একটা ঢাউস ব্যাগ নিয়ে জেল থেকে বেড়িয়েই নতজানু হয়ে মাটিতে চুমু খেলেন তিনি। স্যালুট ছুঁড়ে দিলেন ইয়েরবড়া জেলের বাইরে পতপত করে উড়তে থাকা জাতীয় পতাকার দিকে। সকাল তখন ৮টা ৪৫। দুই যমজ ছেলে-মেয়ে ইকরা আর শাহরানকে নিয়ে ইয়েরবড়ার বাইরে স্বামীর জন্য অপেক্ষায় মান্যতা। হাজতবাস কাটিয়ে ৫৬ বছরের স্বামীকে বেরিয়ে আসতে দেখে তখন তাঁর চোখে জল। এই কান্না অবশ্য আনন্দের। আরতো জেলের ছোট্ট কুঠুরিতে ফিরতে হবে না সঞ্জয় দত্তকে। আর থাকবে না প্যারোলে মুক্তি নিয়ে কোনও বিতর্ক। এ বারের মুক্তি পাকাপাকি।
ইয়েরবড়া জেলে থাকার সময় কাগজের ব্যাগ বানিয়ে ৪৪০ টাকা উপার্জন করে ছিলেন মুন্না ভাই। নিজের সেই পুঁজি তুলে দিলেন মান্যতার হাতে। তাঁর কারাবাসের সময় বাইরে সব থেকে কঠিন দিনগুলো একা হাতে সামলেছেন যিনি।
সেখান থেকে এসইউভি চেপে সপরিবারে বিমানবন্দরের উদ্দেশ্যে রওনা দিলেন ৫৬ বছরের অভিনেতা। বিমানবন্দরে তাঁর জন্য অপেক্ষা করছিল চাটার্ড প্লেন। তবে সেই প্লেনে চড়ার আগে পুণে বিমানবন্দরেই সাংবাদিকদের বলে গেলেন ‘‘স্বাধীনতার পথটা মসৃণ ছিল না।’’
মুম্বইয়ে নেমেই সঞ্জয়ের প্রথম ডেস্টিনেশন সিদ্ধিবিনায়ক মন্দির। সেখান থেকে মারিন লাইনে মায়ের স্মৃতিস্তম্ভ ঘুরে পৌঁছলেন পালি হিলে তাঁর প্রাসাদে। সেই প্রাসাদ তখন মুন্না ভাইয়ের ঘরে ফেরার আনন্দে সেজেগুজে রেডি।
আজ বিকেলের দিকে বাড়িতেই সাংবাদিক সম্মেলনের আয়োজন করেছিল সঞ্জয়ের পরিবার। সেখানে তিনি বললেন ‘‘২৩ বছর ধরে এই স্বাধীনতার অপেক্ষায় ছিলাম। আমিতো জঙ্গি নই। দয়া করে আমাকে আর ’৯৩-এর বম্বে বিস্ফোরণের অপরাধী বলে ডাকবেন না।’’ জানালেন তাঁর মনে পরছে বাবা সুনীল দত্তকে। ‘‘বাবাকে আজ ভীষণ মিস করছি।’’ বললেল তিনি।
ভাল ব্যবহারের জন্য নির্ধারিত সময়ের মাস খানেক আগেই মুক্তি পেয়েছেন বলিউডের ‘খলনায়ক’। তাঁর মুক্তিতে বি-টাউনে এখন খুশির হাওয়া। বন্ধুর জন্য আজ রাতেই নিজের ফার্ম হাউসে জমকালো পার্টির আয়োজন করেছেন সলমন খান। টুইটার ভেসে যাচ্ছে উচ্ছ্বাসে, অভিনন্দনে।
তবে মুন্না ভাইয়ের ফাঁড়া কিন্তু এখনও পুরোপুরি কাটছে না। সোমবার বম্বে হাইকোর্টে তাঁর মুক্তিকে চ্যালেঞ্জ করে করা পিটিশনের শুনানি। অভিযোগ, জেলের মধ্যে দিনের পর দিন বিশেষ সুবিধা ভোগ করে এসছেন সঞ্জয়।
অবশ্য এই প্রথম নয়, সঞ্জয়ের বার বার প্যারোলে মুক্তি নিয়ে বিতর্ক কিন্তু বেশ পুরনো। তাঁকে ভিআইপি ট্রিটমেন্ট পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগে কাঠগোড়ায় তোলা হয়েছে জেল কর্তৃপক্ষকে। ২০১৩-এর মে থেকে ২০১৪ পর্যন্ত ১১৮ দিন জেলের বাইরেই কাটিয়েছেন এই অভিনেতা।
১৯৯৩ সালে মুম্বই বিস্ফোরণ মামলায় বেআইনি অস্ত্র মজুতের অপরাধে ২০০৭ সালে দোষী সব্যস্ত হল সঞ্জয় দত্ত। ১৮ মাস জেলে কাটানোর পর জামিনে মুক্তি পান তিনি। ২০১৩ সালে আদালতের নির্দেশে ফের জেলে যেতে হয় তাঁকে।
আরও পড়ুন- ৪২ মাস পর ছাড়া পেলেন সঞ্জয় দত্ত, জেলের বাইরে বিক্ষোভ