক উদ্ধারকেও আলাদা ভাবে গুরুত্ব দিয়ে দেখছেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা। তাঁদের কথায়, ওই বিপুল পরিমাণে বিস্ফোরক উদ্ধার থেকেই মনে হচ্ছে, বড় মাপের ষড়যন্ত্র করা হয়েছিল। ফরিদাবাদে বিস্ফোরক উদ্ধার ও তার পরে ধরপাকড়ের ফলে যে আরও বড় ক্ষয়ক্ষতি থেকে রক্ষা পাওয়া গিয়েছে, ঘরোয়া ভাবে সে কথাও কেন্দ্রীয় সূত্রে জানানো হয়েছে। বিরোধীদের মতে, এত লোক মারা গেল, অথচ ব্যর্থতা স্বীকারের পরিবর্তে কৃতিত্বদাবি করে নিজের পিঠ নিজেই চাপড়াচ্ছে সরকার।

যদিও কেউ কেউ পাল্টা যুক্তি দিচ্ছেন, স্বাধীন ভারতের অন্যতম প্রতীক লাল কেল্লা। ফি বছর স্বাধীনতা দিবসে এই লাল কেল্লাতেই জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন প্রধানমন্ত্রী। স্বভাবতই লাল কেল্লার সামনে বিস্ফোরণ ঘটাতে পারলে শুধু ভারতবাসীকেই নয়, গোটা বিশ্বকে বার্তা দেওয়া সম্ভব হবে— তা ভাল করেই জানত উমর। কিন্তু গোয়েন্দাদের খটকা লাগছে একটাই বিষয়ে। তা হল, উমর যদি আত্মঘাতী জঙ্গি হয়, তা হলে তার লক্ষ্য কখনওই লাল কেল্লা হওয়া উচিত না। কারণ নিরাপত্তাবেষ্টনীর একাধিক স্তর টপকে কোনও ভাবেই লাল কেল্লার ধারে-কাছে পৌঁছনো সম্ভব ছিল না উমরের পক্ষে। তাই গোয়েন্দারা মনে করছেন, উমরের আদর্শ ‘স্পট’ হতে পারত সুভাষ মার্গের উপরে থাকা দিগম্বর জৈন বা গৌরীশঙ্কর মন্দির। বিশেষ করে সোমবার উপলক্ষে সন্ধ্যা৭টায় অসংখ্য দর্শনার্থী ভিড় জমিয়েছিলেন গৌরীশঙ্কর মন্দিরে। উমর হয়তো ব্যারিকেডের কারণে মন্দির পর্যন্ত গাড়ি নিয়ে পৌঁছতে পারত না, কিন্তু সুভাষ মার্গেমন্দিরের পরিধির মধ্যে যদি বিস্ফোরণ ঘটত, তা হলে আরও অনেক বেশি ক্ষয়ক্ষতি হত। শুধু তাই নয়, সুভাষ মার্গের উপরে জামা মসজিদ ছাড়াও রয়েছে একাধিক মন্দির, গির্জা, গুরুদ্বার। তাই সেখানে বিস্ফোরণ হলে দেশে সাম্প্রদায়িক অশান্তির সূত্রপাতও হতে পারত। সফল হতজঙ্গিদের উদ্দেশ্য।

Advertisement

তদন্তকারীদের একাংশের মতে, লাল কেল্লা যদি নিশানা না হয়, তা হলে ওই পরিমাণ বিস্ফোরক কী কারণে জমা করেছিল ফরিদাবাদ ও উত্তরপ্রদেশ থেকে ধৃত উমরের সঙ্গী আল ফালাহ্ মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসক মুজ়াম্মিল, আদিল এবং শাহিন? কোথায় হামলার লক্ষ্যছিল তাদের?

কাল যেখানে বিস্ফোরণ হয়, সেই সুভাষ মার্গ ধরে কিছুটা এগোলেই আইটিও ক্রসিং হয়ে লাটিয়েন্স দিল্লিতে ঢুকে পড়তে পারত উমর। সে ক্ষেত্রে সংসদ ভবন, রেল ভবন-সহ যাবতীয় সরকারি ভবন, এমনকি প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনের কাছে পৌঁছনোর সুযোগ ছিল তার। ফরিদাবাদের যে এলাকা থেকে মুজ়াম্মিলদের গ্রেফতার করা হয়েছে, সেখান দিয়ে বাগেশ্বর বাবা নামে পরিচিত ধীরেন্দ্র শাস্ত্রীর ‘হিন্দু একতা যাত্রা’ যাওয়ার কথা। দিল্লি থেকে বৃন্দাবন ওই যাত্রা ১৬ নভেম্বর শেষ হওয়ার কথা।

অনেকের মতে, ওই যাত্রা-র পথে একাধিক স্থানে হামলা চালাতে বিস্ফোরক জমা করা হতে পারে। যদিও ধীরেন্দ্র শাস্ত্রী এ ধরনের আলোচনাকে গুরুত্ব না-দিতেই আহ্বান জানিয়েছেন। বলেছেন, তাঁদের যাত্রাপথে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তার ব্যবস্থা রয়েছে। তাই এদের আসল নিশানা কী ছিল, সেটা জানাই এখন প্রাথমিক লক্ষ্য গোয়েন্দাদের।

গোয়েন্দাদের অনুমান, তলায় তলায় বেশ কিছু দিন ধরেই হামলার পরিকল্পনা নিচ্ছিল উমরেরা। সম্ভবত বিস্ফোরক নিয়ে যেতেই অক্টোবরের শেষ সপ্তাহে গাড়িটি কেনে উমর। ২৯ অক্টোবর একটি সিসি ক্যামেরা ফুটেজে তিন ব্যক্তির সঙ্গে ওই গাড়ির দূষণ সংক্রান্ত শংসাপত্র নিতেও দেখা যায় তাকে। উমর-সঙ্গীদের খোঁজ শুরু করেছে পুলিশ। ওই বিস্ফোরক কোথা থেকে, কতটা এসেছে, কোথায়-কোথায় গিয়েছে— তা-ও খতিয়ে দেখছেন গোয়েন্দারা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement